ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনের উপকূলে গড়ে উঠছে বিশালায়াতন নতুন কৃত্রিম দ্বীপ লিনেটহোম
লিনেটহোম নামে নতুন এই দ্বীপটি তৈরি হচ্ছে ৩৫ হাজার লোকের বসবাসের লক্ষ্য নিয়ে। তবে খুশি নন পরিবেশবাদীরা।
ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনের উপকূলে বিশালাকৃতির একটি কৃত্রিম দ্বীপ তৈরির প্রকল্প অনুমোদন করেছে দেশটির সংসদ।
এই দ্বীপ তৈরি করা হচ্ছে ৩৫ হাজার লোকের বসবাসের জন্য এবং সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি থেকে ঝুঁকিতে থাকা কোপেনহেগেন বন্দরকে সুরক্ষা দেয়ার লক্ষ্যে।
বিশাল এই দ্বীপের নাম দেয়া হবে লিনেটহোম এবং একটি রিং রোড, সুড়ঙ্গপথ ও মেট্রো লাইন দিয়ে মূল ভূখন্ডের সঙ্গে এই দ্বীপকে যুক্ত করা হবে।
প্রকল্পটির কাজ শুরু হবে এ বছরের শেষে।
কিন্তু পরিবেশবাদীদের বিরোধিতার মুখে পড়েছে এই প্রকল্প। নির্মাণকাজের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
কী আছে প্রকল্পে?
লিনেটহোম দ্বীপকে ঘিরে একটি বেড়িবাঁধ তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে যে বাঁধ বন্দরকে ডুবে যাওয়ার ঝুঁকি এবং ঝড়ঝঞ্ঝার জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঁচাবে।
নির্মাণকাজ পরিকল্পনা মাফিক এগোলে উপকূলে এই দ্বীপ তৈরির জন্য ভিত বসানোর বেশিরভাগ কাজ ২০৩৫ সালের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে এবং পুরো দ্বীপটি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হবে ২০৭০ সালে।
বিবিসি বাংলার আরও খবর:
- মাসিকের সময় মহারাষ্ট্রে যে নারীদের এখনও একঘরে করা হয়
- চায়ের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশের সমতলেও চাষের দারুণ সম্ভাবনা
- করোনাভাইরাসের ৮০ শতাংশই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট, বলছে আইইডিসিআর
তবে পরিবেশবাদী দলগুলো ইউরোপিয়ান বিচার আদালতে এই উন্নয়ন প্রকল্পের বিরুদ্ধে মামলা এনেছে।
পরিবেশবাদীরা কেন উদ্বিগ্ন?
নির্মাণকাজের জন্য মালামাল পরিবহন করতে রাস্তায় যানবাহনের যাতায়াত অনেক বৃদ্ধি পাবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করছে পরিবেশ সংগঠনগুলো। একটি সংস্থার হিসাবে বলা হচ্ছে নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে গেলে কাঁচা মাল সরবরাহ করার জন্য কোপেনহেগেন দিয়ে প্রতিদিন সাড়ে তিনশ লরিকে যাতায়াত করতে হবে।
কৃত্রিম এই দ্বীপের আয়তন হবে ৪০০টি ফুটবল মাঠের সমান। স্থানীয় মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে শুধু মাত্র বদ্বীপ এলাকাটি গড়ে তুলতেই প্রয়োজন হবে আট কোটি টন মাটি।
এছাড়াও এর ফলে সমুদ্রের তলদেশে যে পলি জমা হয়ে আছে এই নির্মাণ কাজের ফলে তা ব্যাপকভাবে নাড়া খাবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরা। তারা বলছেন এর ফলে সাগরের পানিতে এই তলানি মিশে গিয়ে পানির মান দূষিত হতে পারে এবং সামুদ্রিক জীবন ও জীববৈচিত্র্যের ওপর এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আরও পড়ুন:
- সেন্ট মার্টিনে গিয়ে পর্যটকেরা যে ১৪টি কাজ করতে পারবেন না
- পৃথিবী রক্ষায় সময় আছে আর মাত্র দেড় বছর
- বিশ্বের সবচেয়ে প্রত্যন্ত দ্বীপে কেমন মানুষের জীবন?
এই দ্বীপ তৈরির জন্য সংসদে বিল পাস হবার সময় সংসদ ভবনের বাইরে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন পরিবেশ সংরক্ষণবাদীরা। ডেনমার্কের প্রচারমাধ্যমের খবরে জানানো হয় এই বিলের পক্ষে ভোট পড়েছে ৮৫টি এবং বিপক্ষে ১২টি।
শহরে প্রতিদিন লরির সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়ায় আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিক্ষোভকারীরা।
নিকোলাম উলহেড নামে একজন প্রতিবাদকারী বলেন নভেম্বরে স্থানীয় নির্বাচনের আগে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ সঠিক হয়নি।
"ডেনমার্কের ইতিহাসে এটা এ যাবত সবচেয়ে বিশাল অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। এই প্রকল্প নিয়ে জনগণের মতামত জানানোর সুযোগ ছিল স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমে। কিন্তু মানুষকে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হলো," তিনি বলেন।
তবে ডেনমার্কের সড়কে মালামাল পরিবহন বিষয়ক সমিতির প্রধান কারিনা ক্রিস্টেনসেন বলেছেন লিনেটহোম প্রকল্পের নির্মাণ কাজে মালামাল পরিবহনের সময় "পরিবেশ বান্ধব" পরিবহন ব্যবহার করার কথা ভাবা যেতে পারে। তবে সরকারকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
"যেমন বিদ্যুত চালিত ট্রাক ব্যবহার করা যেতে পারে, যেখানে কার্বন ডাইঅক্সাইডের নির্গমণ হবে না এবং শব্দ দূষণও হবে না। তবে এর জন্য প্রতি ট্রিপে মাল পরিবহনের খরচ বাড়বে," তিনি জানান।