অপহৃত মেয়েদের যৌনপল্লিতে বিক্রির হুমকি বোকো হারামের, আমেরিকার হস্তক্ষেপ প্রার্থনা
বোকো হারাম নাইজিরিয়ার উত্তরাংশে দীর্ঘদিন ধরেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এদের উদ্দেশ্য হল, কট্টর ইসলামি অনুশাসন কায়েম করা। তাই নারী স্বাধীনতার ঘোর বিরোধী তারা। সংবাদ সংস্থা এএফপি জানাচ্ছে, বিভিন্ন সময়ে মেয়েদের স্কুলে তারা উড়ো চিঠি পাঠিয়ে হুমকি দিয়েছে। তাতে তেমন কাজ না হওয়ায় গত ১৪ এপ্রিল চিবুক শহরের একটি স্কুলে রাতের অন্ধকারে ঢুকে পড়ে তারা। হস্টেল থেকে অপহরণ করে ২৭৬ জন কিশোরীকে। এদের সবার বয়স ১৫-১৮ বছর। গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় ৫৩ জন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। বাকি ২২৩ জনকে পিছমোড়া করে বেঁধে গাড়িতে তোলে জঙ্গিরা। তার পর থেকে সরকার বারবার আবেদন করলেও অপহৃত কিশোরীদের মুক্তি দেয়নি তারা।
এই পরিপ্রেক্ষিতে দিন দুয়েক আগে ৫৭ মিনিটের একটি ভিডিও প্রকাশ করে ওই জঙ্গি সংগঠনটি। তাতে সংগঠনের এক চাঁই আবু বকর শেকাউ বলে, "অভিভাবকরা জেনে রাখুন, আমি আপনাদের মেয়েদের অপহরণ করে এনেছি। আমরা আগেও বলেছি, এখনও বলব, পশ্চিমী শিক্ষা বর্জন করুন, বর্জন করুন, বর্জন করুন। এখনই সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নইলে এই মেয়েদের বিক্রি করে দেব। বাকি জীবনটা ওরা যৌনদাসী হয়ে থাকবে। আর দাবি মেনে নিলে ওদের বাড়ি পাঠিয়ে দেব। তক্ষুণি ওদের বিয়ে দিয়ে দিতে হবে। ন'বছর থেকে বারো বছর বয়সেই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া উচিত।"
এদিকে, এতদিন মুখে কুলুপ এঁটে থাকলেও ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসার পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নাইজিরিয়ার রাষ্ট্রপতি গুডলাক জোনাথন। কিন্তু তাঁর মন্তব্যে ফুটে উঠেছে অসহায়তা। তিনি শুধু বলেছেন, "এটা দেশের কাছে কঠিন পরীক্ষার সময়। খুবই বেদনাদায়ক।" আসলে দেশের উত্তরাংশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করেছে বোকো হারাম। ওখানে সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণই নেই। সেনাবাহিনী চেষ্টা করেও পূর্ণাঙ্গ দখল নিতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি যে কোনও আশার বাণী শোনাতে পারবেন না, সেটাই স্বাভাবিক।
এমন পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের একাংশ সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ চেয়েছে। এই খবরের সত্যতা স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছেন একাধিক মার্কিন সেনেটর। ডেমোক্র্যাট সেনেটর অ্যামি ক্লোবুকার বলেছেন, "নিরীহ মেয়েদের রক্ষা করতে হবে। আমরা চোখ বুজে বসে থাকতে পারি না। চোখের সামনে যা ঘটছে, তাকে বর্বরতা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না।" আর এক সেনেটর ডিক ডার্বিন বলেন, "আমরা এবং আমাদের আফ্রিকান বন্ধুদের উচিত নাইজিরিয়া সরকারকে সব রকমভাবে সাহায্য করা, যাতে ওই নিরীহ মেয়েরা তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারে।" এই মর্মে ছ'জন সেনেটর একটি প্রস্তাব এনেছেন মার্কিন কংগ্রেসে।
মার্কিন বিদেশ দফতরের মুখপাত্র মেরি হার্ফ বলেন, "এটা নিন্দনীয় ঘটনা। এখন আমাদের কাছে যা উপযুক্ত বলে মনে হবে, সেই পথই আমরা অবলম্বন করব।" তা হলে কি আমেরিকা সামরিক শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে বোকো হারামের ওপর? এর সরাসরি উত্তর এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেছেন, "দেখা যাক।"
স্থানীয় সূত্র উদ্ধৃত করে এএফপি জানাচ্ছে, আফ্রিকায় যৌন ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় হয়তো ওই কিশোরীদের বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যে। মাথাপিছু ১২ ডলার দামে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে সন্দেহ। তার আগে তাদের ওপর যৌন হেনস্থা চালানো হয়েছে বলে অনুমান। যদিও সেটা প্রকাশ্যে স্বীকার করছে না বোকো হারাম।