For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

মুক্তিযুদ্ধ: ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা কারা ও কেন করেছিলেন?

  • By Bbc Bengali

১৯৭১ সালে হত্যাকাণ্ডের শিকার বুদ্ধিজীবীদের কয়েকজন।
BBC
১৯৭১ সালে হত্যাকাণ্ডের শিকার বুদ্ধিজীবীদের কয়েকজন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পুরো নয় মাস ধরে যে বুদ্ধিজীবীদের ধরে ধরে হত্যা করা হচ্ছিল, ধারণা করা হয় তার মূল পরিকল্পনা করেছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ একজন কর্মকর্তা রাও ফরমান আলী।

যদিও পরবর্তীতে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন তিনি। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হবার পর রাও ফরমান আলীর একটি ডায়েরি পাওয়া গিয়েছিল, যেখানে বাংলাদেশের অনেক বুদ্ধিজীবীর নাম ছিল।

বাংলাদেশের প্রখ্যাত একজন ইতিহাসবিদের বক্তব্য, বুদ্ধিজীবীদের ধরে ধরে হত্যা করার জন্য রীতিমত নির্দেশনা দিয়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক কমাণ্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজি।

অবশ্য ইতিহাসবিদ ও গবেষকরা এও বলছেন যে, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে তেমন কোন গবেষণা হয়নি, ফলে এসব তথ্য সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হওয়া যায় না।

যুদ্ধের পুরো নয় মাস ধরে বুদ্ধিজীবীদের ধরে ধরে হত্যা করা হলেও ষোলই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বিজয় দিবসের দিনকয়েক আগে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ও তার সহযোগীদের শেষ আঘাতটি ছিল বাঙালী বুদ্ধিজীবীদের তালিকা ধরে ধরে হত্যাকাণ্ড।

যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন তাদের তালিকায় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী এবং সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা। হত্যাকাণ্ডে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করেছিল আলবদর বাহিনী।

১৪ই ডিসেম্বর রাতে একযোগে বহু বুদ্ধিজীবীকে তাদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়।

বাংলাপিডিয়ার হিসাব বলছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় ১ হাজার ১১১ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল ঢাকায়। ১৪৯ জন।

ইতিহাসবিদরা বলছেন, সংখ্যার দিক থেকে বিবেচনা না করে যদি জনসংখ্যা আর মৃত্যুর হার হিসেবে হিসাব করা হয় তাহলে ঢাকার বাইরে জেলাগুলোতে অন্যান্য আরও বেশি সংখ্যক বুদ্ধিজীবী মারা গেছেন কিন্তু তাদেরকে আসলে সেভাবে স্মরণ করা হয় না।

রায়ের বাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি সৌধ প্রাঙ্গণ
Getty Images
রায়ের বাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি সৌধ প্রাঙ্গণ

রাও ফরমানের ডায়েরি

বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী, আল-বদর বাহিনী জড়িত থাকলেও পরিকল্পনাটি কে, কখন কীভাবে করেছে, সেটা এখনো গবেষকদের কাছে পরিষ্কার নয়।

লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ''পরিকল্পনা ঠিক কী করে করেছে, সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। ২৫শে মার্চ রাত থেকে ১৪ই ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষক, সাংবাদিক, শিল্পী- সারা দেশের শহরে এবং গ্রামে তাদের হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।''

''কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, এটা নিয়ে তেমন গভীর কোন অনুসন্ধান হয়নি,'' বলছেন মি. আহমেদ।

ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বলছেন, আল-বদর বাহিনী হওয়ার আগেই বিভিন্ন জায়গায় বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংঘ পুরোপুরি আল-বদরে রূপান্তরিত হয়। তাদের ওপর সুনির্দিষ্টভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার দায়িত্ব দেয়া হয়। ঢাকা শহরে আল-বদররাই মাইক্রোবাসে করে সবাইকে ধরে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে।

মুক্তিযুদ্ধ গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের মূল নকশা রাও ফরমান আলী করেছেন বলে ধরে নেয়া হয়।

ঢাকার পতনের পর গভর্ণর হাউজ, যেটি এখন বঙ্গভবন নামে পরিচিত, সেখান থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তা রাও ফরমান আলীর একটি ডায়রি পাওয়া যায়। সেখানে অনেক নিহত ও নিখোঁজ বুদ্ধিজীবীর নাম লেখা।

তবে মি. মামুন বলছেন, পরবর্তীতে তাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রাও ফরমান আলী।

মুনতাসির মামুন যে সাক্ষাৎকারের বরাত দিচ্ছিলেন, রাও ফরমান আলীর সেই সাক্ষাৎকারটি তিনি ও মহিউদ্দিন আহমেদ যৌথভাবে গ্রহন করেছিলেন ১৯৮৯ সালে, পাকিস্তানে গিয়ে। এই সাক্ষাৎকারের বিবরণ পরবর্তীতে ছাপা হয়েছে 'সেই সব পাকিস্তানী' নামে একটি বইতে।

বইতে তিনি লিখেছেন, তিনি রাও ফরমান আলীকে জিজ্ঞাসা করছেন, 'ঢাকার পতনের পর গভর্নর হাউসে আপনার একটি ডায়েরি পাওয়া গেছে সেখানে নিহত বুদ্ধিজীবীদের একটি তালিকা ছিল।'

জবাবে রাও ফরমান আলী বলছেন, 'কাউকে হত্যা করতে হলে কি আমি এভাবে তালিকা সংরক্ষণ করব? অনেকে আমার কাছে এসে অনেকের নামে অভিযোগ করত। যেমন তিনি এটা করছেন, ওকে সাহায্য করছেন। আমি তাদের নাম টুকে রাখতাম, এর সঙ্গে ঐ হত্যার কোনো সম্পর্ক নেই।'

'তার মানে দাঁড়ালো, আপনি বুদ্ধিজীবী হত্যা সম্পর্কে জানেন না, বাংলাদেশের গণহত্যা সম্পর্কে জানেন না…', ফের প্রশ্ন করেন মুনতাসীর মামুন।

কথাটা শেষ করতে দিলেন না ফরমান। বললেন, 'গণহত্যা, গণহত্যা হয়নি।'

'পৃথিবীর সমস্ত সংবাদপত্রে লিখেছে গণহত্যা হয়েছে,' আবার বলেন মুনতাসির মামুন।

রাও ফরমান আলী জবাব দেন, 'না ঠিক নয়।'

''কিন্তু তিনি যে কোন না কোনভাবে এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, সেটা পরবর্তীকালে কিছু কিছু কাগজপত্রে প্রমাণ হয়ে যায়। তবে আমি মনে করি, পুরো সামরিক জান্তা এর সঙ্গে জড়িত ছিল,'' বিবিসিকে বলছেন মুনতাসীর মামুন।

নিয়াজির 'নীলনকশা'

মুনতাসির মামুন আরো বলছেন, পাকিস্তানি ব্যবসায়ী আবদুল লতিফ বাওয়ানির বাসা থেকে মুক্তিযুদ্ধের পর কিছু নথি পাওয়া যায়, যাতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজীর নির্দেশনা পাওয়া যায়।

এটাকে 'নিয়াজির নীলনকশা' বলে বর্ণনা করছেন মি. মামুন।

ওই নির্দেশনার মধ্যে বাঙ্গালি কোন কর্মকর্তাকে কোন পদে না রাখার পরিকল্পনা ছিল। এই পরিকল্পনার সঙ্গে তখনকার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা সবাই জড়িত ছিলেন, বিবিসিকে বলেন মি. মামুন।

২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, সাংবাদিক এবং ডাক্তারদের হত্যাকাণ্ডের জন্য চৌধুরী মুঈনুদ্দীন এবং আশরাফুজ্জামান খানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত।

সেই সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সমন্বয়ক এবং অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম. কে রহমান আদালতকে উদ্ধৃত করে বলেছেন, চৌধুরী মুঈনুদ্দীন এবং আশরাফুজ্জামান খানের নির্দেশনায় এবং সম্পৃক্ততায় ১৯৭১ সালে যে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড হয়েছে।

তাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে দাখিলকৃত অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরে বাংলাদেশের যুদ্ধের শেষের দিকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সহযোগী সংগঠন আল বদর বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। মি. মুঈনুদ্দীন বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের ঘটনার অপারেশন ইন-চার্জ এবং মি. আশরাফ ছিলেন চিফ এক্সিকিউটর।

মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন, "ঢাকায় বা বড় কয়েকটি শহরগুলোয় অবাঙ্গালীরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী হিসাবে এই ধরনের কাজ করেছে। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে বাঙ্গালি রাজাকার, মুসলিম লীগাররা সেনাবাহিনী নিয়ে এসে লোকজনকে চিনিয়ে দিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের পরামর্শ দিয়েছে"।

কেন এই হত্যাকাণ্ড?

একাত্তরের ২৫শে নভেম্বর রাজশাহী শহরের বাসা থেকে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মীর আব্দুল কাইয়ুমকে তুলে নিয়ে যায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। শিক্ষক মি. কাইয়ুমকে যখন তুলে নেয়া হয় তখন রাত আনুমানিক নয়টা।

রাত নয়টার দিকে এক ব্যক্তি মি. কাইয়ুমের বাসা গিয়ে জানান যে, তাকে বাইরে একজন আর্মি অফিসার ডাকছে।

মি. কাইয়ুম ওই আর্মি অফিসারের সাথে দেখা করার জন্য বাসা থেকে বেরিয়ে আর কখনো ফিরে আসেননি।

বাংলাদেশ স্বাধীন হবার দুইদিন পরে রাজশাহীর শহরের কাছে পদ্মার চরে একটি গণকবরে শিক্ষক মীর আব্দুল কাইয়ুমের মরদেহ পাওয়া যায়।

মুক্তিযুদ্ধ গবেষকরা বলছেন, ২৫শে মার্চের পর থেকেই আসলে সারা বাংলাদেশজুড়ে বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার আর হত্যা শুরু হয়েছিল। কিন্তু নভেম্বর মাস থেকে সেই কর্মকাণ্ড আরও জোরদার করে পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের সহযোগীরা।

ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ''বুদ্ধিজীবীদের হত্যার বিষয়টি ছিল পুরো পরিকল্পিত আর এটা শুরু হয়েছিল সেই ২৫শে মার্চ থেকেই। কারণ আমরা দেখি, প্রথম আক্রমণ কিন্তু হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর কারণ ছিল। সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে কিন্তু প্রথম দাঁড়িয়েছিল ছাত্র-শিক্ষকরা। সুতরাং সেই আইয়ুব খানের আমল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর সামরিক শাসকদের একটা ক্ষোভ ছিল। পরবর্তীতে সেটার আরও বিস্তার হয়েছে।''

''সামরিক জান্তা পরিকল্পনা করেছিল, দেশকে বুদ্ধিজীবীশূন্য করে দিলে বাংলাদেশ যদি কোন দিন স্বাধীন হলেও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। এই চিন্তা থেকেই তারা বেছে বেছে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করতে শুরু করেছিল,'' বলছেন মি. মামুন।

''সেই ৪৭ সাল থেকে রাজনীতিবিদরা মানুষকে একত্রিত করেছেন, কিন্তু মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা, প্রণোদনা দেয়া- সেটা কিন্তু বুদ্ধিজীবীরা করেছেন। ছাত্রদের বিবেচনায় নিলে ভাষা আন্দোলন, ছাত্র আন্দোলন থেকে সব ক্ষেত্রেই বুদ্ধিজীবীরা বড় একটি ভূমিকা পালন করেছেন,'' তিনি বলছেন।

লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন, তাদের মূল টার্গেট ছিল ছাত্ররা এবং শিক্ষাঙ্গনগুলো।

ইতিহাসবিদরা বলেন, পরাজয় নিশ্চিত জেনেই পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাদের বাংলাদেশী সহযোগীদের মাধ্যমে আল-বদর বাহিনী গঠন করে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে।

বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর:

ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য হওয়া একটি পরিবারের কাহিনী

ব্রিটেনের সমান যে অতিকায় হিমবাহটি ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হচ্ছে

কারা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মানতে বাধ্য, কেন দেয়া হয় এই শাস্তি

'ফাইভজি যুগে' ফোরজির এমন দশা কেন

English summary
Bangladesh 1971: Who planned to kill intellectuals
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X