যেভাবে ২০ বছর পর ব্রিটিশ ধনকুবের ব্যবসায়ী জানলেন তার তিন সন্তান আসলে তার নয়
ব্রিটেনের একজন ধনকুবের তিন সন্তানের পিতা। কিন্তু হঠাৎ করে তিনি জানলেন যে ২০ বছর ধরে লালনপালন করা ওই তিন সন্তানের পিতা আসলে তিনি নন। কিভাবে বের হলো এটি?
দু'বছর আগে রিচার্ড ম্যাসনকে চিকিৎসকরা জানান যে তিনি সিসটিক ফিবরোসিসে আক্রান্ত। এর মানে হলো শিশু বয়স থেকেই তার অজান্তেই তার প্রজননক্ষমতা নষ্ট হয়েছে।
৫৪ বছর বয়সী একজন সফল ব্যবসায়ী রিচার্ড ম্যাসন। মূল্য যাচাইয়ের ব্রিটিশ ওয়েবসাইট মানিসুপারমার্কেট ডট কমের সহ-প্রতিষ্ঠাতা তিনি।
দু বছর আগে চিকিৎসকরা তাকে নিশ্চিত করেন যে তার সিসটিক ফিবরোসিস রোগ আছে (ফুসফুস ও পরিপাকতন্ত্রের একটি সমস্যা, যা সাধারণত বংশগত)।
এটা ছিলো তার জন্য একটি প্রচণ্ড ধাক্কা।
তিনি বলছিলেন, "মনে হচ্ছিলো আমাকে কেউ হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করেছে"।
তবে তার ধাক্কার কারণটি আসলে রোগে আক্রান্ত হওয়া নিয়ে নয়, তিনি ধাক্কা খেয়েছেন ভিন্ন কারণে।
বিবিসি রেডিও ফাইভকে তিনি বলছিলেন, "আমাকে বলা হয়েছে যারা সিসটিক ফিবরোসিসে আক্রান্ত তাদের প্রজননক্ষমতা থাকেনা তাদের বাবা হওয়ার বিষয়টি বিরল"।
তাহলে তার সাবেক স্ত্রী কেটের সাথে তাদের যে তিন সন্তান হয়েছে তাদের বাবা আসলে তিনি নন!
"প্রথমে ভেবেছিলাম রোগ নির্ণয় হয়তো ভুল হয়েছে, কিন্তু চিকিৎসক বলছেন তারা নিশ্চিত। আমাকে এখন আমার প্রথম স্ত্রীর সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে হবে"।
রিচার্ড ম্যাসন আসলে চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন তার বর্তমান স্ত্রী এমা কেনো গর্ভধারণ করতে পারছেনা সেটি পরীক্ষা করাতে।
পিতৃত্ব প্রতারণা ?
রিচার্ড তার প্রথম স্ত্রী কেটকে জিজ্ঞেস করেছেন এ বিষয়ে। বিশ বছর সংসার করার পর ২০০৭ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছিলো।
কেট তাকে বলেছেন, তাদের তিন সন্তান এড, জোয়েল ও উইলেম এর বাবা তিনিই, যদিও ডিএনএ পরীক্ষায় তার সে দাবি প্রমাণ হয়নি।
"এরপর আমি চিন্তা করতে শুরু করলাম তাহলে ওদের বাবা কে। আমি তো আর কিছু জানিনা"।
পরে রিচার্ড তার সাবেক স্ত্রীর বিরুদ্ধে পিতৃত্ব প্রতারণার অভিযোগ করেন আদালতে।
গত নভেম্বরে তার সাবেক স্ত্রী ক্ষতিপূরণ হিসেবে তিন লাখ বিশ হাজার ডলার দিতে সম্মত হয়েছেন।
ডিভোর্সের সময় তিনি পঞ্চাশ লাখ ডলার পেয়েছিলেন।
আরো পড়ুন:
'এরশাদের আমলে পালিয়ে বেড়াতেন আমানুল্লাহ কবীর'
জার্সিতে মায়ের নাম নিয়ে কেন খেলছেন ক্রিকেটাররা
ব্রেক্সিট ভোট: এরপর কী ঘটতে পারে?
তবে আদালত কেটকে তার তিন সন্তানর পিতৃ পরিচয় গোপন রাখতে পারবেন বলে অনুমতি দিয়েছে।
ম্যাসনের আইনজীবী রজার টেরেল টেলিগ্রাফ পত্রিকাকে বলছেন, "তিনি (কেট) কেনো সন্তানের বাবার পরিচয় প্রকাশ করতে চাননা তা আমরা জানিনা। সে কারণেই তিনি সমঝোতায় এসেছেন এবং তাতে ওদের বাবার নাম উল্লেখ করার দরকার হয়নি"।
তবে রিচার্ড ম্যাসন বিশ্বাস করেন ভবিষ্যতে কখনো সন্তানরা তাদের বাবার নাম জানতে চাইবে। আর তখন তিনি তাদের একটি তথ্যই দেবেন।
"আমি জানিনা আমারই কোনো বন্ধু কি-না। হতে পারে আমার ঘনিষ্ঠ কেউ"।
তিনি বলেন, জীবনে যখন এমন কোনো রহস্যজনক বিষয় থাকে তাহলে সেটি আপনাকে নানাভাবে প্রভাবিত করবে।
রিচার্ড অবশ্য ৬ হাজার ৪০০ ডলার পুরষ্কারের ঘোষণা দিয়েছেন বাচ্চাদের সঠিক বাবার পরিচয় কেউ যদি জানাতে পারে।
ব্রিটিশ পত্রিকা ডেইলি মেইল রিপোর্টে বলেছে, ম্যাসন বিশ্বাস করেন নব্বই এর দশকে কেটের সাথে সম্পর্ক ছিলো এমন এক ব্যক্তিও বাচ্চাদের বাবা হতে পারেন। যিনি ব্যাংকে কাজ করার সময় কেটের সহকর্মী ছিলো।
বিবিসি কেটের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি জবাব দেননি।
তবে বিষয়টি আদালতে নেয়ার পর রিচার্ড ম্যাসনের জন্য আরও সমস্যা হয়েছে যে তার দুই সন্তান তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছেন।
ডেইলি মেইলকে তিনি বলেন, "আমি দেখি তারা ফেসবুকে কী করছে এবং আমার হৃদয় ভেঙ্গে যায়। বড় সন্তান গ্রাজুয়েশন শেষ করেছে, আমাকে আমন্ত্রণ পর্যন্ত করেনি।"
এখন জমজ দুটির একটি এড শুধু তার সাথে যোগাযোগ রাখে।
যমজ দুটির অন্যটি জোয়েল ডেইলি মেইলের কাছে উল্টো ম্যাসনেরই সমালোচনা করেছেন।
তিনি বলেন, তার পিতা কে সেটি খুঁজতে তিনি উৎসাহী নন।
"রিচার্ড আমার বাবা। প্রকৃত বাবাকে খুঁজতে চাইনা আমি। আমার সন্দেহ যে আদৌ তিনি আমাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানেন কি-না"।