যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ থেকে ফিরে এসে তিক্ত অভিজ্ঞতা জানালেন ইউক্রেনের ভারতীয় পড়ুয়া
যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ থেকে ফিরে এসে তিক্ত অভিজ্ঞতা জানালেন ইউক্রেনের ভারতীয় পড়ুয়া
রাশিয়ার হামলায় বিধ্বস্ত ইউক্রেন। লাগাতার রুশ হামলায় বিপর্যস্ত কিয়েভ সহ ইউক্রনের একাধিক শহর। এরকম পরিস্থিতিতে ওই দেশ থেকে একে একে ফিরে আসছেন ভারতীয় পড়ুয়ারা। প্রধানত ডাক্তারি পড়তেই ভারতীয় পড়ুয়াদের ভিড় জমে ছিল ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে। ইউক্রেনের অশান্তিকর পরিস্থিতিতে এখন পড়াশোনা মাঝপথে ছেড়ে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন ভারতীয় পড়ুয়ারা। এ দেশে এসে তাঁরা শোনাচ্ছেন ইউক্রেনে কাটানো তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা।
পালিয়ে বেঁচেছেন শিবশঙ্করী
ইউক্রেনের খারকিভের ভিএন কারাজিন খারকিভ ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল ডিগ্রির পড়ুয়া শিবশঙ্করী। তাঁর ডিগ্রি পেতে আর মাত্র তিনমাস বাকি ছিল। কিন্তু তার আগেই রুশ বাহিনীর হামলায় ছারখার হয়ে গিয়েছে খারকিভ শহর। এই দেশে থাকা আর নিরাপদ নয়। ২২ বছরের শিবশঙ্করী ভেবেছিলেন মেডিক্যাল ডিগ্রি নিয়েই তিনি তাঁর মাতৃভূমিতে পা রাখবেন। কিন্তু সেটা আর হল কই। কারাইকালের পাঁচজন পড়ুয়াদের মধ্যে শিবশঙ্করী একজন, যিনি এখনও পর্যন্ত নিরাপদে দেশে ফিরতে পেরেছেন। শনিবারই ভারতে ফেরেন তিনি।
বাঙ্কারে থাকছিলেন ভারতীয় পড়ুয়ারা
২২ বছরের পড়ুয়া ওই দেশে যে কষ্টকর দিনগুলো কাটিয়েছেন তার বর্ণনা দেওয়ার সময় শিবশঙ্করী বলেন, 'আমি একদল ভারতীয় ও ইউক্রেনের পড়ুয়াদের সঙ্গে থাকছিলাম। বিশ্বযুদ্ধের সময় তৈরি করা একটি অ্যাপার্টমেন্টের বাঙ্কারে আমরা থাকছিলাম। এই বাঙ্কারটি ঠিকমতো বন্ধ করা যাচ্ছিল না, তাই আমরা মেয়েরা পালা করে নজরদারি চালাচ্ছিলাম। এখানে বিদ্যুৎও ছিল না। যখন রুশ বাহিনী গোলাগুলি বন্ধ হল তখন আমরা বাঙ্কার থেকে বেরিয়ে মেট্রো স্টেশনগুলিতে গিয়ে নিজেদের ফোন চার্জ দিয়েছি। নবীনের (পড়ুয়া) মৃত্যুর পর আমরা আরও ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। খাবারের জন্য সংঘর্ষ করতে করতে আমি আমার ওজন হ্রাস করি।'
ভারতীয় পড়ুয়াদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার
শিবশঙ্করী ও অন্যান্য পড়ুয়ারা অবশেষে কোনওমতে ইউক্রেন-পোল্যান্ড সীমান্তের লভিভ থেকে ট্রেনে উঠতে সফল হন ১ মার্চ। শিবশঙ্করী বলেন, 'বেশ কিছু বছর ধরে এখানে বসবাসসের সূত্রে খারকিভের ইউক্রেনের নাগরিকরা আমাদের সঙ্গে ভালোই আচরণ করতেন। কিন্তু যখন এই শহরের ওপর রুশ বাহিনীর আগ্রাসন শুরু হয়, তখন আমরা অনুভব করি যে ইউক্রেন বাসীরা তাঁদের নিরাপত্তার খাতিরে আমাদের এই শহর ছেড়ে যেতে দিতে চায় না। ইউক্রেনের নাগরিকরা শহর ছেড়ে পালিয়ে আমাদেরকে ট্রেনে চড়তে দিচ্ছিলেন না এবং আমাদের অনেক ভারতীয় বন্ধুরাই যাঁরা ট্রেনে চড়ার পর সিটে বসে পড়েন তাঁদেরকে হেনস্থা করতে শুরু করেন ইউক্রেনের নাগরিকরা। এটা খুবই ভয়াবহ ছিল। আমরা খুব আতঙ্কের মধ্যে ট্রেনে চেপে এসেছি। ইউক্রেন-পোল্যান্ড সীমান্ত পেরিয়ে যাওয়ার পর এবং ওয়ারেশের দিকে যখন ট্রেন যাচ্ছিল তখনই আমরা স্বস্তির শ্বাস নিই।'
এখনও আতঙ্ক কাটেনি শিবশঙ্করীর
শিবশঙ্করীর বাবা ভি আনবাজগান একজন অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী এবং তাঁর মা জয়ক্ষ্মী একজন সরকারি স্কুলের শিক্ষিকা। শিবশঙ্করীর বোনেদের মধ্যে একজন পুদুচেরিতে মেডিসিন নিয়ে পড়াশোনা করছে এবং অন্যজন একাদশ শ্রেণীর পড়ুয়া। শিবশঙ্করী কোনওভাবেই চান না তিনি যে কঠিন বাস্তবের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন তাঁর বোনেরাও একই জিনিসের মুখোমুখি হোক।
বাড়ির মালিক সাহায্য করেন
টি সরোজা, ডাক্তারি পড়ুয়া, যিনি ভিনিৎসিয়া থেকে পালিয়ে আসেন, তিনি বলেন, 'আমার বাড়ির মালিক আমাকে তাঁদের বাঙ্কারে তাঁদের সন্তানদের সঙ্গে আশ্রয় দিয়েছিলেন। ওই মহিলার কাছে সীমিত খাবার থাকা সত্ত্বেও তিনি আমায় খাবার দেন এবং আমার খেয়াল রাখেন।