রাজশাহীতে সমাবেশ রুখতে বিএনপি নেতাকর্মী ধরপাকড়ের অভিযোগ
রাজশাহী মহানগর বিএনপি অভিযোগ করেছে, তেসরা ডিসেম্বরের সমাবেশের আগে তাদের বেশ কজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাসহ অনেক নেতাকর্মীকে ধরেছে পুলিশ। তবে রাজশাহী পুলিশ তা অস্বীকার করেছে।
বাংলাদেশে রাজশাহীতে আগামী তেসরা ডিসেম্বর বিরোধীদল বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে সামনে রেখে পুলিশ প্রায় কয়েক'শ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা।
তারা বলছেন, অন্তত আড়াই হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এছাড়া ধর-পাকড়
এখনও চলছে।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলি ঈশা অভিযোগ করেছেন যে, তাদের কয়েক জন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে আটক করা হয়েছে।“আমাদের খুব ভাইটাল কিছু লোক তারা ধরেছে, যেমন বাঘমারা চেয়ারম্যান।”
তিনি অভিযোগ করেন, "এখন পর্যন্ত প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ৬০-৭০টা মামলা হয়েছে পুরো বিভাগে।”
এছাড়া, মি. ঈশার অভিযোগ, বিভিন্ন ভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের হুমকি দেয়া হচ্ছে।
“আমাদের লোকজন যারা গতকাল আসছিল তাদের বিভিন্ন জায়গায় বাস থামিয়ে দিয়ে নামিয়ে দিয়েছে। আমাদের নেতাকর্মী বাড়িতে ঘুমাতে পারছে না। পুলিশ গিয়ে নক করছে,” বলেন মি. আলি।
তবে রাজশাহীতে সমাবেশের আগে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।
রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক আব্দুল বাতেন বলেন, কোন রাজনৈতিক নেতা, কিংবা রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করে না।
“কারো বিরুদ্ধে কোন অপরাধ প্রমাণিত হলে তখন পুলিশ তাদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চালায়।”
এদিকে রাজধানী ঢাকায় নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেন, পৌর বিএনপির সভাপতি কামাল হোসেন, উপজেলা বিএনপি নেতা মোখলেসুর রহমান মুকুল, যুবদল নেতা শফিকুল ইসলাম শফিক, ইউনিয়ন বিএনপি নেতা ফিরোজ আহমেদ, বাঘমারা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পরশু রাজশাহীতে গণসমাবেশ উল্লেখ করে মি. রিজভী অভিযোগ করেন, “এটা ওদের একটা চিরচেনা পদ্ধতি, সংস্কৃতি যে একটা গণসমাবেশ বিএনপি আহ্বান করলে সেটাকে বাধা দেয়ার জন্য এহেন প্রচেষ্টা নাই, রাষ্ট্রযন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে তারা করে না।”
'খোলা আকাশের নিচে নেতাকর্মী’
এদিকে, রাজশাহীর সমাবেশ সামনে রেখে এরইমধ্যে বিভাগের অন্য জেলাগুলো থেকে নেতাকর্মীরা রাজশাহীতে পৌঁছাতে শুরু করেছেন।
স্থানীয় বিএনপির নেতারা বলছেন, এরইমধ্যে লক্ষাধিক নেতাকর্মী রাজশাহীতে পৌঁছেছেন। এদের অনেকেই আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে উঠেছেন।
আবার অনেকে রাজশাহীর সমাবেশস্থল মাদ্রাসা মাঠে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলি ঈশা বলেন, “আমাদের প্যান্ডেলও করতে দেয় নাই তাদের রাখার জন্য।”
মি. ঈশা বলেন, রাজশাহীতে এই সমাবেশে ১৫ লাখের মতো মানুষ অংশ নেবে বলে তারা ধারণা করছেন।
ধর্মঘট শুরু
রাজশাহী বিভাগে বিরোধীদল বিএনপির সমাবেশের ঠিক দুই দিন আগে থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে পরিবহন মালিকরা।
বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে এই ধর্মঘট রাজশাহীসহ বিভাগের ৮ জেলাতেই পালিত হচ্ছে।
এর আওতায় এই বিভাগের আট জেলায় কোন আন্তজেলা যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করছে না।
রাজশাহী বিএনপির নেতারা বলছেন, পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকলেও ট্রেন ও নৌপথে নেতাকর্মীরা রাজশাহীতে আসছেন।
তাদের অভিযোগ, বিভাগীয় সমাবেশে বাধা সৃষ্টি করতেই এই ধর্মঘট পালিত হচ্ছে।
রাজশাহীর সাবেক মেয়ার এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল অভিযোগ করে বলেন, সরকার সমর্থিত "তথাকথিত ইউনিয়ন নাম দিয়ে আজকে গাড়ি ঘোড়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।"
“আমাদের কর্মীরা সাইকেলে আসছে। ৩৫ কিলোমিটার হেঁটেও আসছে আজ সকালে। আমাদের কর্মীরা মোটরসাইকেলে আসছে, নৌকা দিয়ে আসছে।”
তবে এর আগেও বিএনপি যেসব বিভাগীয় সমাবেশ করেছে, সেগুলোর আগে সংশ্লিষ্ট প্রায় প্রতিটি জেলাতেই পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।
বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুরে সমাবেশের আগে এবং সিলেটে সমাবেশের দিন পরিবহন ধর্মঘট পালন করা হয়েছিল। ব্যতিক্রম ছিল শুধু কুমিল্লা এবং চট্টগ্রাম। এই দুটি জেলায় সমাবেশের আগে কোন ধর্মঘট ডাকা হয়নি।
বিএনপি তখন অভিযোগ করেছিল যে, তাদের সমাবেশগুলোতে লোকসমাগম ঠেকাতেই সরকারের ইঙ্গিতে গণপরিবহনের ধর্মঘট ডেকে সমাবেশের জন্য নির্দিষ্ট শহরকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়।
নিজেদের রুটি-রুজির ধর্মঘট
রাজশাহী বিভাগের পরিবহন মালিকরা অবশ্য বলেছেন যে, তাদের কর্মসূচীর সাথে কোন ধরণের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য জড়িত নেই।
বরং মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ২০১৮ সালের হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন, সড়কের পাশে হাঁট-বাজার উচ্ছেদসহ ১০ দফা দাবি রয়েছে।
স্থানীয় জেলা প্রশাসনকে গত ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত তাদের এসব দাবি মেনে নেয়ার সময়সীমা বেধে দিলেও কোন আশ্বাস না পাওয়ায় এই ধর্মঘট ও কর্মবিরতি পালন করছেন তারা।
তাদের দাবির পক্ষে প্রশাসনের আশ্বাস পেলে সাথে সাথেই কর্মসুচী প্রত্যাহার করবেন তারা।
রাজশাহী বিভাগের পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি সাফকাত মঞ্জুর বিপ্লব বলেন, “এখানে সমাবেশকে কেন্দ্র করে কে কী বলছে, এটার সাথে আমাদের সম্পৃক্ততা নাই। আমাদেরটা আমাদের নিজেদের রুটি রুজির দাবি।”
১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সম্মেলনের আগে রাজশাহীতেই বিএনপির সবশেষ সমাবেশ এটি।