আজারবাইজান-আর্মেনিয়া যুদ্ধ: ১০ ঘণ্টা আলোচনার পর সাময়িক যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত দুই দেশের
বিরোধপূর্ণ নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চলে সাময়িক যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সমঝোতা করেছে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান।
মস্কোতে ১০ ঘণ্টার আলোচনা শেষে স্থানীয় সময় রাত ৩ টার দিকে রুশ পররাষ্টমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এই ঘোষণা দেন।
তিনি জানান দুই দেশ এখন 'স্বতন্ত্রভাবে' আলোচনা করবে।
দীর্ঘসময় ধরে চলতে থাকা বিরোধের জের ধরে ২৭শে সেপ্টেম্বর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার পর থেকে তিনশ'র বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
মরদের উদ্ধার এবং বন্দী বিনিময়ের সুবিধার জন্য স্থানীয় সময় শনিবার দুপুর থেকে এই যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চলটি আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের বলে স্বীকৃত হলেও এটি পরিচালনা করে জাতিগত আর্মেনীয়রা।
এক সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত থাকা দুই দেশ সাম্প্রতিক সহিংসতার জন্য একে অপরকে দায়ী করে আসছিল। গত কয়েক দশকের মধ্যে এটিই দুই দেশের মধ্যে হওয়া সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাত।
আর্মেনিয়াতে রাশিয়ার একটি সেনা ঘাঁটি রয়েছে এবং দুই দেশই কালেক্টিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (সিএসটিও) সদস্য।
তবে আজারবাইজানের সাথেও মস্কোর সম্পর্ক ভালো।
আরো পড়তে পারেন:
আজারবাইজান-আর্মেনিয়া যুদ্ধ: নাগোর্নো-কারাবাখে গিয়ে যা দেখেছে বিবিসি
তুরস্ক কেন আজারবাইজানকে সমর্থন দিচ্ছে এবং তারা কতো দূর যেতে পারে?
আজারবাইজান-আর্মেনিয়া যুদ্ধ নিয়ে ইরানের উদ্বেগ কেন বাড়ছে?
আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার সংঘাত কি বৃহত্তর যুদ্ধে রূপ নিতে পারে?
আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান: কোন দেশের সামরিক শক্তি কেমন?
সবশেষ পরিস্থিতি কী?
শুক্রবার আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায় যে মস্কোতে আলোচনা চলতে থাকলেও সারাদিনই যুদ্ধ চলেছে।
বৃহস্পতিবার আজারবাইজানের বিরুদ্ধে আর্মেনিয়া অভিযোগ তুলেছিল যে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে নাগোর্নো-কারাবাখে একটি ঐতিহাসিক গির্জায় হামলা চালিয়েছে।
শুশা শহরের হোলি সেভিয়র ক্যাথেড্রালে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কিছু ছবিও প্রকাশিত হয়।
একই সময়ে আজারবাইজান জানায় যে তাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর গানজা ও গোরানবয় অঞ্চলে আর্মেনিয়ার সৈন্যরা শেল নিক্ষেপ করেছে।
ঐ ঘটনায় অন্তত একজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে আজারবাইজান।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকে বিবিসি'র সাথে কথা বলার সময় আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনইয়ান ঐ অঞ্চলে 'গণহত্যা' চলছে বলে সতর্ক করেন এবং দাবি করেন যে ঐ অঞ্চলটি 'আর্মেনিয়ানদের ভূমি।'
কর্তৃপক্ষ বলছে সংঘাতের কারণে নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চলের জনসংখ্যার অর্ধেক মানুষ - প্রায় ৭০ হাজার - ঘড়ছাড়া হয়েছে।
ঐ অঞ্চলের প্রধান শহর স্টেপানাকার্টে টানা কয়েকদিন ধরে শেল হামলা চলায় সেখানকার বাসিন্দাদের অনেককেই বাড়ির বেজমেন্টে আশ্রয় নিতে হয়েছে।
১৯৮৮ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত এই নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চলের দখলকে কেন্দ্র করে যুদ্ধে জড়িয়েছিল আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া, তবে শেষপর্যন্ত যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও বিরোধের সমাধান হয়নি কখনও।