ভারতকে কাবু করতে দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক মানচিত্রে আরও গভীর হচ্ছে চিনা ড্রাগনের পায়ের ছাপ
পাকিস্তানে নয়া রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করেছে চিন। তবে এই অতি-সাধারণ এই বাক্যটির নেপথ্যেই লুকিয়ে রয়েছে এক বিশাল বড় জাল। প্রসঙ্গত, পাকিস্তানে নবনিযুক্ত এই রাষ্ট্রদূতের নাম নং রং। তিনি চিনের ইউনাইটেড ফ্রন্ট ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের অধীনে থাকা একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। এবং চিনের এই চাল আদতে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে আরও গতি দেওয়া।
ইউনাইটেড ফ্রন্ট ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট কী?
আদতে চিনে বিদেশমন্ত্রকের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী ইউনাইটেড ফ্রন্ট ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট। এই সংস্থা আদতে নন-কমিউনিস্টদের মধ্যে কমিউনিজম ছড়ানোর লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছিল। সেই বিভাগের একজনকে রাষ্ট্রদূতের পদে পাকিস্তানে পাঠানোর মূল কারণ, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত বিরোধী একটি অক্ষ তৈরি করা। পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ায় চিনের বন্ধু। সেখান থেকেই বাংলাদেশ, মায়ানমারের মতো দেশের উপরও প্রভাব বিস্তার সম্ভব চিনের পক্ষে।
নেপালেও চিনের নাক গলানো
এর আগে নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চিনের সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রমাণ করেছে যে দক্ষিণ এশিয়ায় কীভাবে চিন বিস্তার ঘটাচ্ছে। নেপালে চিনের রাষ্ট্রদূত হৌ ইয়নকি দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ। তিনি পিএলএ-র গোয়েন্দা বিভাগেও কাজ করার অঅভিজ্ঞতা রাখেন। তিনি ঊর্দু ভাষাতেও সাবলিল। কেপি শর্মা ওলির সরকার বাঁচাতে তিনি যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন, তেমনই পাকিস্তান-নেপালকে কাছাকাছি আনার পিছনেও হাত রয়েছে তাঁর।
বাংলাদেশ-চিন বন্ধুত্বও ভআরতের মাথা ব্যথার কারণ
দিল্লি আগের থেকেই চাপে ছিল কারণ, পূর্ব সীমান্তের প্রতিবেশী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগকেও গ্রহণ করেছেন। ভারত বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের অংশ হতে চায়নি। কারণ এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প, চিন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর যা , পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্যে দিয়ে যায়।
মায়ানমারের সঙ্গে ইকনমিক করিডোর গড়ার প্রস্তাব চিনের
এছাড়া মায়ানমারের সঙ্গে ইকনমিক করিডোর গড়ার জন্য প্রথম থেকেই চাপ সৃষ্টি করে এসেছে বেজিং। এটা হলে ভারতকে আরও ঘিরে ধরতে পারবে চিন। কারণ এর ফলে বঙ্গোপসাগরে চিনা জাহাজের অবাধ গমন আটকানোর আর উপায় থাকবে না। তবে এই পরিস্থিতিতে যখন লাদাখ নিয়ে চরম উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তখন এই প্রকল্পের মাহাত্ম কী?
জিনপিংয়ের স্বপ্ন CPEC
গত কয়েক বছর ধরেই পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের গিলগিট-বালতিস্তান অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা একটু একটু করে পাকিস্তান চিনকে 'দান' করেছে। এই অঞ্চলের এই এলাকাগুলি চিনের হাতে তুলে দেওয়ার মূল লক্ষ্য ছিল চিন-পাকিস্তান ইকনমিক করিডোরের রাস্তা আরও মসৃণ করা। ৩২১৮ কিলোমিটার লম্বা এই করিডোর আদতে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের 'ড্রিম প্রোজেক্ট।'
লাদাখ দ্বন্দ্বের মূল কারণ
অনেক বিশেষজ্ঞরই মত, কেবল সীমান্ত দ্বন্দ্ব কিংবা রাজনৈতিক কৌশল নয়, উত্তর লাদাখে ভারত-চিন সামরিক দ্বন্দ্বের পিছনে রয়েছে অন্য কারণও। লাদাখের এই অঞ্চলে উপস্থিত থাকতে পারে গ্যাস ও তেল সহ হাইড্রোকার্বন রিজার্ভ এবং ভূ শক্তিও। বিভিন্ন গবেষণায় এই শীতল মরুভূমি অঞ্চলে হাইড্রোকার্বনের উপস্থিতি সম্পর্কে নানা তথ্য উঠে আসছে।
লাদাখে রয়েছে তেল?
দীর্ঘদিন
ধরেই
লাদাখ
অঞ্চলে
হাইড্রোকার্বন
মজুত
থাকার
সম্ভাবনা
সম্পর্কে
অনুমান
করা
হচ্ছিল।
কারণ
এই
অঞ্চলের
একটি
বড়
অংশ
টেথিস
সাগরের
সমুদ্রতল
ছিল
যা
কয়েক
মিলিয়ন
বছর
ধরে
টেকটনিক
প্লেটের
সংঘর্ষের
কারণে
পশ্চিম
ও
মধ্য
হিমালয়
হিসেবে
গড়ে
ওঠে।
ফলে
স্বাভাবিকভাবেই
প্রাচীণ
সমুদ্রতলের
নিচে
হাইড্রোকার্বন
মজুত
থাকতে
পারে।
টেথিয়ান
হিমালয়
জোনটি
লাদাখের
জানসকার
পর্বতের
৭০
কিলোমিটার
এলাকা
জুড়ে
রয়েছে,
যা
ভবিষ্যতে
খনিজ
গ্যাস
বা
তেল
সন্ধানের
অন্যতম
এলাকা
হয়ে
উঠতে
পারে।
চিনের আগ্রাসনের নেপথ্যে 'তেল'?
ভারত ও চিন, উভয়ই পেট্রল ও ডিজেল অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করে। ভারত তেলের চাহিদার ৮২ শতাংশ বাইরে থেকে আমদানি করে। তবে ২০২২ সালের মধ্যে পুনর্নবীকরণ শক্তির ব্যবহার, ইথানল ফুয়েলের ব্যবহার করে এই চাহিদা ৬৭ শতাংশে কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। অন্যদিকে চিন তাদের মোট তেল চাহিদার ৭৭ শতাংশই বাইরে থেকে আমদানি করে। সে ক্ষেত্রে নতুন খনিজ শক্তির অবস্থানের খোঁজ ভবিষ্যতে শক্তির সুরক্ষা এনে দিতে পারে।
লাদাখ সংঘাতের মাঝেই চালু চিনের অন্য এক যুদ্ধ! কী এই হাইব্রিড ওয়ারফেয়ার?