২০২১ সালের মধ্যে ২ বিলিয়ন কোভিড ভ্যাকসিন ডোজ সরবরাহ করা হবে, জানিয়েছে হু
করোনা ভাইরাস মহামারি গোটা বিশ্বকেই কাবু করে রেখেছে। সকলেই এই মারণ ভাউরাস থেকে বাঁচতে অধীর আগ্রহে প্রতিষেধকের অপেক্ষা করছে। এরই মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) আশঙ্কা করছে যে এই ভ্যাকসিন বাজারে আসলেই তা সকলের কাছে সহজে পৌঁছাবে না। মঙ্গলবার হু–এর পক্ষ বলা হয়, ধনী নয় এমন দেশগুলির কাছে যাতে ভ্যাকসিন পৌঁছে যায় তা নিশ্চিত করে বিশ্বব্যাপী চুক্তিতে যোগ দেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে প্রত্যেকটি দেশকে। দেশগুলোকে নিজেদের স্বার্থ থেকে বেরিয়ে এসে ভাইরাস প্রতিরোধে পুরো বিশ্ব নিয়ে চিন্তা করার অনুরোধ জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস অ্যাডানোম গেব্রিয়েসিস বলেন, 'ভ্যাকসিন নিয়ে জাতীয়তাবাদী আচরণ করা হলে মহামারি মোকাবিলার পথে বাধা তৈরি করবে। কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হলে তা কুক্ষিগত না রেখে সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে তা সবার জন্য ভালো।’ এর জন্য হু একটি ভ্যাকসিন কার্যক্রমের আহ্বান করেছে।

হু–এর ভ্যাকসিন কার্যক্রম কী
কোভ্যাক্স গ্লোবাল ভ্যাকসিন সুবিধা কার্যক্রমের পরিকল্পনা এমনভাবেই করা হয়েছে যাতে ধনী দেশগুলির কাছ থেকে তহবিল নিয়ে তা অলাভজনকভাবে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরি করে তা বিশ্বের সকলের কাছে সমানভাবে বন্টন করা। হু-এর লক্ষ্য রয়েছে ২০২১ সালের শেষে অনুমোদিত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের কার্যকর ২ বিলিয়ন ডোজ সরবরাহ করা। দেশগুলির যোগদানের জন্য ৩১ অগাস্টের সময়সীমার আগে এই কর্মসূচির বিশদটি এখনও প্রকাশিত হচ্ছে। এই কার্যক্রমে হু-এর নেতৃত্বের সঙ্গে রয়েছে গাভি ভ্যাকসিন ও মহামারি প্রস্তুতি ইনোভেশনস (সিপি) এর জোট।
কোভ্যাক্স একটি বিস্তৃত কার্যক্রমের অংশ, যার নাম অ্যাক্সেস টু কোভিড-১৯ টুলসস (অ্যাক্ট) এক্সিলেরেটর, যা নিশ্চিত করে যে এই ভ্যাকসিনগুলি, চিকিৎসা, ডায়াগনস্টিক টেস্ট এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা সংস্থাগুলি মহামারি মোকাবিলার জন্য বিস্তৃতভাবে উপলব্ধ।

ধনী দেশগুলির কী করছে
তারা তাদের নাগরিকদের জন্য ভ্যাকসিন সুরক্ষিত রাখার বিষয়ে মনোনিবেশ করছে, ভ্যাকসিন কার্যকর হওয়ার তথ্য সামনে আসতেই তারা সেই প্রতিষেধকের ডোজগুলি আকর্ষণীয় চুক্তিতে কিনে নিচ্ছে। আমেরিকা, ব্রিটেন, জাপান এবং ইউরোপ সহ বেশ কিছু দেশের সরকার বিফিজার ইংক, জনসন অ্যান্ড জনসন, অ্যাস্ট্রাজেনেকা পিএলসি ও অন্যান্য ওষুধ উৎপাদক সংস্থাগুলির সঙ্গে ১০ বিলিয়ন ডলার খরচ করে ভ্যাকসিন চুক্তি করছে। আমেরিকা ইতিমধ্যেই কয়েক মিলিয়ন ডোজের খাতিরে তার টেস্টিং, উৎপাদন ও মজুত রাখার পেছনে ১১ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। রাশিয়া এবং চিন প্রতিষেধক তৈরির কাজের প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং তারা তাদের নাগরিকদের এই প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ শুরুও করে দিয়েছে।

কী ধরনের উৎসকে কাজে লাগানো হবে
এই অ্যাক্টে বিনিয়োগ করবে বিভিন্ন অলাভজনক সংস্থা ও সরকার। এটি প্রায় ৩১ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করার লক্ষ্য নিয়েছে। এখনও পর্যন্ত, কোভ্যাক্স সুবিধাটি স্বেচ্ছাসেবী অনুদানে প্রত্যাশী ৯২টি দরিদ্র দেশগুলির কাছ থেকে আগ্রহ আকর্ষণ করেছে। তবে ৮০টি ধনী দেশেও এই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। প্রকল্পের অর্থায়নের কারণে একমাস আগে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছিল।

হু–এর উদ্বেগ কী
হু উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে ধনী দেশগুলি তাদের নিজস্ব নাগরিকদের জন্য ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করে মহামারিটি বন্ধ করার প্রচেষ্টাতে বাধা দিতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস অ্যাডানোম গেব্রিয়েসিস বলেন, ‘আমাদের ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ রোধ করতে হবে।' তিনি বলেন, ‘বিশ্ব যদি দ্রুত এ ভাইরাস থেকে মুক্ত হতে চায়, তবে একত্রিতভাবে কাজ করতে হবে। কারণ এটি বিশ্বায়নের দুনিয়া। এখানকার অর্থনীতি একে অপরের উপর নির্ভরশীল। বিশ্বের একাংশ কিংবা গুটিকয়েক দেশ একা একা নিজেদেরকে ভাইরাস থেকে মুক্ত ভাবতে পারবে না।'
এক সংবাদ সম্মেলনে টেড্রোস অ্যাডানোম বলেন, ‘মহামারি থেকে বিশ্বের প্রতিটি দেশ নিরাপদ না হওয়া পযন্ত কেউই নিরাপদ নয়। তাই প্রত্যেকটি দেশকে ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদী আচরণ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।'
করোনা মোকাবিলায় ভূয়সী প্রশংসা মমতার সরকারকে, 'আন্তর্জাতিক সম্মান’ পাচ্ছেন নির্মল