ধর্ষণের শাস্তি আর এইচএসসির 'অটো পাস' নিয়ে প্রশ্ন
বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে আলোচনা-বিতর্ক আরেক পর্যায়ে চলে গেছে বলে মনে হচ্ছে। বেশ কয়েক দিন ধরে ধর্ষণের জন্য মৃত্যুদণ্ড চেয়ে বিক্ষোভের পর সরকার একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইন সংশোধন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাথে মৃত্যুকে সর্বোচ্চ শাস্তি করেছে।
কিন্তু তাতে বিতর্ক শেষ হয়নি। নতুন একটি মাত্রা যোগ হয়েছে মাত্র।
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি নিয়ে কয়েকটি চিঠি দিয়ে আজ শুরু করছি। প্রথমে লিখেছেন খুলনার পাইকগাছা থেকে আরিফুল ইসলাম:
''যে হারে সমাজে ছোট শিশু থেকে বিভিন্ন বয়সের লোক ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, তাতে এই আইন সাধারণ ধর্ষকদের মনে ভীতি সৃষ্টি করবে । কিন্তু রাজনৈতিক ও অত্যন্ত প্রভাবশালী ধর্ষকদের ক্ষেত্রে সঠিক তদন্ত ও সঠিক বিচার কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সন্দেহ হয়। তবে আমি এটুকু নিশ্চিত যে মৃত্যুদণ্ড আইন করাটা যত সহজ, কার্যকর করাটা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়।''
আপনি ঠিকই বলেছেন মি. ইসলাম। মুখে ধর্ষকের ফাঁসি দাবি করা যত সহজ, কাওকে ফাঁসিতে ঝোলানো তত সহজ না। মৃত্যুদণ্ড মানেই হল, রাষ্ট্র কোন মানব সন্তানকে হত্যা করছে, কিন্তু আইনের মাধ্যমে। বিচারে যদি কোন ভুল থেকে থাকে, নির্দোষ লোক যদি দোষী সাব্যস্ত হয়ে থাকে, তাহলে মৃত্যুদণ্ডের রায় ফিরিয়ে নেয়া যায় না। সেজন্য কাওকে ফাঁসিতে ঝোলানেরা আগে অনেকবার ভাবতে হয়।
পরের চিঠি লিখেছেন নরসিংদী সদর থেকে ওয়ারেছ আলী খান:
''বাংলাদেশে বিদ্যমান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী ১৮০ দিনে ধর্ষণ মামলার বিচারকার্য সম্পন্ন করার কথা। স্বল্পতম সময়ে ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হওয়ায় ধর্ষণের মত জঘন্যতম অপরাধ বেশুমার আকার ধারণ করছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই আইনের অধীনে দায়ের করা মামলার মাত্র তিন শতাংশের নিষ্পত্তির তথ্য পাওয়া যায়।
''এই ঘৃণ্য অপরাধের সবোর্চ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন সংশোধনের পাশাপাশি বিচার প্রক্রিয়ায় সাক্ষীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, নির্যাতিতের শারীরিক আলামত পরীক্ষা সংক্রান্ত জটিলতা পরিহার ও লিঙ্গ সংবেদনশীল বিচারিক পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে ন্যায় বিচারকে ত্বরান্বিত করতে হবে।''
আপনি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রসঙ্গ তুলেছেন মি. খান। লিঙ্গ সংবেদশীল বিচারিক পরিবেশ, অর্থাৎ আদালতে নির্যাতিত নারীকে যাতে হেয় না করা হয়, সেদিকে খেয়াল রেখে আইনের সংশোধন করা প্রয়োজন। সব কিছু এমন ভাবে করতে হবে যাতে নির্যাতিত নারী অভিযোগ করতে এবং আসামীকে চিহ্নিত করার সাহস অর্জন করেন।
শুধু আদালত নয়, পুলিশের তদন্তের সময় সংবেদনশীল মনোভাব প্রয়োজন বলে মনে করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহাম্মদ মাসুদ রানা:
''ভিকটিমের অভিযোগ নেয়ার জন্য একজন নারী পুলিশের থাকার কথা থাকলেও সময়মত তা থাকে না। আর পুরুষ পুলিশরা অভিযোগ নিতে গিয়ে ভিকটিমকে বিভিন্ন অবজ্ঞাসূচক মন্তব্য করেন। 'টু-ফিঙ্গার টেস্ট' পরীক্ষাটি করা হয় ভিকটিম যৌনকার্যে অভ্যস্ত কি না তা জানার জন্যে। ভিকটিম যৌনকার্যে অভ্যস্ত কী অনভ্যস্ত তার সাথে ধর্ষণের যোগসূত্র খোঁজা কতটা যৌক্তিক?''
অবশ্যই যৌক্তিক নয় মি. রানা। পুলিশের অবিশ্বাস এবং কটূক্তি, যৌন পরীক্ষা ইত্যাদির কারণেই নির্যাতিত নারী অভিযোগ করতে এগিয়ে আসেন না। আদালতে হেনস্তা হবার ভয়ে মামলা করতে চান না। এই প্রতিবন্ধকতা দূর না করা পর্যন্ত ধর্ষণকারীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে যাবেন।
শাস্তি বাড়ালেই যে আইনের প্রয়োগ কার্যকর হবে না, সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে লিখেছেন খুলনার দাকোপ থেকে মুকুল সরদার:
''ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হলেই ধর্ষণ বন্ধ হয়ে যাবে, তেমনটা আমার মনে হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় ধর্ষণের বিচার হয় না বা আইনের ফাঁক গলে কিম্বা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ধর্ষক বেরিয়ে যায়। এবং ধর্ষিতাকেই ধর্ষণের জন্য নানা ভাবে দায়ী করা হয়। বিবিসি বাংলার টেলিভিশন অনুষ্ঠান প্রবাহতে আইন মন্ত্রী বলেছেন, আইন সংশোধনের পাশাপাশি বিচার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করারও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সরকারের এ উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। কাজেই আইন প্রণয়ন বা সংশোধনের পাশাপাশি আইনের যথাযথ প্রয়োগের দিকটিও বিবেচনায় নেওয়া উচিৎ।''
সব অপরাধের ক্ষেত্রেই আইনের প্রয়োগ জরুরি মি. সরদার, না হলে কোন অপরাধীকেই বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো যাবে না। তবে এ'কথাও সত্য যে, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না। বরং সেখানে ভিন্ন জটিলতাও সৃষ্টি হতে পারে।
তবে ধর্ষণের বিষয়কে ভিন্ন ভাবে দেখছেন নিরুপম মণ্ডল, যিনিও খুলনার দাকোপেরই বাসিন্দা:
''ধর্ষণের সংজ্ঞা পরিবর্তন অবশ্যই জরুরি। দুজনের সম্মতিতে হওয়া শারীরিক সম্পর্ক কোনভাবেই ধর্ষণের পর্যায়ে পড়ে না। "অমুক আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দুইবছর ধরে ধর্ষণ করেছে" ---এটা পরিষ্কার ব্যভিচার। আর এই ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে দুজনকেই সমান শাস্তি ভোগ করতে হবে। আইনের এমন কোন সংশোধনী দরকার নেই যা দ্বারা একটা পক্ষ বেশি সুবিধা পাবে। ব্যভিচারের ক্ষেত্রে অপরাধ দুজনেরই সমান, তাই শাস্তি দুজনেরই সমান পাওয়া উচিৎ। আর প্রকৃত অর্থে ধর্ষণের ক্ষেত্রে ধর্ষককে অবশ্যই মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে।''
আপনার যুক্তিটা আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না মি. মণ্ডল। আপনার কথায় আদৌ কোন যুক্তি আছে কি? 'সম্মতিতে হওয়া শারীরিক সম্পর্ক' মানেই না যে এখানে কোন ধর্ষণ হতে পারে না। যে কোন সময় নারী 'না' বলতে পারেন, এবং তখন পুরুষকে সেটা মানতে হবে। সম্পর্ক যতই 'সম্মতিপূর্ণ' হোক না কেন, যে কোন সময় 'না' বলার অধিকার নারীর আছে, এবং পুরুষ সঙ্গীকে সেটা সম্মান করতেই হবে। এমনকি স্ত্রী যদি যৌন মিলনে রাজি না থাকে আর স্বামী বল প্রয়োগ করে, তাহলে সেটাও অবশ্যই ধর্ষণ এবং শাস্তিযোগ্য। ন্যায় বিচারের স্বার্থে অভিযুক্তকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সকল সুযোগ অবশ্যই দিতে হবে এবং দোষ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হলেই তবে তার শাস্তি হবে। কিন্তু আইন যদি নির্যাতিত নারীর পক্ষে না থাকে, তাহলে সে আইন কিসের জন্য?
এবারে ভিন্ন প্রসঙ্গ। ভারতে কয়েকটি মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বলিউড তারকাদের মামলা নিয়ে লিখেছেন পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে শামীম সরকার:
''তেরই অক্টোবর বিবিসি বাংলায় একটি খবরের শিরোনাম ছিল 'ভারতীয় মিডিয়ার বিরুদ্ধে এবার শাহরুখ, সালমান ,আমিরদের মামলা।' শুধু এরা নয়, মামলায় শামিল অজয় দেবগান, করণ জোহর, রোহিত শেট্টি, বিধু বিনোদ চোপড়া, রমেশ সিপ্পি, রাকেশ রোশন, সিদ্ধার্থ রায় কাপুর, বিশাল ভরদ্বাজের মত বলিউডের অন্যতম সেরা প্রযোজক-পরিচালকরা। বলতে গেলে প্রায় পুরো বলিউড মামলাকারীদের সঙ্গে। বিবিসি বাংলা শুধু ৩৪ জন প্রযোজক ও চারটি চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠান মামলায় যুক্ত এটুকু বলেই দায় সেরেছে। কিন্তু এখানে বিবিসি বাংলা শাহরুখ, সালমান ও আমির খানদের নাম ঢালাওভাবে তুলে ধরেছে। অথচ যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই রিপাবলিক টিভির এডিটর-ইন-চিফ অর্ণব গোস্বামী ও সাংবাদিক প্রদীপ ভাণ্ডারী এবং টাইমস নাও এর সঞ্চালক নভিকা কুমার ও এডিটর-ইন-চিফ রাহুল শিবশংকরদের নাম এক বারও বলা হয়নি।''
আমি আপনার সাথে একমত মি. সরকার, অভিযোগকারীদের নামের সাথে অভিযুক্তদের নামও বলা উচিত ছিল। আমাদের প্রতিবেদনে শুধু মাত্র তিন খান, সালমান, শাহরুখ এবং আমির খানের নাম উল্লেখ করা হয় কারণ সব অভিযোগকারীর মধ্যে এরাই আমাদের পাঠকদের কাছে সব চেয়ে পরিচিত। আর একই কারণে অভিযুক্তদের নাম দেয়া হয় নি, কারণ অধিকাংশ পাঠকের কাছে ভারতীয় নিউজ চ্যানেলের সম্পাদক বা উপস্থাপক পরিচিত মুখ নন। তারপরও আমি বলবো, বিশেষ করে অর্ণব গোস্বামীর নাম অন্তত থাকা উচিত ছিল।
এবারে পুরনো একটি প্রসঙ্গ, যেটা খবর থেকে চলে যাবার কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। করোনাভাইরাস সংক্রান্ত একটি জরিপ নিয়ে লিখেছেন ঝিনাইদহ থেকে কাজী সাঈদ:
''বিবিসি বাংলার একটা প্রতিবেদনে দেখলাম, ঢাকায় নাকি ৪৫ শতাংশ মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। অবশ্য এটাই স্বাভাবিক বলে মনে হয়, তবে শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা বাংলাদেশে কম বেশি এক চিত্র হওয়ার কথা। তবে এই অবস্থাকে যারা গুরুত্ব দিচ্ছেন না, তাদের জানা উচিত প্রতিদিনই আমাদের দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে মানুষ মরছে, বিশ্বে অনেক দেশেই করোনা আবার দ্রুত হারে বাড়তে শুরু করেছে। আর আমাদের সামনে শীতকাল, এটা একেবারেই ভুলে গেলে চলবে না।''
আমাদের প্রতিবেদনের তথ্যটি এসেছে সম্প্রতি ঢাকায় চালিত একটি জরিপ থেকে। জরিপটি করেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ আইসিডিডিআর,বি। এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, যাদের শরীরে করোনাভাইরাসের এ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে, তাদের ৯৪ শতাংশরই কোন উপসর্গ ছিল না। তবে এই জরিপ থেকে বোঝা যায় করোনাভাইরাস মারাত্মকভাবে প্রাণঘাতী না হলেও, তা খুব সহজে সংক্রমণ করে এবং বয়স বা অন্যান্য অসুখের কারণে ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে সাবধানে থাকতে হবে।
চলমান মহামারি নিয়ে আরেকটি চিঠি, লিখেছেন খুলনা থেকে শিবাজী মণ্ডল:
''করোনা পরিস্থিতির আঘাতে অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। বিশেষভাবে, কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের সর্বস্তরের খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে করোনার প্রভাব যে কতটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে তার সার্বিক চিত্র গত ৯ই অক্টোবরে বিবিসি বাংলার প্রবাহ অনুষ্ঠানে পরিবেশিত শাহনাজ পারভিনের বিশেষ প্রতিবেদনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
''ঘরের বাইরে বের হলে এমন হাজারো মুখে কষ্ট আর ক্লেশের ছাপ দেখে এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি। একটা ভাইরাসের কাছে এই একবিংশ শতকেও আমরা কতটা অসহায়ত্ব বরণ করেছি ভাবলে অবাক লাগে।''
আসলেই অবাক করার মত ব্যাপার মি. মণ্ডল। যখন আমরা চাঁদ পার হয়ে মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করছি, তখন অতি ক্ষুদ্র, খোলা চোখে অদৃশ্য একটি জীবাণুর ভয়ে গৃহবন্দী হয়ে আছি, বন্ধু-বান্ধবের সাথে দেখা করতে দ্বিধা বোধ করছি, মুখে মুখোশ পরে জনসমক্ষে বের হচ্ছি। একই সাথে এই ক্ষুদ্র জীবাণুর কারণে বিশ্বের সব চেয়ে শক্তিশালী দেশগুলোর অর্থনীতি প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ কর্মহীন হয়েছে, অনেকের জীবনে অন্ধকার নেমে এসেছে। তাও বলবো, মানব জাতি এই বিপর্যয় অবশ্যই কাটিয়ে উঠবে, হয়তো আরো এক-দুই বছর লেগে যাবে, কিন্তু এই অন্ধকার অবশ্যই কেটে যাবে।
বাল্য বিবাহ বিষয়ে আমাদের একটি ভিডিও প্রতিবেদন দেখে মন্তব্য করেছেন ঢাকার গেণ্ডারিয়া থেকে মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান:
''বাংলাদেশের আইনে মেয়েদের বিয়ের বয়স নির্ধারণ করা আছে ১৮ বছর যা ক্ষেত্র বিশেষে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এর কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে হলে সেটি হবে 'বাল্যবিবাহ', যা একটি দণ্ডনীয় অপরাধ৷ কিন্তু আইনের বিধিনিষেধ কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে এটি বন্ধ হচ্ছে না৷ বাস্তবতা হচ্ছে, বাল্যবিবাহের এক নম্বর কারণ দারিদ্র্য। আর দুই নম্বর কারণ হচ্ছে অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব ও নারীদের সামাজিক নিরাপত্তার অভাব। শুধু যে দরিদ্র বা অল্প শিক্ষিত পরিবারে বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটে, তা নয়৷ এমনকি শহরে অনেক শিক্ষিত পরিবারেও বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটে৷ অনেক সময় দেখা যায়, অভিভাবকেরা পাত্রের হাতে কন্যাদান করতে পারলেই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে৷ সুতরাং আমি মনে করি, বাল্যবিবাহ দূর করতে হলে দারিদ্র্যতার মতো কঠিন সমস্যাগুলো আগে দূর করতে হবে।''
আপনার সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত মি. রহমান, যে দারিদ্র বাল্যবিবাহের অন্যতম কারণ। তবে দারিদ্র দূর করা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার এবং এই সময়ে বাল্যবিবাহকে মেনে নেয়া ঠিক হবে বলে আমার মনে হয় না। দারিদ্রর কথা মাথায় রেখেই আইন কিছুটা শিথিল করা হয়েছে, যাতে বাবা-মা এবং আদালতের সম্মতিক্রমে ১৫ বছরের মেয়েকে বিয়ে দেয়া যায়। আইনের এই সংশোধন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ এর ফলে অনেক পরিবার আইনগত ভাবেই তাদের নাবালিকা সন্তানকে বিয়ে দিয়ে দিতে পারছে। বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে শুধু দারিদ্র দূর হবার জন্য অপেক্ষা করলেই হবে না, আইনের কঠোর প্রয়োগেরও প্রয়োজন হবে বলে আমার মনে হয়।
করোনাভাইরাস পরীক্ষা আর এইচএসসি পরীক্ষার সাথে কোন সম্পর্ক আছে কি? থাকার তো কথা না, কিন্তু সেটাই খুঁজে পেয়েছেন মুহাম্মদ শামিমুল হক মামুন, যিনি সন্দ্বীপের ওসমানীয়া থেকে লিখেছেন:
''আপনারা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক কোভিড হাসপাতাল হিসাবে অনুমোদিত রিজেন্ট হাসপাতালের দুর্নীতি নিয়ে ব্যাপক প্রতিবেদন প্রচার করেছেন। সবচেয়ে বেশি অপরাধ ছিলো কোন রকম পরীক্ষা ছাড়া এ হাসপাতাল থেকে করোনা সার্টিফিকেট দেওয়া হতো। এ অপরাধের জন্য হাসপাতালের মালিক বর্তমানে কারাগারে আছেন। আমার কথা হচ্ছে চলতি ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও পাশের সার্টিফিকেট দেওয়াটা শিক্ষা বোর্ডের অপরাধ হবে কিনা? বা সীমিত পরিসরে হলেও স্বাস্থ্য বিধি মেনে পরীক্ষা নিয়ে পাশের সার্টিফিকেট দেওয়া উচিত ছিল কিনা?''
স্বীকার করতেই হবে মি. হক, বিষয়টা নিয়ে আমি এভাবে ভাবি নি! পরীক্ষা ছাড়া গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট নিলে সেটা জালিয়াতি হিসেবেই গণ্য হবে নিশ্চয়ই। তবে এইচএসসি পাসের বিষয়টি যেহেতু আগের দুটি পরীক্ষা, অর্থাৎ এসএসসি এবং জেএসসি ফলাফলের ওপর নির্ভর করবে, তাই হয়তো ব্যাপারটা জালিয়াতি হিসেবে দেখা হবে না। তবে হ্যাঁ, পরীক্ষা একটা নেয়া প্রয়োজন ছিল, বিশেষ করে তাদের জন্য যারা এসএসসিতে ভাল করেননি কিন্তু এইচএসসিতে ভাল করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
এবার নিজেদের কথায় আসি। বিবিসি বাংলার ৭৯তম বার্ষিকী উপলক্ষে লিখেছেন বাগেরহাটের ফকিরহাট থেকে তন্ময় কুমার পাল:
''বিবিসি বাংলা যাত্রা শুরু করে ১৯৪১ সালের ১১ই অক্টোবর। এই দীর্ঘ সময় বিবিসি বাংলা যে জনপ্রিয়তার সাথে নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে সংবাদ পরিবেশন করে আসছে, তাতে আমার কোন সন্দেহ নেই। এই দীর্ঘ সময়ে বিবিসি বাংলাকে সংবাদ পরিবেশন বা রেকর্ডিং এর ক্ষেত্রে কখনো কোনো সুবিধা অসুবিধার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে কিনা? এবং সে সম্পর্কে কোনো ঘটনা শেয়ার করলে খুশি হবো।''
এই দীর্ঘ সময়ে তো অবশ্যই অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়েছে মি.পাল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিবিসি নিষিদ্ধ ছিল, বিবিসি শোনাই ছিল একটি অপরাধ। আবার ১৯৮৭ সালে এরশাদ-বিরোধী আন্দোলনের সময় বিবিসিকে নিষিদ্ধ করা হয়, বিবিসির একজন বিদেশী সংবাদদাতাকে বহিষ্কার করা হয় এবং স্থানীয় সংবাদদাতা আতাউস সামাদকে গ্রেফতার করা হয়। গত তিন দশকে বিভিন্ন ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাদের - যেমন ২০০৬ সালে আমাদের টেলিভিশন অনুষ্ঠান 'বাংলাদেশ সংলাপ' বন্ধ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল, তবে তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী শামসুল হকের সাথে আলোচনার মাধ্যমে বড় রকমের কোন ঝামেলা এড়ানো গেছে। পরবর্তীতেও বিভিন্ন রকমের চাপ এসেছে, এমনকি ব্যক্তিগত পর্যায়ে মানসিক চাপও সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানের প্রায় শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। শেষ করবো বিবিসি বাংলা নিয়ে আরেকটি চিঠি দিয়ে, লিখেছেন পটুয়াখালীর গলাচিপা থেকে সুভাষ ভূঁইয়া:
''ষাট বছরের অভিজ্ঞতায় আজও বিবিসি মানে নিরপেক্ষ এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। চোখ বুজলেই সামনে এসে দাঁড়ায় আজও,সেই একাত্তর, পঁচাত্তর, নিষ্ঠুরতা, বর্বরতা। আজও ঘুমের ঘোরে শুনতে পাই যেন মার্ক টালির সেই যুদ্ধক্ষেত্রের বর্ণনা। আজো বগল দাবা করে বয়ে বেড়াই ছোট্ট সেই বাক্সটা। এটি আমার জীবনের পাঠশালা,মনের লাইব্রেরি, অফুরন্ত জ্ঞান ভাণ্ডার,সবার জন্য উন্মুক্ত শিক্ষাঙ্গন। সবশেষে বলি,বাংলা ভাষাকে এমন শ্রবণ শৈলী করে উপস্থাপনা করার নিদর্শন আর কার কাছে পাই?বাঙালির গর্ব বাঙালির অহংকার চির অম্লান থাক, এই শুভ কামনায়।''
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ মি. ভূঁইয়া। বিবিসি বাংলাকে আপনি আপনার জীবনের পাঠশালা হিসেবে বর্ণনা করেছেন, এর চেয়ে বড় প্রশংসা আর কী হতে পারে? আপনার জন্য বিবিসি বাংলার সকলের শুভ কামনা রইল।
এবারে কিছু চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করা যাক:
দীপক চক্রবর্তী, দেবীগঞ্জ, পঞ্চগড়।
শোভন আচার্য, সিলেট সদর।
মোহাম্মদ ফাতিউর রহমান রাকিব, দূর্গাপুর, রাজশাহী।
শাহিন তালুকদার, মৌকরন, পটুয়াখালী।
মশিউর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
অণুতম বণিক, জেনারেল হাসপাতাল, নারায়ণগঞ্জ।
মোহাম্মদ আবদুল্লা আল মামুন, বদরগঞ্জ, রংপুর।
দেলোয়ার হোসাইন জুয়েল, মনোহরগঞ্জ, কুমিল্লা।
মোহাম্মদ আব্দুল মাতিন, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ।
শামীম উদ্দিন শ্যামল, ধানমন্ডি, ঢাকা।
মোহাম্মদ লিয়াকত আলী, রংপুর সদর।
মোহাম্মদ মোবারক হুসাইন, মাতুয়াইল যাত্রাবাড়ী।