সূর্যের ইউভি রশ্মি কি করোনা ভাইরাসের জীবাণুর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, কি বলছে সমীক্ষা
করোনার ওপর অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব
গবেষণায় বলা হয়েছে, নতুন করোনা ভাইরাস (সার্স–কোভ–২) সংক্রমণ তাপ, আর্দ্রতা এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের ওপর প্রভাব ফেলছে। সেই কারণে উত্তর গোলার্ধে বসন্ত এবং গ্রীষ্মের সময় গরম আবহাওয়ায় কোভিড–১৯–এর হার হ্রাস পেতে পারে। যদিও এই বিষয়টি সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত রয়েছে।
আইসল্যান্ডে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি
সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাব এমনকি তাপ এবং আর্দ্রতার চেয়েও বড় ভূমিকা নিতে পারে। কোভিড-১৯-এর সংক্রমণের হার কমাতে জলবায়ু ও আবহাওয়ার ভূমিকা থাকতে পারে বলে সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে। আমেরিকায় গ্রীষ্মকালের সময় এই ভাইরাস কি ধরণের আচরণ করবে তা নিয়ে নতুন সূত্র পাওয়া গিয়েছে। বিশেষত, আইসল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায় মাথাপিছু সংক্রমণের হারের উপর নজর দেওয়া সম্ভবত বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ এর প্রসারণে অতি বেগুনি রশ্মির সম্ভাব্য প্রভাবের ঝলক দিতে পারে। মঙ্গলবার পর্যন্ত আইসল্যান্ডে মাথাপিছু নিশ্চিত করোনা ভাইরাস কেসের শীর্ষ হারের মধ্যে ০.১৭৭ শতাংশ, অর্থাৎ ৩৬৪,২৬০ জনসংখ্যার মধ্যে ৬৪৮ জন। অস্ট্রেলিয়ার নিশ্চিত সংক্রমণের হার মাত্ক ০.০০৮৩ শতাংশ, ২৫.৪ মিলিয়ন লোকের জনসংখ্যার মধ্যে ২,০৪৪ জন আক্রান্ত।
করোনা ভাইরাসের জীবাণুর ওপর প্রভাব ইউভি রশ্মির
এর অর্থ হল অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে আইসল্যান্ডে সংক্রমণের হার ২২ গুণ বেশি। তাপ এবং আর্দ্রতা বৈষম্যের ক্ষেত্রে ভূমিকা নিতে পারে, ইউভি রশ্মির প্রভাবের দিকে নজর দেওয়া থেকে জানা যায় যে এটি অন্য দুটি আবহাওয়ার কারণের তুলনায় আরও তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ১ জানুয়ারি ২০২০ সাল থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত গড় তাপমাত্রা ছিল ৭৪.৮ সেন্টিগ্রেড যা দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মের মরসুম বলে পরিচিত। ওই একই সময়ে আইসল্যান্ডের রিকজাভিকে গড় তাপমাত্রা ৩২.১ সেন্টিগ্রেড, যা উত্তর গোলার্ধে শীতের মরসুম। আরও কাছ থেকে তুলনা করার জন্য অ্যাকুওয়েদার ওই সময়ের এক শীতের অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন শহরের সঙ্গে তুলনা করে। আইসল্যান্ডের গড় তাপমাত্রা ওই সময় শিকাগো শহরের (৩২.৬ সেন্টিগ্রেড) সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। তবে শিকাগোর করোনা ভাইরাস মাথাপিছু ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস পেয়েছিল (০.০১৭৮ শতাংশ,২৪ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে ৪৯০টি কেস), আইসল্যান্ডের হার শিকাগোর হারের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি বেড়েছে।
হংকংয়ের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন নিকোলস জানিয়েছিলেন যে এই করোনা ভাইরাসের জীবাণু সূর্যের রশ্মিতে ধ্বংস হতে পারে। অ্যাকুওয়েদারের পক্ষ থেকে নিকোলসের দলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা জানান যে সূর্যের রশ্মি ফ্লু-এর জীবাণু সহ অন্য জীবাণুর মতো কোভিড-১৯ ভাইরাসের ওপর প্রভাব ফেলে কিনা তা তাঁরা অনুসন্ধান করে দেখছেন।
আইসল্যান্ডে কম সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি
কারণ আইসল্যান্ডটি এতটাই উত্তরে অবস্থিত, এর অক্ষাংশ ৬৪.১ এবং এর মূলভূমিটি আর্কটিক সার্কেল থেকে মাত্র কয়েক ডিগ্রি দক্ষিণে, তাই এই দেশটি অন্য দক্ষিণ শহরগুলির তুলনায় সূর্য এবং সৌর তীব্রতা অনেক কম লাভ করে। আইসল্যান্ডে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিকাগোর তুলনায়, বিশেষ করে সিডনির থেকে কম অতিবেগুনি রশ্মি পেয়েছে। শীতকালেও আইসল্যান্ডে অতিবেগুনি রশ্মি থাকে না বললেই চলে। শিকাগোতে শীতকালে অতিবেগুনি রশ্মি কিছুটা হলেও পাওয়া যায় এবং এই দুই শহরের থেকে সিডনিতে বেশি অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব পাওয়া যায়। আইসল্যান্ডের জন্য সুসংবাদটি হল বসন্তকাল গ্রীষ্ম পর্যন্ত অব্যাহত থাকায় এটি আরও বেশি পরিমাণে ইউভি অনুভব করতে থাকবে যা সম্ভবত এর করোনা ভাইরাস কেসে প্রভাব ফেলতে পারে।