করোনাভাইরাস: কর্মহীনদের কাজের আওতায় আনা বড় চ্যালেঞ্জ
করোনাভাইরাস সংক্রমণ মানুষের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি কর্মসংস্থান খাতেও বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন বছরে সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে কর্মহীন এই মানুষগুলোকে কাজের আওতায় আনা।
ঢাকার বিভিন্ন ফিল্ম এবং নাটক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ফ্রিল্যান্স লাইটম্যান হিসেবে কাজ করতেন মামুন। এখানে আমরা তার ভিন্ন নাম ব্যবহার করছি। এই লাইটগুলোর ভাড়া ও সেট আপের খরচ তার মূল আয়ের উৎস।
কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর নতুন করে নাটক, শর্ট ফিল্ম নির্মাণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার মতো এই খাত সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনেকেই বাধ্য হন শহর ছেড়ে গ্রামে পাড়ি জমাতে।
"এমনও দিন গেছে দিনে ১৫ হাজার, ২০ হাজার টাকার কাজ করেছি। আমার লাইফস্টাইল ওইরকমই ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস আসার পর কোন কাজ নাই। কতদিন আর জমানো টাকা খাওয়া যায়। বাড়িভাড়া দিতে পারছিলাম না। পরে গ্রামের বাড়িতে চলে যাই।"
নতুন বছর এলেও পরিস্থিতি আগের রূপে ফিরে যাওয়া নিয়ে শঙ্কা কাটছে না তার।
আবার ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে একদিনের নোটিশে চাকরি হারানোর অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ব্যক্তি।
সারাদিনের কাজ শেষে বিকেলে প্রতিষ্ঠানটির মানবসম্পদ বিভাগ থেকে জানিয়ে দেয়া হয় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে কর্মী ছাটাই করতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
মহামারীর মধ্যে হঠাৎ কাজ হারিয়ে দিশেহারা এই মানুষগুলো।
"এখন অনেক অফিস করোনাভাইরাসকে অজুহাত দেখিয়ে লোক ছাটাই করে দিচ্ছে। জব মার্কেটের যেই অবস্থা। নতুন চাকরি কবে পাব। এতদিন কিভাবে চলবো। টাকা হয়তো ম্যানেজ হবে। কিন্তু চাকরি তো আমার একটা পরিচয়, স্ট্যাটাস। সেটা তো হারালাম।"
আরও পড়তে পারেন:
করোনাভাইরাসের কারণে চাকরি হারাচ্ছেন অনেক কর্মী
চাকরির জন্য যেসব দক্ষতায় পিছিয়ে তরুণরা
চাকরিতে কোটা নিয়ে এত ক্ষোভের কারণ কী?
চাকরি প্রত্যাশীদের সামনে যে ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস সংকটের কারণে বাংলাদেশে প্রতি চারজন যুবকের মধ্যে একজন কর্মহীন বা বেকার হয়ে পড়েছেন।
আনুষ্ঠানিক খাতে চাকরি করেন এমন ১৩ ভাগ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। চাকরি আছে কিন্তু বেতন নেই এমন মানুষের সংখ্যা আরও বেশি। আর ২৫ ভাগ চাকরিজীবীর বেতন কমে গেছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিআইডিএস-এর এক গবেষণায় এসব তথ্য জানা গেছে।
নতুন চাকরির সন্ধান যারা করছেন এবং নতুন উদ্যোক্তারাও এই করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি বলছে, করোনাভাইরাসের কারণে কাজ হারিয়ে এক কোটি ৬৪ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্রসীমার নিচে নেমে গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে কর্মসংস্থান খাতকে আগের রূপে ফেরাতে কয়েক ধাপে কর্ম পরিকল্পনা হাতে নেয়ার কথা জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
"স্বল্প আয়ের কর্মহারা মানুষ, দিনমজুর তাদের জন্য সরকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় তাদেরকে সামান্য কিছু টাকা মাসে একবার দেয়া হয়। এই সংখ্যাটা বাড়াবো। এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ও কৃষি খাতে যেখানে অনানুষ্ঠানিক শ্রমিকরা কাজ করে তাদের আর্থিক সহায়তা এই বছর বাড়ানো হবে।"
এছাড়া বাজারে করোনাভাইরাসের টিকা চলে আসায় বাজার পরিস্থিতি চলতি বছরের শেষ নাগাদ স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে তিনি আশা করছেন।
নতুন বছরে সরকারের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্যমান ব্যবসা ও চাকরির খাতগুলো টিকিয়ে রাখা এবং নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করা।
এক্ষেত্রে সরকার বিভিন্ন খাতে যে প্রণোদনা দিয়েছে সেটা দ্রুত বাস্তবায়নের করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ নাজনিন আহমেদ।
নগরের অতি দারিদ্র মানুষগুলোর জন্য সাময়িক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি এবং সরকারের বড় বড় প্রকল্পগুলো অব্যাহত রাখলে কর্মহীন এই মানুষগুলোকে অর্থনীতিতে সম্পৃক্ত করা যাবে বলে তিনি জানান।
এছাড়া ওষুধ শিল্প ও অনলাইনে ব্যবসার মতো নতুন সম্ভাবনাময় খাতে ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিও জরুরি বলে মনে করছেন নাজনীন আহমেদ।
করোনাভাইরাস মহামারীর সময়ে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ কর্মহীন হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে সরকার বিভিন্ন খাতের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। কিন্তু এখনও বেশিরভাগ প্রণোদনা প্যাকেজ ব্যাংক থেকে ছাড় পায়নি।