এসএ গেমসে বাংলাদেশের বাধা ও সম্ভাবনার জায়গা
নেপালে রবিবার শুরু হওয়া এসএ গেমস অ্যাথলেটিক্সে বাংলাদেশের জন্য পদক পাওয়ার অন্যতম একটি ক্ষেত্র। ২০২০ টোকিও অলিম্পিক্সকে সামনে রেখে নিজেদের প্রমাণের একটি মঞ্চও। প্রস্তুতি কেমন বাংলাদেশের অ্যাথলিটদের?
রবিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ান গেমস, যেটি এসএ গেমস নামে পরিচিত। প্রায় দশদিন নেপালের কাঠমুন্ডু ও পোখারায় চলবে দক্ষিণ এশিয়ার অ্যাথেলেটিক্সের এই আসর।
এই আসরে বাংলাদেশ সর্বশেষ ২০১০ সালে সাফল্য পেয়েছিল বড় পরিসরে, এরপর স্বর্ণপদক এলেও সামগ্রিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে এই দেশের অ্যাথলিটরা।
এবার বাংলাদেশের অ্যাথলিটদের প্রস্তুতি কেমন?
ভারোত্তোলনে বাংলাদেশের সেরা একজন খেলোয়াড় মাবিয়া আক্তার সীমান্ত বলছেন, "প্রস্তুতি নিয়ে সন্তুষ্ট না ব্যাপারটা এমন না, আমাদের যে কোচ তিনি বাংলাদেশের সেরা কোচ।"
মিজ সীমান্ত ২০১৬ এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ী বাংলাদেশি ভারোত্তোলক।
- এসএ গেমসে বাংলাদেশের জন্যে প্রথম সোনা এনে দিয়েছেন মাবিয়া
- স্বর্ণপদক জিতেও কেন এত কাঁদছিলেন মাবিয়া?
- অলিম্পিকে কেন পদক পাচ্ছে না বাংলাদেশ?
কিন্তু সীমান্তদের সাথে কথা বলে যেটা জানা গেলো যে তার চাওয়া পাওয়া পূরণ করা হয়নি সাফল্য এনে দেওয়ার পরেও।
"একটা স্টোর রুমের অনুশীলন করে পদকের আশা করা কঠিন, আমি বিগত চার বছর একটা জিনিস চেয়েছি সেটা আন্তর্জাতিক জিমনেসিয়াম ও সরঞ্জাম, এখানে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করা কঠিন, এখানে এয়ার কন্ডিশনও নেই।"
ঢাকার নয়া পল্টনে একটি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পুরাতন ভবনে অনুশীলন করেন মাবিয়া আক্তার সীমান্ত-সহ বাকি ভারোত্তোলকরা।
সেখানে গিয়ে দেখা যায় মোট ২২ জন ভারোত্তোলক প্রস্তুতি নেন আসন্ন দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের জন্য, অপ্রতুল জায়গার কারণে একজন যখন অনুশীলন করেন তখন অন্যদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয় বা একটু দূরে সরে যেতে হয়।
নারী ও পুরুষ বিভাগে মোট ১৪ জন ভারোত্তোলক দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে অংশ নেবেন।
"পদক পাওয়ার ব্যাপারটা অনুশীলনের সুযোগ সুবিধার ওপর নির্ভর করে, পরিকল্পনা শুরু হয়েছে অনেক আগে।"
মাবিয়া আক্তার সীমান্ত প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছেন ভারতের ভারোত্তোলকদের, যারা চার-পাঁচ বছর ধরে টানা অনুশীলন করছেন।
এ কারণেই সীমান্ত মনে করেন বাংলাদেশের ভারোত্তোলকদের জন্য পদক পাওয়া কঠিন হবে।
বাংলাদেশের জন্য দক্ষিণ এশিয়ান গেমস অনেক বড় ইভেন্ট বলেন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব শাহেদ রেজা।
তার মতে, অলিম্পিক বা এশিয়ান গেমসের চেয়ে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের সুযোগ বেশি থাকে।
ব্যাক্তিগত ইভেন্টগুলোর দিকে বাড়তি নজর দেয়ার কথা বলেছেন তিনি।
শাহেদ রেজা বলেন, বেশ কিছু ইভেন্ট যেমন কারাটে, আর্চারি এসব খেলাতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা এবার অনেক বেশি।
আনুষ্ঠানিকভাবে পয়লা ডিসেম্বর শুরু হলেও কিছু ডিসিপ্লিনে আগেই খেলা শুরু হয়ে গেছে।
২০১০ থেকে ২০১৯: পরিস্থিতি কতটা বদলেছে
২০১০ সালে যে দক্ষিণ এশিয়ান গেমস আয়োজিত হয়েছিল ঢাকায়, সেবার বাংলাদেশ নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স দেখায়।
১৮টি স্বর্ণ পদক, ২৪টি রৌপ্য পদক ও ৫৫টি তাম্র পদক পায় বাংলাদেশ।
কিন্তু এরপর ২০১৬ সালে পদক সংখ্যা অনেক কমে আসে।
বিগত দিনগুলোতে অ্যাথলেটিক্স ইভেন্টে বাংলাদেশের পদক নেই বললেই চলে।
সাতাঁর, ভারোত্তোলন, আর্চারি ও শ্যুটিংয়ে বাংলাদেশ পদক পাচ্ছে।
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সাথে দীর্ঘদিন ধরে থাকা একজন কোচ ও ক্রীড়া বিশ্লেষক ডালিয়া আক্তার, তিনি বলেন, "২০১০ সালে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রস্তুতি নেয়া হয়, ২০১৬ সালের যে প্রতিযোগিতা সেটার আগে সময় নেয় পাঁচ থেকে ছয় মাসের প্রস্তুতি।"
২০১৯ এ এসে সেটা আরো কমে গেছে বলে জানান ডালিয়া আক্তার।
সাফ গেমসে একটা ভালো ফল পাওয়ার জন্য এই সময়কাল খুব বেশি নয়।
"কিন্তু এটা প্রস্তুতি নির্ভর হওয়া উচিত না, সাফ গেমসের ক্যাম্প আলাদা একটা ব্যাপার, এর আগে ও পরে যেটা হওয়া উচিত সেটা হলো ঘরোয়া টুর্নামেন্ট, আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট, পেশাদার খেলা কিন্তু এসবেরই অভাব।"
টিম ইভেন্টের চেয়ে ব্যক্তি কেন্দ্রিক যে ইভেন্টগুলো সেগুলো নানা জায়গায় যেখানে এটা ভালো খেলা হয় সেখানে গিয়ে খেলার কথা বলেন মিজ ডালিয়া।
যদি ম্যাচ খেলা হয় এশিয়ান লেভেলে সেক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় ভালো করা সম্ভব।
বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন:
মোবাইল অ্যাপ কীভাবে ধান ক্রয়ে দুর্নীতি ঠেকাবে
হংকং-এর বিক্ষোভকারীদের সমর্থনে ট্রাম্পের আইন পাশ
'শক্ত মেয়েদেরও আমি টেবিলে বসে কাঁদতে দেখেছি’