রাইফেল-স্টেনগান সবই চালাতে পারতেন! ১০১ বছর বয়সেও অনর্গল বলেন নেতাজির গল্প
তাঁদের মুখ থেকে সেই সংগ্রামের গল্পও শোনা হয় না আর। তবে মালয়েশিয়ায় এখনও রয়েছেন এক বৃদ্ধা, যাঁর পরণে শাড়ি আর মাথায় সেনাবাহিনীর টুপি দেখা যায় আজও। বয়স ১০১। দুর্ঘটনায় আঘাত লেগে চলাফেরার ক্ষমতা ম্লান হলেও আজও সমান উদ্যমে সেই
স্বাধীনতা সংগ্রামে যাঁরা লড়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই আর বেঁচে নেই। তাঁদের মুখ থেকে সেই সংগ্রামের গল্পও শোনা হয় না আর। তবে মালয়েশিয়ায় এখনও রয়েছেন এক বৃদ্ধা, যাঁর পরণে শাড়ি আর মাথায় সেনাবাহিনীর টুপি দেখা যায় আজও। বয়স ১০১। দুর্ঘটনায় আঘাত লেগে চলাফেরার ক্ষমতা ম্লান হলেও আজও সমান উদ্যমে সেই সময়কার গল্প বলেন অঞ্জলি।
কেউ তাঁকে জিজ্ঞেস করলেই সবার আগে তাঁর মুখে শোনা যায় নেতাজির নাম। নেতাজি যে বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তাতেই সৈনিক হিসেবে লড়াই করতেন এই অঞ্জলি। তিনি ভারতীয়। কিন্তু বর্তমানে থাকেন মালয়েশিয়ায়। সম্প্রতি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সেই গল্পই শোনালেন তিনি। মুখে অমলিন হাসি নিয়ে তিনি বলে গেলেন কী ভাবে তাঁর সেনাবাহিনীতে আসা।
তাঁর বাবা পেশায় স্বাস্থ্যকর্মী ছিলেন। কিন্তু তাঁর মানসিকতা আর পাঁচটা মহিলার মত ছিল না। জাপান যখন মালয় দখল করেছিল সেই সময় অঞ্জলি দেবী দেখেছিলেন ভারতীয় মহিলারা সেনার পোশাক পরে মার্চ করছিলেন। সেই দৃশ্য দেখেই অনুপ্রাণিত হন তিনি। এরপর সব ছেড়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি।
নেতাজির প্রতিষ্ঠা করা ঝাঁসির রানি রেজিমেন্টের সদস্য ছিলেন তিনি। বাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর তাঁকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয় ট্রেনিং দেওয়ার জন্য। সেখানে সব আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার শিখেছিলেন তিনি। রাইফেল থেকে স্টেনগান সবকিছুই শিখেছিলেন তিনি। অঞ্জলি দেবী এখনও বেশ মনে করতে পারেন মহিলাদের সুরক্ষার কথা কতটা ভাবতেন নেতাজি।
ক্যাম্পে গিয়ে মেয়েদের দেখাশোনা করতেন তিনি। প্রত্যেককে নিজের সন্তানের মত স্নেহ করতেন। এক সময় জাপানের এক সেনাকর্তা নেতাজির কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কেন মহিলাদের ক্যাম্পে এনেছেন তিনি? কী করবেন তাঁরা? উত্তরে নেতাজি বলেছিলেন মহিলারা নিজেরাই জবাব দেবেন যে তাঁরা ঠিক কী করতে পারেন।
পিঠে ভারী ব্যাগ নিয়ে ইউনিফর্ম পরে পাহাড়ি জঙ্গল পার করতে হত তাঁদের। রেশনে তাঁদের দেওয়া হত পাঁঠার মাংস আর দুধ। সদস্যরা সবাই খাবার পাচ্ছেন কি না, সে ব্যাপারে কড়া নজরদারি ছিল নেতাজির, এমনটাই বলেন অঞ্জলি দেবী। তিনি এখন বেশ মনে করতে পারেন, একদিন নেতাজিকে দুটো কলা দেওয়ায় দ্বিতীয়টি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
তাঁর বক্তব্য ছিল, অন্যান্য সদস্যরা যখন একটাই কলা খেয়েছেন,তখন তিনিও তাই খাবেন। জাপান হেরে যাওয়া পর পরিবারে ফিরে গিয়েছিলেন অঞ্জলি দেবী। ভারত ও মালয়েশিয়ার স্বাধীনতাপ্রাপ্তি দেখেছেন তিনি। বর্তমানে হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতে হলেও বাড়ির কাজেকর্মে হাত লাগাতে সদা প্রস্তুত তিনি। আর বয়স? সেটা তো সংখ্যা মাত্র। নিরামিষ খাবার আর দুধ খেয়েই দিব্য আছেন তিনি।