একদশক পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে চলেছেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু
দীর্ঘ কয়েক বছর প্রধানমন্ত্রী থাকার পর এবার পদ থেকে সরে যাচ্ছেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
দীর্ঘ কয়েক বছর প্রধানমন্ত্রী থাকার পর এবার পদ থেকে সরে যাচ্ছেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী জানালেন, এবার সরকার গঠন করতে পারছেন না তিনি। কোনও দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় দুই দফা নির্বাচন হয় সেদেশে। তবে দ্বিতীয় দফাতেও সংখ্যাগড়িষ্ঠতা না পাওয়ায় দেশটির প্রেসিডেন্ট নেতানিয়াহুকে অন্য দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা করে সরকার গঠনের জন্য সময় বেঁধে দেন। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জোট গড়তে ব্যর্থ হওয়ায় সরকার গঠন করা থেকে সরে দাঁড়ালেন তিনি। নেতানিয়াহু পিছু হটায় সরকার গঠনের সুযোগ চলে যাচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের হাতে। আজ আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে সরকার গঠন করতে পারছেন না বলে জানিয়ে দেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
গত ৯ এপ্রিল ইসরায়েলে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে নেতানিয়াহুর দলসহ কোনও দল সরকার গঠনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ফলে দ্বিতীয় দফায় ১৭ সেপ্টেম্বর সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। এর আগে প্রায় এক দশক ক্ষমতায় ছিলেন নেতানিয়াহু । তবে গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে তাঁর দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। তাঁর প্রতিপক্ষ বেনি গান্টজের ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট দলকে এখন সরকার গঠন করতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট রিউভেন রিভলিন। এদিকে বেনি গান্টজের দলকে নিয়েও ঐক্যের সরকার গঠনে নেতানিয়াহু চেষ্টা করেছিলেন। তবে গান্টজের দল তাতে রাজি হয়নি। ঘোষণায় নেতানিয়াহু বলেছেন, যৌথ সরকার গঠনে তিনি বারবার চেষ্টা করলেও পারেননি।
ইসরায়েলের ইতিহাসে এই প্রথম এক বছরে দুবার সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের ঘটনা ঘটে। পার্লামেন্টের ১২০টি আসনে ৩১টি রাজনৈতিক দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। দুবারই নেতানিয়াহুর ডানপন্থী লিকুদ পার্টির সঙ্গে বেনি গান্টজের মধ্যপন্থী ব্লু অ্যান্ড হোয়াইটের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। এপ্রিলের ভোটে নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি ৩৬টি আসন পেয়েছিল। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বেনি গান্টজের ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট পেয়েছিল ৩৫টি আসন। সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে লিকুদ পার্টি ৩২ এবং ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট পার্টি ৩৩টি আসন পায়। নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্ট রিভলিন জোট সরকার গঠনের প্রথম সুযোগটি নেতানিয়াহুকে দিয়েছিলেন। ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট প্রধান দুটি দল লিকুদ এবং ব্লু অ্যান্ড হোয়াইটকে ঐক্যের সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। এতে গান্টজ ডি ফ্যাক্টো প্রধানমন্ত্রী থাকতেন, আর নেতানিয়াহু শুধু নামে প্রধানমন্ত্রী থাকতেন।
প্রেসিডেন্ট রিউভেন রিভলিন বলেন, সরকার গঠনে একইভাবে সমঝোতার চেষ্টা করতে তিনি গান্টজকে ২৮ দিন সময় দেবেন। তিনি আবারও নির্বাচন হওয়ার বিষয়টি এড়াতে চাইছেন। কারণ ইতিমধ্যে দুই দফায় নির্বাচন হয়েছে। যদি গান্টজও সরকার গঠনে ব্যর্থ হন, তাহলে তিনি আরেকটি নির্বাচন এড়াতে তৃতীয় কোনও প্রার্থীকে সামনে নিয়ে আসবেন। ইসরায়েলে যে দল জয় পায়, সাধারণত সেই দল থেকেই প্রধানমন্ত্রী হন। তবে প্রধানমন্ত্রী অন্য কোনো দল থেকে করারও বিধান রয়েছে।
ইসরায়েলি আরব এমপিরা গান্টজকে তাঁদের সমর্থন দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। এরপরও সংখ্যাগড়িষ্ঠতায় পৌঁছাতে বেশ কয়েকটি আসনের ঘাটতি রয়েছে গান্টজের দলের। ইসরায়েলে সরকার গঠনে পার্লামেন্ট কমপক্ষে ৬১টি আসন পেতে হয়।
প্রসঙ্গত, গান্টজ ইসরায়েলের প্রাক্তন সেনাপ্রধান। নেতানিয়াহু প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি সেনাপ্রধানের পদে আসীন হন। 'ইসরায়েল পথ হারিয়েছে' দাবি করে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি নতুন দল গঠন করেন। গান্টজের চেয়ে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। তবে দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে ঘুষ, প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে।