তালিবানের বড় কর্তার সঙ্গে বৈঠকের কথা স্বীকার করল চিন; ভারতের অস্বস্তি বাড়বে এতে
একদিকে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তালিবানের শান্তি আলোচনা চলছে, তখন অন্যদিকে চিনও হাত গুটিয়ে বসে নেই।
একদিকে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তালিবানের শান্তি আলোচনা চলছে, তখন অন্যদিকে চিনও হাত গুটিয়ে বসে নেই। বিশ্ব রাজনীতিতে বড় ভূমিকা পালন করার জন্যে বেইজিং লালায়িত, সেকথা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। আর এবারে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে নিজের প্রভাব বাড়ানোর লক্ষ্যে তালিবান নেতা মোল্লা আব্দুল ঘানি বারাদারের সঙ্গে বৈঠক করল তারা। বারাদার তালিবানের রাজনৈতিক বিষয়ক কর্মকাণ্ড দেখাশোনা করার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা এবং তাঁর সঙ্গে মোলাকাত করে চিন বুঝিয়ে দিল যে অন্যতম বড় শক্তি হিসেবে তারাও আফগানিস্তানকে হালকা ভাবে নিচ্ছে না।
চিনের এই উদ্যোগে আঞ্চলিক রাজনীতি ও কূটনীতিতে যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রভাব দেখা যেতে পারে, তার আভাস পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরাও।
চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র লু কাং সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন যে শান্তির প্রয়াস এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের লক্ষ্যে বেইজিং-এর কর্তারা বারাদারের সঙ্গে মত বিনিময় করেছেন। এখানে উল্লেখ্য যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তালিবানের শান্তি বৈঠকের আসন্ন সপ্তম দফার আগে হল চিনের সঙ্গে তালিবান নেতার এই মোলাকাত।
আফগানিস্তানের সুযোগ ছাড়তে রাজি নয় চিনও
যদিও ওয়াশিংটনের সঙ্গে তালিবানের শান্তি আলোচনা এখনও কোনও রফাসূত্র খুঁজে বের করতে পারেনি আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা প্রসঙ্গে, এর মধ্যে চিনের উদ্যোগ পরিষ্কার করল যে আফগানিস্তানের মতো ভূ-কৌশলগত একটি অঞ্চলে বেইজিংও সুযোগ ছাড়তে রাজি নয়। এতদিন মার্কিন সামরিক শক্তির উপস্থিতিতে সেই সুযোগ বিশেষ ছিল না কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকা যেখানে প্রায় ১৮ বছর আফগানিস্তানের পাঁকে আটকে থাকার পরে যেখানে বেরোনোর রাস্তা খুঁজছে, সেখানে চিনের কাছে এক বড় সুযোগ সেখানে ঘাঁটি গেড়ে বসার। কারণ মার্কিন সেনা আফগানিস্তান থেকে বেরিয়ে গেলে সেখানে যে শূন্যতার সৃষ্টি হবে, তাতে জঙ্গি সংগঠনগুলির রমরমা বাড়তে পারে এবং তাতে আফগানিস্তান-লাগোয়া পশ্চিম চিনের জিনজিয়াং প্রদেশ প্রভাবিত হতে পারে। জিনজিয়াং প্রদেশে জঙ্গি কার্যকলাপ নিয়ে বেইজিং এমনিতেই বিব্রত আর সেখানে আরও সমস্যা বাড়াতে পারে আফগানিস্তানের রাজনৈতিক শূন্যতা।
আফগানিস্তান নিয়ে চিনের সাঁড়াশি কৌশল
কাং এও বলেন যে চিন চেষ্টা করছে যাতে তালিবানের সঙ্গে আফগানিস্তানের আশরাফ গনি সরকারের মধ্যেও বার্তালাপ শুরু হয়। অর্থাৎ, আফগানিস্তানের নেতৃত্বে বহির্বিশ্বের সোনেজি এবং সেদেশের অভ্যন্তরে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে চিন একটি সাঁড়াশি কৌশল নিয়েছে।
আফগানিস্তান প্রসঙ্গে চিনের উৎসাহ প্রদর্শনের আরও একটি দিকও রয়েছে, সেটি হল অর্থনৈতিক। কাবুলকে নিজেদের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পের অংশ করে সিপিইসি বা চায়না-পাকিস্তান ইকোনোমিক করিডরকে আফগানিস্তানের মাটিতে সম্প্রসারিত করারও চিনের এলটি বড় লক্ষ্য। এছাড়া আফগানিস্তানে লগ্নি করারও চিনের একটি বড় অভিসন্ধি।
চিন আফগানিস্তানের সঙ্গে বৈঠক এই প্রথমবার করছে, তা নয়। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে চিনে আফগান তালিবানের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক করে। সে বছরেই জিনজিয়াং প্রদেশের রাজধানী উরুমকিতে তালিবান এবং আফগান সরকারের প্রতিনিধিদের মধ্যেও একটি বৈঠক হয় বলে খবর পাওয়া যায়।
ভারতের কাছে স্বস্তিজনক নয়
আফগানিস্তানের প্রসঙ্গে ভারতের ভূমিকা বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক নিরিখে আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক নতুন ঘটনা নয়। দু'দেশেরই পড়শী পাকিস্তানকে নিয়ে বিব্রত নয়াদিল্লি এবং কাবুল দু'পক্ষই। আফগানিস্তানে ভারতের ভূমিকা নিয়ে অসন্তুষ্ট পাকিস্তান তাই তালিবানের হাত ছাড়তে রাজি নয়। এখন যদি চিনও সেখানে এসে ঢোকে, তাহলে তা ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে যে নতুনভাবে ভাবাবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এমনিই তালিবানের সঙ্গে বৈঠকের ইস্যুতে ভারত খুব স্বস্তিতে নেই। যেখানে চিনের সঙ্গেও তালিবানের কূটনৈতিক আদানপ্রদান প্রকাশ্যে আশায় ভারতের বিদেশনীতির কর্তারা কোন পথে এগোন, সেটা এখন দেখার।