মাও থেকে জিনপিং, এলএসি নিয়ে বারবারই বদলেছে চিনের দাবি! বেড়েছে আগ্রাসী মনোভাব
বর্তমান পরিস্থিতি লাদাখ নিয়ে কী দাবি চিনের? চিনের রাষ্ট্রপ্রধান শি জিনপিং চান যে তাদের মানচিত্রের অধীনেই থাকবে প্রস্তাবিত গ্রিন লাইন-ভুক্ত এলাকা। কী এই গ্রিন লাইন? ১৯৫৯ সালে এই গ্রিন লাইনের প্রস্তাব করেছিলেন চিনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী চৌ এনলাই। মাও জেদংয়ের অধীনেই তার তিন বছর আগে নির্মাণ হয়েছিল লাসা-কাশগর হাইওয়েটি।

লাসা থেকে কাশগর পর্যন্ত হাইওয়ে তৈরি করে চিন
১৯৫৬ সালে ভারতের অজ্ঞানেই লাসা থেকে কাশগর পর্যন্ত ২১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক তৈরি করেছিল চিন, যা গিয়েছিল আকসাই চিনের মধ্য দিয়ে। এরপর ১৯৬০ সালে এনলাই প্রস্তাব দেন যে হাজি লঙ্গর পাসের দক্ষিণে স্থিত আকসাই চিনের উপর চিনের দাবি ভারত মেনে নিলে, বেজিংও অরুণাচলপ্রদেশের (তৎকালীন নর্থ ইস্ট ফ্রন্টিয়ার) উপর ভারতীয় দাবি মেনে নেবে। তবে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু তা মেনে নেননি।

১৯৬২ সালে চিনা আগ্রাসনের নেপথ্যে কোন কারণ
চিনের প্রস্তাব নেহরু মেনে না নেওয়াতেই লাদাখে ১৯৬২ সালে চিনা আগ্রাসন দেখা যায়, পরবর্তীতে যা যুদ্ধে পরিণত হয়। বর্তমানে চিনের অধীনে ভারতের ৩৮,১৮০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা রয়েছে। শাক্সগাম উপত্যকার ৫১৮০ বর্গ কিলোমিটারও এর মধ্যে রয়েছে, যা পাকিস্তান ১৯৬৩ সালে চিনকে উপহার হিসাবে দান করেছিল।

১৯৭৯ সালে বাজপেয়ি-শিয়াওপিং বৈঠক
এই যুদ্ধের ১৭ বছর পর চিনের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী দেং শিয়াওপিং দেখা করেন ভারতের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী অটর বিহারী বাজপেয়ির সঙ্গে। পরে অবশ্য এই দুই নেতাই নিজ নিজ দেশের সর্বে সর্বা হন। ১৯৭৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছি বাজপেয়ি-শিয়াওপিং সেই বৈঠক। সেই সময় শিয়াওপিং ভারতকে সীমান্ত সমস্যা মেটানোর জন্যে ফের একটি প্যাকেজ দিয়েছিলেন। সেই সময়ও লাদাখের পরিবর্তে অরুণাচল নিয়ে কথা হয়েছিল, যদিও সেই আলোচনা ভেস্তে গিয়েছিল।

১৯৭৫ সালে অরুণাচলপ্রদেশে চিনা হামলা
এর চারবছর আগেই অবশ্য অরুণাচলপ্রদেশে চিনা সেনা ঢুকে অসম রাইফেলসের ৪ সৈনিককে মারে। ১৯৭৫ সালের ২০ অক্টোবর ঘটনাটি ঘটেছিল। প্রসঙ্গত, অরুণাচলপ্রদেশকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে এসেছে চিন। তাঁদের দাবি এটা দক্ষিণ তিব্বত। তাই এই অংশ নিয়ে ভারতের সঙ্গে দীর্ঘ বিবাদ রয়েছে চিনের। সেবার সেই সংঘর্ষ বেঁধেছিল অরুণাচলের তুলুঙ লা-তে।

এলএসির মূল ভিত্তি
এলএসি মূলত ১৯১৪ সালের ম্যাকমোহন লাইনকে অনুসরণ করে। এর জেরে পূর্বে অরুণাচলপ্রদেশের কয়েকটি এলাকা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এদিকে চিন অরুণাচলকে নিজেদের দেশের অংশ বলে দাবি করে। তাদের ভাষায় অরুণাচল হল দক্ষিণ তিব্বত। লংজু ও আসাফিলা এলাকাতেও কয়েকটি জায়গা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে মতান্তর রয়েছে।

১৯৮৭ সালে সুমডোরং চু সংঘর্ষ
এরপরই ১৯৮৭ সালে ঘটে সুমডোরং চু-র ঘটনাটি। এই ঘটনাটি ১৯৬২ সালের পর ভারত ও চিনের মধ্যে সব থেকে বড় সংঘর্ষে পরিণত হয়েছিল। সেই সময় চিনা সেনা হাথুং লা দখল করে নিয়েছিল। এরপর তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল কে সুন্দরজি-র নির্দেশে ভারতীয় সেনা সেখানা আকাশপথে গিয়ে নামে ও চিনকে প্রতিহত করে। ১৯৬২ সালের পর এই প্রথম এই সময়ে ফ্ল্যাগ মিটিং হয় দুই পক্ষের।

১৯৯১ সালে ফের বিবাদ মেটানোর চেষ্টা হয়
পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে চিনের প্রিমিয়ার লি পেং যখন ভারত সফরে আসেন, তখন পিভি নরসিমহা রাও এলএসি-র এই মত মেনে নেন। পরে ১৯৯৩ সালে বেজিংয়ে গিয়ে এই সংক্রান্ত চুক্তিপত্রে সই করেছিলেন পিভি নরসিমহা রাও। তবে ভারতের পক্ষ থেকে কোনও দিনও এলএসি-র মানচিত্র অদলবদল করা হয়নি। এরপর ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদী যখন এই সংক্রান্ত বিবাদ মেটানোর প্রস্তাব করেন, তখন তা প্রত্যাখ্যান করেছিল বেজিং।

বিশেষ হটলাইন সত্ত্বেও বিবাদ মেটেনি আজও
২০০৫ সালে সীমান্ত সমস্যা মেটানোর জন্যে একটি বিশেষ চ্যানেল তৈরি হয়। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং চিনের স্টেট কাউন্সিলরের মধ্যে ২২টি বৈঠক হয়। তবে বিবাদ মেটেনি। ২০১৩ সালে ডেপসাংয়ে ২১ দিন ধরে ভারত ও চিনের মধ্যে স্ট্যান্ড অফ চলে। চিনে সেবার ১৯ কিলোমিটার ভিতরে চলে আসে ভারতীয় সীমার। ২০১৩ সালের ১৫ এপ্রিল ৫০ জনের একটি চিনা দল ১৬ হাজার ফুট উচ্চতায় তিনটি তাঁবু খাটিয়ে নেয়। অবশ্য ভারত এই জমি হারানোর বিষয়টি ২০১৪ সালে গিয়ে স্বীকার করেছিল। আর তার তিন বছর পর, ২০১৭ সালে ডোকলামকে কেন্দ্র করে বিবাদ সৃষ্টি হয়েছিল দুই দেশের মধ্যে।
দোহায় শুরু তালিবান-আফগান শান্তি আলোচনা, সম্মেলনে যোগ দিয়ে যা বললেন এস জয়শঙ্কর