জানেন এই উৎসবে বাঁদরের বিনোদনের জন্য নাচে মানুষ! এমনকী জড়িয়ে আছে রামায়ণের কাহিনিও
বাজার জুড়ে ছড়ানো একগুচ্ছ রঙিন ফল। না কোনও ক্রেতা নেই। সেখানে ঘুরে ঘুরে ইচ্ছা মতো ফল খাচ্ছে বাঁদরেরা। নভেম্বরের শেষ রবিবার এমনই দৃশ্য দেখা যায় থাইল্যান্ডের লবপুরী শহরে। Monkey Buffet উৎসব নামে বিখ্যাত এই উতসব। কয়েক বছর ধর
বাজার জুড়ে ছড়ানো একগুচ্ছ রঙিন ফল। না কোনও ক্রেতা নেই। সেখানে ঘুরে ঘুরে ইচ্ছা মতো ফল খাচ্ছে বাঁদরেরা। নভেম্বরের শেষ রবিবার এমনই দৃশ্য দেখা যায় থাইল্যান্ডের লবপুরী শহরে। Monkey Buffet উৎসব নামে বিখ্যাত এই উতসব। কয়েক বছর ধরে চলে আসছে এটি।
অন্তত ৩ হাজার বাঁদর ফল খেতে আসে সেখানে। স্থানীয়রা বলে এটা আসলে বাঁদরদের ধন্যবাদ জানানোর উৎসব। বাঁদরদের জন্যই নাকি এই শহরে বহু পর্যটকের সমাগম হয়।
পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্যই বাঁদরদের এই উৎসব উপহার দেয় স্থানীয় বাসিন্দারা। যদিও আদতে এই উৎসবের শিকড় অনেক গভীরে।
ছড়িয়ে আছে তিন হাজার বছরের ইতিহাস
ব্যাংকক থেকে ৯৩ মাইল দূরে এই লবপুরী শহর। এই শহরের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে তিন হাজার বছরের ইতিহাস। থাইল্যান্ডের অন্যতম পুরনো ঐতিহ্যবাহী একটি শহর এটি। হাজার হাজার বছরের স্মৃতি বহন করে এমন অনেক নির্মাণ রয়েছে এই শহরে।
এই শহরের বাসিন্দা এই বাঁদরেরা যেন সেই পুরনো দিনের কথাই বলে। এলাকার মানুষজনের সঙ্গে এদের দারুণ সখ্যতা। প্রাচীন যে সমস্ত নিদর্শন রয়েছে সেখানেই এদের বাস। ১৯৮৯ সালে এই উৎসবের সূচনা করেন এক হোটেল মালিক ইয়াংইউথ কিত্ত্বাতানানুসত।
তারপর থেকে প্রত্যেক বছর নিয়ম করে এই উৎসব পালন করেন এলাকার মানুষজন। উৎসবটা যেহেতু বাঁদরদের জন্য তাই প্রত্যেকবার এই উৎসবের আগে বাঁদরদের আমন্ত্রণ পত্র দেয় স্থানীয় বাসিন্দারা। আমন্ত্রণ পত্রের সঙ্গে উপহার হিসেবে থাকে ছোট্ট এক প্যাকেট কাজু।
রেড কার্পেট বিছিয়ে দেওয়া হয় এলাকায়
এখানেই শেষ নয় নিমন্ত্রিত বাঁদররা আসবে বলেই উৎসবের দিন সকালবেলা রেড কার্পেট বিছিয়ে দেওয়া হয় এলাকায়। এলাকায় রয়েছে ১৩০০ শতকের একটি মন্দির। এলাকার অর্ধেক বাঁদরেরই বাস সেই মন্দিরের। সেই মন্দিরকে কেন্দ্র করে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়।
এই উৎসবে নাচ-গান করে এলাকার মানুষজন। বাঁদরদের আকর্ষণ করার জন্য বাঁদরদের মত পোশাক পড়ে নাচে মানুষ। স্বাভাবিকভাবেই এই অনুষ্ঠান বাঁদরদের বিশেষ আকর্ষিত করে।
জঙ্গল থেকে অনেকেই আসে এই উৎসবে যোগ দিতে
শুধু ওই এলাকায় বসবাসকারী বাঁদরই নয়, আশেপাশের জঙ্গল থেকে অনেকেই আসে এই উৎসবে যোগ দিতে। একটি টেবিল জুড়ে তাদের জন্য সাজানো থাকে অন্তত আট হাজার ফল। লাল কিংবা গোলাপি চাদর পাতা টেবিলের ওপর সাজিয়ে রাখা হয় সেই সব রঙিন ফল। অবশ্য শুধু বাঁদর নয় অন্তত ১০ হাজার মানুষ এই উৎসব দেখতে আসেন প্রত্যেক বছর। তাঁদের জন্যও অনেক খাবারের বন্দোবস্ত থাকে।
সেগুলিকে আবার বেশ কায়দা করে কাটা হয়
চারপাশে সাজানো থাকে তরমুজ কিংবা আনারসের মতো ফল। সেগুলিকে আবার বেশ কায়দা করে কাটা হয়। ফলের চূড়ার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁদরেরা। তবে শুধু ফল নয়, তাদের জন্য অনেক জাঙ্ক ফুডও থাকে। থাইল্যান্ডের বিশেষ ধরনের ভাত, পেস্ট্রি, নানা রকমের মিষ্টি এসব রাখা হয় টেবিলে। থাকে জুস এবং সোডার ক্যান। এই উৎসবে একদিকে যেমন শহরের ঐতিহ্য মিশে আছে অন্যদিকে শহরের অর্থনীতির ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা নেয় এই উৎসব। দেশ-বিদেশের সংবাদমাধ্যমে গিয়ে সেই উৎসবের ছবি তুলে আনে। এই উৎসবের সঙ্গে রয়েছে রামায়নের সম্পর্ক।
সংস্কৃতির সঙ্গেও মিশে আছে রাম
ভারতের মতোই থাইল্যান্ডের সংস্কৃতির সঙ্গেও মিশে আছে রাম। এই দেশের জাতীয় গ্রন্থ হল রামাকাইন। সেখানেও রয়েছে রাম-সীতার গল্প। সীতাকে উদ্ধারের সময় কীভাবে হনুমান সাহায্য করেছিল, সেই গল্পও রয়েছে। তাই এখানে বাঁদরদের বিশেষ সম্মান দেওয়ার জন্যই এই ব্যবস্থা।