করোনাভাইরাস পরীক্ষা: অন্য হাসপাতালকে কেন অনুমতি দেয়া হচ্ছে না
বৃহস্পতিবার রাত থেকে গলা ব্যথায় ভুগছিলেন তামান্না তাসলিমা। তখন তার শরীরে কোন জ্বর ছিল না। শুক্রবার দুপুরে তার শরীরে ১০২ ডিগ্রির উপরে জ্বর আসে। প্রচণ্ড কাশি এবং বুক ব্যথায় শুক্র এবং শনিবার রাতে ঘুমাতে পারেননি তিনি।
শনিবার সকালে ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে ডাক্তার তাকে কিছু পরীক্ষা করতে দিলেন। রবিবার সকালে পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার পর মিস তাসলিমাকে আইইডিসিআর-এ যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেয়া হয়।
রবিবার দুপুর তিনটা থেকে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত একটানা আইইডিসিআর-এর হট-লাইন নম্বরে ক্রমাগত টেলিফোন করতে থাকেন মিস তাসলিমার পরিবারের সদস্যরা।
মিস তাসলিমা বলেন, "রাত সাড়ে নয়টার দিকে আইইডিসিআর-এর একজন ডাক্তার টেলিফোন ধরলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এর মধ্যে কি পেশেন্ট দেশের বাইরে গিয়েছিলেন? আমি গত দু'মাসে দেশের বাইরে যাইনি। তারপর জিজ্ঞেস করলো, পরিবারের অন্য কেউ কি দেশের বাইরে গিয়েছিল? আমার হাজব্যান্ড দুবাই থেকে ফিরেছে গত মাসের ১৮ তারিখ রাতে। কিন্তু সে তো অসুস্থ না। তখন আইইডিসিআর-এর ডাক্তার বললেন, তাহলে সমস্যা নাই। টেস্ট করতে হবে না।"
মিস তাসলিমা অভিযোগ করেন, আইইডিসিআর-এর হট-লাইনের চিকিৎসক তার কথা পুরোপুরি শেষ করারও চেষ্টা করলেন না।
মিস তাসলিমার মতো এ রকম আরো অনেকে করোনাভাইরাসের মতো উপসর্গ নিয়ে আইইডিসিআর-এর হট-লাইনে ক্রমাগত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অনেকে যোগাযোগই করতে পারছেন না।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আইইডিসিআর। অন্য কোন হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়নি।
অথচ গত জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আইইডিসিআর করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরীক্ষা করেছে মাত্র ৩৪১টি। বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, ব্যাপক মাত্রায় পরীক্ষা করা সম্ভব হলে বাংলাদেশে রোগীর সংখ্যা হয়তো আরো বাড়তে পারে।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ১ জনের মৃত্যু, আরো চার জন আক্রান্ত
করোনাভাইরাস: আইইডিসিআর-এর সঙ্গে যোগাযোগের নতুন ব্যবস্থা
করোনাভাইরাস নিয়ে চীন-আমেরিকা লড়াই
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জন্য কঠোর সতর্কবার্তা
ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আহ্বান জানিয়েছে, যাদের দেহে করোনাভাইরাসের লক্ষণ রয়েছে তাদের সবাইকে পরীক্ষা করা উচিত।
কিন্তু বাংলাদেশে কেন অন্য কোন প্রতিষ্ঠানকে পরীক্ষার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না? এ প্রশ্ন তুলেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।
আইইডিসিআর-এর পরিচালক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কিছু-কিছু ল্যাবরেটরিতে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হবে।
তবে আইইডিসিআর-এর তত্ত্বাবধানে সে পরীক্ষা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, যদি কারো দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়, তাহলে সে ব্যক্তি যাদের সংস্পর্শে গিয়েছেন তাদের সবাইকে খুঁজে বের করতে হবে। নতুবা তাদের মধ্যে যদি কেউ আক্রান্ত হয়, তাহলে তার মাধ্যমেও ভাইরাস ছড়াতে পারে।
একাজ করার জন্য দক্ষ লোকবল শুধু আইইডিসিআর-এ আছে বলে মিস ফ্লোরা উল্লেখ করেন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরীক্ষা যাতে ঢাকার বাইরেও করা যায় সেজন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
আরো পড়তে পারেন:
করোনাভাইরাসের কারণে বদলে গেল আজানের বাণী
'ফ্রান্সের লকডাউন দেখে ৭১-এর কথা মনে পড়ছে' - বললেন প্যারিসের এক বাসিন্দা
করোনাভাইরাস গাইড: আপনার প্রশ্নের উত্তর
করোনাভাইরাস আপনার শরীরে কী ঘটায়?