স্তিমিত হচ্ছে রণহুঙ্কার, ডোকলামে স্থিতাবস্থা ফিরতে লেগেছিল ৭২ দিন, লাদাখে ৬০
স্তিমিত হচ্ছে রণহুঙ্কার, ডোকলামে স্থিতাবস্থা ফিরতে লেগেছিল ৭২ দিন, লাদাখে ৬০
খানিক হলেও বরফ গলতে শুরু করেছে। সূত্রের খবর প্রায় ৬০ দিন পর গালওয়ান থেকে সেনা সরাতে শুরু করেছে চিন। এদিকে মে মাসের গোরা থেকেই লাদাখ সীমান্তের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর একাধিকবার হাতাহাতিতে জড়িয়েছিল দুই দেশের সেনাই। পরবর্তী গত ১৫ই জুন গালওয়ান নদী উপত্যকায় চিন-ভারত সংঘাতে ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যুর পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
গতমাস থেকেই রণহুঙ্কার সীমান্ত পারে
সেই সময়ের পর থেকে আরও আগ্রাসী হয়ে উঠতে দেখা যায় পিপলস লিবারেশন আর্মিকেও। রণহুঙ্কার বেজে ওঠে সীমান্তের দুই পারেই।এদিকে দক্ষিণ চিন সাগর ইস্যুতেও বেশ কিছু আগ্রাসী ভূমিকায় দেখা যায় চিনকে। যার জেরে আন্তর্জাতিক মঞ্চেও বেশ কিছুটা কোণঠাসা হয় বেজিং। পাল্টা জবাবের জন্য তৈরি হয় আসিয়ান গোষ্ঠীর দেশ গুলি সহ জাপান আমেরিকাও। এদিকে চিনকে কড়া প্রত্যুত্তর দেওয়ার জন্য তৈরি হয় ভারতও। লাদাখে চিনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সামরিক সরঞ্জাম বাড়িয়েছে ভারতও। মিসাইল থেকে শুরু করে টি-৯০ ট্যাঙ্ক, ফাইটার প্লেন থেকে অন্যান্য সমরাস্ত্র আঁটঘাঁট বেঁধে মাঠে নামে ভারতও।
উত্তেজনা কমাতে ‘বাফার জোন’ তৈরি
এমতাস্থাতেই খবর মিলেছে গালওয়ান উপত্যকা থেকে কিছুটা পিছিয়ে গেল ভারত এবং চিনের সেনা। উত্তেজনা কমাতে ‘বাফার জোন' তৈরির উদ্দেশ্যেই এই পদক্ষেপ বলে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে। সূত্রের খবর, গোগরা হট স্প্রিং এরিয়াতেও এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যদিও প্যাংগং লেক সংলগ্ন অঞ্চল এখনও একই পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
তিন দফার বৈঠকে বসে দুই দেশের সেনা প্রধানেরা
চিনা আগ্রাসনের জবাবে ভারত শুরু থেকেই লাদাখের প্রকৃত সীমান্তবর্তী অঞ্চলে পুরনো স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে চেয়েছে। কিন্তু পায়ে পা দিয়ে ঝগড়ার তালে ছিল বেজিং। এমনকি গালওয়ান উপত্যকার একটা বড় অংশকে নিজেদের বলেও দাবি করে চিন। এদিকে সীমান্ত সংঘাত এড়াতে ১৫ই জুনের পরবর্তী তিন সপ্তাহে লালফৌজ ও ভারতীয় সেনার উচ্চপদস্থ সামরিক অধিকর্তাদের মধ্যে তিন দফায় দীর্ঘ বৈঠকও হয়। এদিকে মূল সংঘাতের সূত্রপাত হয় আজ থেকে প্রায় ৬০ দিন আগে প্যাংগং সো উপত্যকায়। গত ৫ ও ৬ই মে ওই এলাকায় নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়ায় দুই দেশের সেনাই। তারপর থেকে ক্রমেই বেড়েছে উত্তেজনা।
ডোকলামে স্থিতাবস্থা ফিরতে ৭২ দিন, লাদাখে ৬০
এদিকে ২০১৭ সালে ভুটানের অন্তর্গত ডোকলামে ঢুকে পড়েছিল লালফৌজ। সেখানেও রাস্তা নির্মাণের তোড়জোড় শুরু করে তারা। পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে ভারতীয় সেনাও। ৭২ দিন ধরে দু' পক্ষের মধ্যে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পর অবশেষে ফেরে স্থিতাবস্থা। এমতাবস্থায় লাদাখেও ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করল মূল বিবাদের প্রায় ৬০ দিন পরে।
৫ই প্যাংগং লেকের কাছে সেনা সংঘর্ষের পরই ক্রমেই বেড়েছে উত্তেজনা
এদিকে ৫ই মে-র পরবর্তী সময়ে ১০ মে সিকিমে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়াতে দেখা যায় ভারত-চিন সেনাকে। নাকু লা-য় চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মির জওয়ানদের সঙ্গে হাতাহাতিও হয় ভারতীয় সেনার। পরবর্তীতে লাদাখ সীমান্ত লাগোয়া প্যাংগং লেক, ট্রিগ হাইটস, ডেমচোক ও চুমার এলাকাতেও ক্রমেই বেড়েছে উত্তেজনা। গত দুমাস ধরে প্রায়ই তৈরি হয় চিন-ভারত যুদ্ধ সম্ভাবনা। যা নিয়ে বারংবার উত্তাল হয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনীতি।
ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার পিছু হটেছে লালফৌজ
সূত্রের খবর, এমতাবস্থায় গালওয়ানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরে গত ২২ এবং ৩০ জুন দুই সেনার কোর কমান্ডার স্তরের বৈঠকের ফলশ্রুতিতেই দুই দেশের সেনার ‘ডিসএনগেজমেন্ট' প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। রবিবার বিকেল থেকেই লালফৌজের তরফে পিছু হঠা শুরু হয়। গত ১৫ জুন গালওয়ানের পেট্রোলিং পয়েন্ট-১৪ অদূরে চিনা সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয়েছিল। বর্তমানে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি)-র অন্দরে ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত ওই এলাকা থেকে প্রায় দু'কিলোমিটার চিন সেনা পিছনে সরেছে বলে একাধিক সংবাদসংস্থা সূত্রে খবর।
লাদাখে ইস্যুতে চিন শান্তির বার্তা দিয়েও গোপন ফাঁদ পাততে পারে! বেজিং-স্ট্র্যাটেজি নিয়ে জল্পনা