For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

আয়মান আল জাওয়াহিরি: চোখের ডাক্তার থেকে যেভাবে শীর্ষ আল-কায়েদা নেতা

১৯৫১ সালের ১৯শে জুন মিশরের রাজধানী কায়রোর একটি সম্ভ্রান্ত মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারে আয়মান আল-জাওয়াহিরির জন্ম।

  • By Bbc Bengali

আয়মান আল জাওয়াহিরি
Getty Images
আয়মান আল জাওয়াহিরি

মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত আয়মান আল-জাওয়াহিরি ছিলেন আল-কায়েদার প্রধান মতাদর্শিক নেতা।

জাওয়াহিরি এক সময় ছিলেন চোখের ডাক্তার, যিনি পরবর্তীতে মিশরের জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদ প্রতিষ্ঠার জন্য সহায়তা করেন।

দুই হাজার এগার সালে পাকিস্তানের ভেতরে আমেরিকার হামলায় আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন নিহত হবার পরে আয়মান আল-জাওয়াহিরি আল-কায়েদার নেতৃত্ব নেন।

এর আগে জাওয়াহিরিকে মনে করা হতো ওসামা বিন লাদেনের ডান হাত। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ২০০১ সালে আমেরিকায় হামলার মূল বাস্তবায়নকারী ছিলেন আল-জাওয়াহিরি।

সে হামলার পরে আমেরিকা যে 'মোস্ট ওয়ান্টেড' তালিকা প্রকাশ করেছিল সেখানে ওসামা বিন লাদেনের পরেই জাওয়াহিরির নাম ছিল। তার মাথার মূল্য ঘোষণা করা হয়েছিল আড়াই কোটি ডলার।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাওয়াহিরি ছিলেন আল কায়েদার সবচেয়ে সুপরিচিত মুখপাত্র।

তিনি ১৬টি ভিডিও এবং অডিও বার্তা দিয়েছেন, যেটি ছিল ওসামা বিন লাদেনের চেয়ে চারগুণ বেশি।

এর মাধ্যমে তারা বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের চরমপন্থায় উদ্বুদ্ধ এবং তাদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করেছে।

এর আগেও আল-জাওয়াহিরিকে হত্যার জন্য আমেরিকা কয়েকবার হামলা চালিয়েছে।

দুই হাজার ছয় সালের জানুয়ারি মাসে আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে জাওয়াহিরিকে লক্ষ্য করে মিসাইল হামলা চালিয়েছিল আমেরিকা।

সে হামলায় আল-কায়েদার চারজন সদস্য নিহত হয়। এর দু-সপ্তাহ পরেই একটি ভিডিও বার্তায় জাওয়াহিরি আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে সতর্ক করে বলেন, তিনি কিংবা 'দুনিয়ার সব শক্তি' তার মৃত্যু এক সেকেন্ডও এগিয়ে আনতে পারবে না।

আল-কায়েদা নেতা আল-জাওয়াহিরি মার্কিন হামলায় নিহত

আল কায়েদার কথিত অডিও বার্তায় বাংলাদেশে জিহাদের ডাক

আয়মান আল-জাওয়াহিরি
Reuters
আয়মান আল-জাওয়াহিরি

সম্ভ্রান্ত পরিবার

উনিশশো একান্ন সালের ১৯শে জুন মিশরের রাজধানী কায়রোর একটি সম্ভ্রান্ত মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারে আয়মান আল-জাওয়াহিরির জন্ম। তাদের ছিল চিকিৎসক এবং শিক্ষাবিদের পরিবার।

তার দাদা রাবিয়া আল-জাওয়াহিরি ছিলেন কায়রোর আল-আজহারের গ্র্যান্ড ইমাম, যেটি মধ্যপ্রাচ্যের সুন্নি ইসলামিক শিক্ষার কেন্দ্র। তার একজন চাচা ছিলেন আরব লিগের প্রথম মহাসচিব।

স্কুলে পড়ার সময়ে আল-জাওয়াহিরি রাজনৈতিক ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত হন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে মিশরের নিষিদ্ধ মুসলিম সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হলেও সেটি তার পড়াশুনোর জন্য কোন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেনি। তিনি ১৯৭৪ সালে কায়রো ইউনিভার্সিটি মেডিকেল স্কুল থেকে স্নাতক এবং এর চার বছর পরে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

আল-জাওয়াহিরির বাবা মোহাম্মদ ছিলেন একই মেডিকেল স্কুলের ফার্মাকোলজির অধ্যাপক। তিনি ১৯৯৫ সালে মারা যান।

ওসামা বিন লাদেনের আল-কায়েদার অবস্থা এখন কী?

ভারতকে আঘাত হানতে আল-জাওয়াহিরির বার্তা

চরমপন্থী যুবক

পড়াশোনা শেষ করার পর আল-জাওয়াহিরি পরিবারের পথ অনুসরণ করছিলেন।

কায়রোর শহরের কাছেই একটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু খুব দ্রুত তিনি চরমপন্থী ইসলামিক গ্রুপগুলোর সাথে জড়িয়ে পড়েন, যারা মিশরের সরকারকে উৎখাতের ডাক দিয়েছিল।

উনিশশো তিয়াত্তর সালে যখন ইজিপশিয়ান ইসলামিক জিহাদ গঠন করা করা হয় তখন তিনি সেখানে যোগ দেন।

উনিশশো একাশি সালে ইসলামিক জিহাদের কিছু সদস্য সেনাবাহিনীর পোশাক পরিধান করে রাজধানী কায়রোতে একটি মিলিটারি প্যারেডে ঢুকে পড়ে। সে প্যারেডে প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতকে হত্যা করা হয়।

ওসামা বিন লাদেন এবং আয়মান আল জাওয়াহিরি
Reuters
ওসামা বিন লাদেন এবং আয়মান আল জাওয়াহিরি

এরপর সে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে কয়েকশ সদস্যের সাথে আল-জাওয়াহিরিকেও আটক করা হয়।

ইসরায়েলের সাথে একটি শান্তি চুক্তি করে প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত ইসলামপন্থীদের বেশ খেপিয়ে তুলেছিলেন। এজন্য তিনি সমালোচনাকারী শতশত ব্যক্তিকে আটকও করেন।

বিচারের সময় আল-জাওয়াহিরি অভিযুক্তদের নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। তখন আদালতে তাকে বলতে দেখা যায় - আমরা মুসলিম এবং আমাদের ধর্মে বিশ্বাস করি। আমরা একটি মুসলিম দেশ ও সমাজ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছি।

প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতকে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ থেকে আল-জাওয়াহিরিকে মুক্তি দেয়া হলেও অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে আদালত তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল।

কারাগারে থাকার সময় আল-জাওয়াহিরিকে প্রতিনিয়ত নির্যাতন করা হতো। এর ফলে ধর্মান্ধ এবং সহিংস জঙ্গিতে রূপান্তর ঘটে জাওয়াহিরির। এমনটাই বলছেন, তখন তার সাথে কারাগারে থাকা অন্য ইসলামপন্থী কয়েদিরা।

উনিশশো পঁচাশি সালে কারাগার থেকে মুক্তি পাবার পর তিনি সৌদি আরব চলে যান।

এর পরপরই তিনি পাকিস্তানের পেশোয়ারে চলে যান এবং সেখান থেকে আফগানিস্তান যান।

সেখানে গিয়ে তিনি ইজিপশিয়ান ইসলামিক জিহাদ-এর একটি অংশ প্রতিষ্ঠা করেন। আফগানিস্তানে যখন সোভিয়েত আগ্রাসন চলছিলেন তখন তিনি চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন।

উনিশশো তিরানব্বই সালে ইজিপশিয়ান ইসলামিক জিহাদ যখন পুনরায় আত্মপ্রকাশ করে তখন সেটি নেতৃত্ব নেন জাওয়াহিরি।

তখন মিশরের বিভিন্ন মন্ত্রীদের উপর হামলা চালায় সংগঠনটি। এর মধ্যে ছিল প্রধানমন্ত্রী আতিফ সিদকি।

এ সংগঠনটি মিশরের সরকারকে উৎখাত করার চেষ্টা চালায়। উনিশশো নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি ইসলামিক স্টেট প্রতিষ্ঠা করে। এ সময় মিশরজুড়ে তারা প্রায় বারো শ মানুষকে হত্যা করে।

উনিশশো সাতানব্বই সালে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট তাকে ইসলামিক জিহাদের একটি অংশ কনকোয়েস্ট গ্রুপের প্রধান নেতা হিসেবে চিহ্নিত করে।

এই গ্রুপটি মিশরে বিদেশি নাগরিকদের হত্যার জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়।

এর দুই বছর পরে জাওয়াহিরির অনুপস্থিতিতে মিশরের একটি সামরিক আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।

ওসামা বিন লাদেন
Getty Images
ওসামা বিন লাদেন

পশ্চিমা লক্ষ্যবস্তু

ধারণা করা হয়, ১৯৯০ এর দশকে জাওয়াহিরি নিরাপদ আশ্রয় এবং অর্থ জোগাড়ের জন্য বিশ্বজুড়ে ঘুরে বেরিয়েছেন।

আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত সৈন্য প্রত্যাহারের পরের বছরগুলোতে তিনি বুলগেরিয়া, ডেনমার্ক এবং সুইজারল্যান্ডে বসবাস করেছেন বলে মনে করা হয়।

কখনো কখনো ভুয়া পাসপোর্ট ব্যবহার করে বলকান অঞ্চল, অস্ট্রিয়া, ইয়েমেন, ইরাক, ইরান এবং ফিলিপিন্স ভ্রমণ করেছেন বলে মনে করা হয়।

উনিশশো ছিয়ানব্বই সালে তিনি রাশিয়ার গ্রেফতার হয়ে ছয়মাস কারাগারে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি ভিসা ছাড়া চেচনিয়া ভ্রমণ করেন।

উনিশশো সাতানব্বই সালে আল-জাওয়াহিরি আফগানিস্তানের জালালাবাদ শহরে যান। সেখানে ওসামা বিন লাদেনের ঘাঁটি ছিল।

এক বছর পরে ইজিপশিয়ান ইসলামিক জিহাদ এবং আল-কায়েদাসহ পাঁচটি ইসলামিক জঙ্গি সংগঠন মিলে ওয়ার্ল্ড ইসলামিক ফ্রন্ট গঠন করে। তারা ইহুদি এবং ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

মার্কিন নাগরিকদের হত্যার জন্য প্রথম ফতোয়া দেয় ইসলামিক ফ্রন্ট। এর ছয় মাস পরে কেনিয়া এবং তাঞ্জানিয়াতে মার্কিন দূতাবাসে হামলার ঘটনায় ২২৩ জন নিহত হয়।

স্যাটেলাইট টেলিফোনে জাওয়াহিরির কথোপোকথন থেকে জানা যায়, এসব হামলার সাথে ওসামা বিন-লাদেন জড়িত।

এ হামলার দুই সপ্তাহ পরে আফগানিস্তানে ইসলামিক ফ্রন্টের ট্রেনিং ক্যাম্পে বোমাবর্ষণ করে আমেরিকা।

এর পরের দিন পাকিস্তানের এক সাংবাদিককে ফোন করে জাওয়াহিরি বলেন, " আমেরিকাকে বলুন তাদের বোমা হামলা, তাদের হুমকি এবং তাদের আগ্রাসনে আমরা ভয় পাই না। যুদ্ধ সবে শুরু হয়েছে।"

English summary
Ayman al-Zawahiri: From optician to top al-Qaeda leader
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X