ইসলামাবাদে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ, ফের সেনা অভ্যুত্থানের জল্পনা
দুর্নীতি, স্বৈরাচারিতা ইত্যাদি ইস্যুতে গত এক মাস ধরে নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালাচ্ছিলেন প্রাক্তন ক্রিকেটার তথা তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের কর্ণধার ইমরান খান। কিন্তু গত তিনদিনে আন্দোলন হিংসাত্মক হয়ে উঠেছে। শনিবার তিনজন মারাও যান। এর পরই ইমরান খান ডাক দেন, প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে গদি ছাড়তেই হবে। কোনও আলোচনা নয়। দেশের অন্যতম প্রভাবশালী ধর্মগুরু তাহির-উল-কাদরি এসে দাঁড়িয়েছেন ইমরান খানের পিছনে। ফলে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শরিফ।
সোমবার আন্দোলনকারীরা পাকিস্তান টেলিভিশনের (পি টিভি) অফিসে ঢুকে পড়েন। ভাঙচুর চলে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। পরে ইমরান খান তাদের বেরিয়ে যেতে নির্দেশ দিলেও তারা শোনেনি। পি টিভি অফিসেই শুরু হয় অবস্থান। নওয়াজ শরিফের পক্ষে খবর সম্প্রচার করায় নিশানা করা হয়েছে পি টিভি-কে। ইসলামাবাদে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ চলে। পাথর ছোড়া হয়। সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আন্দোলন তুঙ্গে উঠলেও তিনি গদি ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন নওয়াজ শরিফ।
প্রশ্ন হল, এ সবই কি হচ্ছে সেনাবাহিনীর অঙ্গুলিহেলনে? কারণ গত পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে রয়েছে সেনাবাহিনী, যেটা পাকিস্তানের রাজনীতিতে ভিন্ন ছবি। এখানে সেনাই ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। নইলে ইমরান খানের জনভিত্তি বা সংগঠন এমন মজবুত নয় যে তিনি সরকারকে হেলিয়ে দেবেন। ফলে ইমরান খানকে অর্থ, লোক জোগাচ্ছে কি সেনাবাহিনী? তাঁকে বোড়ে হিসাবে ব্যবহার করে জেনারেল রাহিল শরিফ ক্ষমতা দখলের ছক কষছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। ইমরান খান ক্ষমতা দখল করলে হয় তিনি সেনাবাহিনীর ইশারায় চলবেন অথবা তাঁকে আপাতত ক্ষমতায় বসিয়ে পরে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে অনুমান।
ইমরান-সেনাবাহিনী আঁতাঁতের বিষয়টি নিয়ে আরও জল্পনা ছড়িয়েছে সেনাকর্তাদের কথায়। তাঁরা বলেছেন, পুলিশ যেভাবে 'ন্যায্য' আন্দোলনকে দমন করছে, তা ঠিক নয়। পুলিশের আরও মানবিক হওয়া উচিত। যেহেতু নওয়াজ শরিফ তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে পুলিশ কাজ করছে, তাই পরোক্ষে ইমরান-কাদরির আন্দোলনকে সেনা সমর্থন করছে বলে বোঝা যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে দেশে অরাজকতা দমনের নাম করে ক্ষমতার রাশ সেনাবাহিনী নিতে পারে বলেই জল্পনা দানা বেঁধেছে। সোমবার ইসলামাবাদের সব স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাস্তায় মোতায়েন করা হয়েছে ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া গাড়ি। আকাশে দিনভর চক্কর দিয়েছে ফৌজি হেলিকপ্টার।