পৃথিবী ছাড়িয়ে মঙ্গলেও চিন-আমেরিকা টক্কর! লাল-গ্রহে মহাকাশযান পাঠাল বেজিং
পৃথিবী ছাড়িয়ে মঙ্গলেও চিন-আমেরিকা টক্কর! লাল-গ্রহে মহাকাশযান পাঠাল বেজিং
করোনা আবহে চিন-আমেরিকার লাগাতার বাদানুবাদে সরগরম আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহল। সেই রেষারেষিই এইবারে অন্যমাত্রা পেতে চলেছে বলে খবর আন্তর্জাতিক সূত্রে। মহাকাশ অভিযানে আমেরিকার একচ্ছত্র শাসনকে অগ্রাহ্য করে নতুন চাল দিলেন শি জিনপিং। ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মহাকাশে নিজেদের আধিপত্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে মঙ্গল গ্রহে মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করল চিন।
পৃথিবী ও মঙ্গলের কম দূরত্বের সুযোগ নিতে উৎসুক সকলেই
এদিকে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা-নাসা চলতি মাসের ৩০ তারিখে তাদের প্রিজারভেন্স নামক মঙ্গলযান উৎক্ষেপণ করবে বলে জানিয়েছে । দুই দেশের উৎক্ষেপিত মহাকাশযানই ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি নাগাদ মঙ্গলে পোঁছাবে, বলে আশা করা হচ্ছে। ২৩শে জুলাই ভারতীয় সময় সকাল ১০টা ১২ নাগাদ মঙ্গল অভিযান শুরু করে চিন। এই পরিস্থিতিতে গোটা বিশ্বই এখন তাকিয়ে রয়েছে মূলত চিন-আমেরিকার মহাকাশ প্রতিযোগিতার দিকেই। চিনের এই অভিযানের নামকরণ হয়েছে তিয়ানওয়েন-১, যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায় 'স্বর্গীয় সত্যের সন্ধান'। এটি একটি চৈনিক কবিতার অনুকরণ। সূত্রের মতে, বৃহস্পতিবার চিনের হাইনান দ্বীপ থেকে চিনের সর্ববৃহৎ মহাকাশ 'রকেট লং মার্চ ৫' উৎক্ষেপিত হয়।
প্রায় ৫ কোটি ৫০ লক্ষ কিলোমিটার পেরিয়ে মঙ্গলে পৌঁছাবে তিয়ানওয়েন-১
আন্তর্জাতিক সূত্রের খবর অনুযায়ী, প্রায় ৭ মাসের যাত্রা শেষে ২০২১-এর ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ৩ কোটি ৪০ লক্ষ মাইল পার করে মঙ্গলে পৌঁছাবে তিয়ানওয়েন-১। মূলত একটি কক্ষপথ প্রদক্ষিণকারী, একটি ল্যান্ডার ও একটি রোভারকে সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছে লং মার্চ ৫। মহাকাশ-বিদ্যার হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান কেন্দ্রের মহাকাশ গবেষক জোনাথন ম্যাকডওয়েল জানিয়েছেন, "প্রথম চেষ্টাতেই আমেরিকাকে চিন ছাপিয়ে যাবে, এমনটা আশা করা উচিত নয়।" তিনি আরও জানান, "১৯৭৫-৭৬ সালে নাসার ভাইকিং অভিযানের ন্যায় তিয়ানওয়েন-১-এরও একটি ল্যান্ডার ও একটি প্রদক্ষিণকারী রয়েছে।" যদিও জোনাথনের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই বলেছেন যে, মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে যে চিন আমেরিকার থেকে কয়েক দশক পিছিয়ে, তা বোঝানোর জন্যই তিনি এমনটা বলেছেন।
ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময়ে রাশিয়া-আমেরিকার থেকে শিক্ষা চিনের
ঠাণ্ডা যুদ্ধের আবহে আমেরিকা ও রাশিয়ার মহাকাশ অভিযানে সাফল্য দেখে চিনও কয়েক লক্ষ কোটি টাকা খরচ করে মহাকাশ অভিযানের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। চিনে মহাকাশ-বিদ্যা সংক্রান্ত গবেষণাকারী ওয়েবসাইট গোতাইকোনটস.কম-এর গবেষক চেন লেন জানিয়েছেন, "প্রায় অর্ধ-শতাব্দী ধরে মহাকাশে আমেরিকার যে আধিপত্য, তা শেষ করবে চিন।" ইতিমধ্যে ২০০৩-এ মহাকাশে মানুষ প্রেরণ করেছে চিন। তাছাড়া ২০২২-এর মধ্যে নতুন মহাকাশ স্টেশন তৈরির দিকেও এগোচ্ছে তারা। চিনে দুইবার রোভার পাঠিয়ে চিন মহাকাশ অভিযান সম্বন্ধে অবহিত হলেও, আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষকদের মতে এই মঙ্গল-যাত্রা অনেকটাই দুঃসাধ্য।
মঙ্গল-যাত্রা মানেই তথ্য আদানপ্রদানে দূরত্বের বাধা
ম্যাকডওয়েল জানিয়েছেন, "চিনের রোভার মঙ্গলে পৌঁছালেও তথ্য সংগ্রহে সময় লাগবে অনেক। এর কারণ হল দূরত্ব যত বাড়ে, ততই রেডিও সিগন্যালের পৃথিবীতে পৌঁছাতে সমস্যা বাড়ে। ফলত অতি ক্ষীণ সিগন্যাল গ্রহণ করতে দরকার অতি স্পর্শকাতর গ্রাউন্ড স্টেশন।" চিনের সংবাদমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, জিনজিয়াং ও হেইলংজিয়াং প্রদেশে গ্রাউন্ড স্টেশন সম্পূর্ণ করার দিকে এগোচ্ছে চিন। চেন জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত ১৯৬০ থেকে মঙ্গল-যাত্রার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে বহু দেশ। রাশিয়ার সাথে যৌথ উদ্যোগের ক্ষেত্রেও ব্যর্থ হয়েছিল চিন। তবে তথ্যপ্রযুক্তির প্রভূত উন্নতির কারণে এইবারে আশাবাদী চৈনিক বিশেষজ্ঞরা।
আমেরিকাকে টক্কর! মঙ্গল মিশনে চিন, কি বিশেষত্ব রয়েছে বেজিংয়ের মার্স রোভার ও মার্স ল্যান্ডারের