বেরল উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসুচী বন্ধ রাখার আসল কারণ, জানুন চিনা ভূবিজ্ঞানীদের গবেষণা কি বলছে
চিনা ভূতত্ত্ববিদদের দাবি, উত্তর কোরিয়ার প্রধান পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষাকেন্দ্রের ওপরের পাহাড়টি ভেঙে পড়েছে।
গত বছর পর্যন্ত পৃথিবীর কাউকে রেয়াত করতেন না। কানে তুলতেন না আন্তর্জাতিক মহলের কোনও কথাই। একের পর এক চলত তার পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সুর চড়াতেন উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন।
সেই তিনিই যখন দক্ষিণ কোরিয়া ও আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা বন্ধ রাখার কথা বলেছিলেন, বিস্মিত হয়েছিল বিশ্ব। কেউ ভেবেছিলেন তিনি পাল্টাচ্ছেন আন্তর্জাতিক চাপে, কেউ বলেছিলেন এটা তাঁর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর কৌশল। এতদিনে জানা গেল কিমের নরম হওয়ার আসল কারণ। চিনা ভূত্ত্ববিদদের দাবি, পুঙ্গে-রি'তে উত্তর কোরিয়ার প্রধান পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষাকেন্দ্রটিই ভেঙে পড়েছে। এই অবস্থায় তাঁরা বলছেন কেন্দ্রটির ওপর সবসময় নজর রাখা প্রয়োজন। কারণ, সেখান থেকে তেজস্ক্রীয় বিকিরণ বাইরে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
পরমাণু বিস্ফোরণে বিপুল পরিমাণে তাপ ও শক্তি নির্গত হয়। গত বছর সেপ্টেম্বরে উত্তর কোরিয়া তাদের সবচেয়ে বড় পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা করেছিল। প্রতিঘাতে উত্তর-পূর্বে যে পাহাড়টির নিচে উত্তর কোরিয়া পরীক্ষা চালায়, সেই পাহাড়টি ঝুড়ঝুড়ে হয়ে গিয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন পর্যবেক্ষকরা। প্রায় ১০০ টন টিএনটির সমান ক্ষমতার সেই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষার পরবর্তী সপ্তাহ জুড়ে এলাকায় চারটি ভূমিকম্পও হয়। হিরোশিমাতে আমেরিকা যে পরমাণু বোমা ফেলেছিল তার শক্তি ছিল ১৫ টন টিএনটির সমান। এর থেকেই তার শক্তি আন্দাজ করা যায়। এবার চিনা বিজ্ঞানীরা জানালেন গোটা পাহাড়টিই ধসে গেছে।
পাহাড়টি ভেঙে তেজস্ক্রিয় পদার্থ উন্মুক্ত হয়ে পড়লে শুধু উত্তর কোরিয়া নয়, প্রতিবেশী চিনের বাতাসও দুষিত হবে। তাই তখন থেকে চিন এলাকাটির ওপর কড়ে নজর রাখে। ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অব চায়নার গবেষকরা বলছেন, বিস্ফোরণের সাড়ে আট মিনিট বাদেই প্রথম ভূমিকম্প হয়. তাঁদের মতে তখনই পরমাণু কেন্দ্রের ওপরের পাহাড়ের একটি বড় অংশ ধসে পড়ে। গবেষক দলের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, 'গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, মন্তপসনে উত্তর কোরিয়ার যে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষাকেন্দ্রটি ছিল, তা ভেঙে পড়েছে। এর ফলে কোনও তেজস্ক্রীয় বিকিরণ বাইরে আসছে কিনা দেখার জন্য কেন্দ্রটির ওপর সবসময় নজর রাখা দরকার।'
গত শনিবারই উত্তর কোরিয়া আলোচনায় বসার জন্য তাদের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী বন্ধ রাখবে বলে ঘোষণা করেছে। যাকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প 'বড় অগ্রগতি' হিসেবে দেখেছেন। এখন বোঝা যাচ্ছে একপ্রকার বাধ্য হয়েই এই পথে এসেছেন কিম।