বাংলাদেশে পাঠাও চালকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ
বাংলাদেশের চট্টগ্রামে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাওয়ের চালকের বিরুদ্ধে এক শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ ওঠায় আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে এই অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের নিরাপত্তা প
চট্টগ্রামে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাও এর চালকের বিরুদ্ধে এক শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ ওঠায় আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের নিরাপত্তা প্রসঙ্গটি।
এ ঘটনায় স্থানীয় থানায় অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মিজানুর রহমান নামের ওই চালককে গ্রেফতার করে।
পাহাড়তলি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন শনিবার চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্দর নিউমুরিং আবাসিক এলাকা থেকে ওই চালককে আটক করা হয়। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার হাটখোলার বেপারি পাড়ায়।
গ্রেফতারের সময় অভিযুক্তর বাসা থেকে ওই তরুণীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও ব্যাগ উদ্ধার করা হয় বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে মিঃ ইসলাম বিবিসি বাংলাকে জানান, গত মঙ্গলবার বিকেলে ওই তরুণী নগরীর বন্দরটিলা এলাকা থেকে সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী যাওয়ার জন্য ওই চালককে ফোন করেন। তবে তিনি পাঠাও অ্যাপের মাধ্যমে তাকে কল করেননি বলে জানা গেছে।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, কয়েকদিন আগে পাঠাও অ্যাপের মাধ্যমে মিজানুরের গাড়িতে করে কলেজ থেকে বাসায় এসেছিলেন ওই তরুণী।
সেদিন মিজানুর বলেছিলেন যে তিনি একই এলাকায় থাকেন। তাই কখনো গাড়ি না পেলে বা নেটওয়ার্কে সমস্যা থাকলে তিনি রাইডের জন্য তাকে ফোন করতে পারেন।
ঘটনার দিন বৃষ্টির কারণে ওই তরুণী ভাটিয়ারী যাওয়ার গাড়ি পাননি। তখন তিনি মিজানুরকে অ্যাপ ব্যবহার ছাড়াই সরাসরি ফোন করে ডাকেন।
চালক মিজানুর ভাটিয়ারী যাওয়ার পথে আগ্রাবাদ বন্দর এলাকায় যানজট এড়ানোর অজুহাতে গাড়িটি পাহাড়তলি জেলে পাড়া এলাকার দিকে ঘুরিয়ে নেন।
এ সময় ওই তরুণীর নিষেধ করলেও মিজানুর হালিশহর টোল রোডের নির্জন এলাকায় গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যান।
কিছুদূর যাওয়ার পর মিজানুর জঙ্গলের পাশে গাড়ি থামিয়ে পেছনের আসনে থাকা ওই তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে।
পরে ওই তরুণী কোনভাবে গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে চিৎকার করে সাহায্য চাইলে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পালিয়ে যান মিজানুর।
এ সময় ওই তরুণীর মোবাইল ফোন ও ব্যাগটি গাড়িতেই থেকে যায়।
পরে রাস্তা দিয়ে যাওয়া এক মোটর সাইকেল আরোহীর সহায়তায় ওই তরুণী থানায় গিয়ে ধর্ষণচেষ্টা ও মোবাইল চুরির মামলা দায়ের করেন।
পরে পুলিশ প্রযুক্তির সাহায্যে চুরি যাওয়া মোবাইলটির অবস্থান সনাক্ত করে শনিবার রাতে চালক মিজানুরকে আটক করে।
এ ব্যাপারে পাঠাওয়ের চট্টগ্রাম শাখার প্রধান মোহাম্মদ ইসফাক চৌধুরী জানান, অভিযুক্ত চালকের নিবন্ধন এরইমধ্যে স্থায়ীভাবে বাতিল করা হয়েছে।
এছাড়া পুলিশ তদন্তের স্বার্থে তাদের কাছে ঐ চালক সম্পর্কে যা তথ্য চেয়েছে তা তারা সরবরাহ করেছেন।
তবে, মিঃ চৌধুরী বলেছেন, ঘটনার সময় অ্যাপ ব্যবহার না হওয়ায় তাদের কাছে সেই সময়কার লোকেশনের কোন রেকর্ড নেই।
যে কারণে ঘটনার সময় চালকের অবস্থান সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা।
রাইড শেয়ারিং অ্যাপগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা প্রসঙ্গটি উঠে আসায় তিনি বলেন, "অনলাইন অ্যাপ ব্যবহারকালীন অবস্থায় এ ধরণের সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা প্রায় থাকেনা বললেই চলে।"
"কেননা চালক জানেন যে তার লোকেশনের সব তথ্য রেকর্ড করা হচ্ছে।"
এ কারণে অফলাইনে কাউকে রাইড ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন তিনি।
এছাড়া আরোহীদের নিরাপত্তা বিশেষ করে নারী নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি চালককে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয় বলেও উল্লেখ করেন মিঃ চৌধুরী।
তিনি বলেন, আরোহীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ আরো অন্যান্য রেকর্ড যাচাই করেন।
তবে পাঠাও অ্যাপ ঘেঁটে দেখা যায় সেখানে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দায়েরের জন্য কোন হেল্প লাইন নম্বর নেই।
আরো পড়তে পারেন:
উবার, পাঠাওসহ রাইড সেবা: যা জানা জরুরি
উবার-নির্ভর হয়ে উঠছে ঢাকা শহর
এশিয়া থেকে পাততাড়ি গোটাচ্ছে উবার?
সেক্ষেত্রে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়? মিঃ চৌধুরী বলছেন, রাইডাররা চালকের পরিচয়ের পাশে রিপোর্ট করলে সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়।
মিঃ চৌধুরী বলেন, কোন ড্রাইভারের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ উঠলে তারা তৎক্ষণাৎ সেই চালকের নিবন্ধন সাময়িক বা পুরোপুরি বাতিল করে দেন।