নেদারল্যান্ডসে বইবে 'আনন্দধারা' মা দুর্গার আবহনে তৈরি আমস্টালভীন
আনন্দধারার উদ্যোগে এবার নেদারল্যান্ডসে বইবে আনন্দ স্রোত। মা দুর্গার আবাহনে মাতছে ভুবন।
প্রবাসে বসে যখন বাঙালিরা মাছের ঝোলের সাথে স্ট্যাম্পপোট-এর (ডাচ খাবার) একটা নিখুঁত ভারসাম্য খুঁজে পাবার চেষ্টা করে, তখন অন্যদিকে তারাই একটা বড়ো টানাপোড়নের সম্মুখীন হয়ে বাঙালির বাঙালিয়ানাকে জীবিত রাখার জন্যে। সেই বাঙালি সংস্কৃতিকে ইউরোপের এই ছোট্ট দেশে, দেশি ও বিদেশি, সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেবার একটা নূন্যতম প্রচেষ্টা নিয়েই আনন্দধারার পথ চলা শুরু ২০১৭-র গোড়ার দিকে, কিছু সমমনস্ক বাঙালি পরিবারের হাত ধরে। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, শুধু বাঙালির সংস্কৃতিকে এই বিদেশে বসে উপভোগ করা নয়, তার সাথে কিছু সামাজিক কাজের মধ্যেও নিজেদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবার একটা ছোট্ট ইচ্ছে নিয়েই আনন্দধারা এগিয়ে এসেছে।
১লা বৈশাখের শুভক্ষণে আনন্দধারা তাদের প্রথম সার্বজনীন দুর্গোৎসবের ঘোষণা করে আমস্টালভীন শহরের একদম কেন্দ্রস্থল, স্ট্যাডহার্টস-এ । আনন্দধারার দূর্গা পূজা সত্যিকারের অর্থে সার্বজনীন - কোনোরকম প্রবেশমূল্য ছাড়াই, প্রতিমা দর্শন থেকে অঞ্জলি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আনন্দ উপভোগ করা বা তাতে অংশগ্রহণ করা, সবই সম্ভব।
মহালয়াতে দেবীপক্ষের সূচনার সাথেই আনন্দধারার সকলের উত্তেজনা এখন শীর্ষে। অন্যদিকে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির অসম্ভব তাড়া সবার মধ্যে। এদিকে কুমোরটুলির অন্যতম বিখ্যাত প্রতিমা শিল্পী, শ্রী প্রশান্ত পাল, সযত্নে মা দূর্গাকে স্বপরিবারে সুসজ্জিত করে জাহাজে চাপিয়ে দিয়েছিলেন সেই জুলাই মাসেই। মা এখন সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে এসে কটা দিন জিরিয়ে নিচ্ছেন পুজোর হুলুস্থুল শুরু হবার আগে। আনন্দধারাতে পুজো এবার ৩ দিন - ২৮এ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০এ সেপ্টেম্বর। এক টুকরো গ্রামবাংলার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠবে এবারের পূজামণ্ডপে - সৃজনে 'আমার সাজে মায়ের পূজো ' ফেসবুক প্রতিযোগিতার বিজয়িনী শতদীপা ঘোষ। ভোর থেকেই শুরু হয়ে যাবে পুজোর তোড়জোড় যার দায়িত্বে আছেন শ্রী স্বপন কুমার রায় । পুরোহিত মশাইয়ের সাথে সুদূর কলকাতা থেকে এসেছে নানারকম দশকর্মার সামগ্রী। ষষ্ঠীর বোধন থেকে দশমীর বিসর্জন, সন্ধিপুজো , ঢাকের তালে ধুনুচি নাচ থেকে মায়ের বরণ ও সিঁদুরখেলা - পুজোর সব আয়োজন হচ্ছে বাঙালির চিরাচরিত প্রথা ও ঐতিহ্য মেনে।
অন্যদিকে পুজোর তিনদিনই অতিথিদের বিনোদনের জন্য আয়োজন করা হয়েছে সাংকৃতিক সন্ধ্যার। নৃত্যনাট্য, শ্রুতিনাটক, ছোটদের নাচ ও গান , স্থানীয় বাংলা ব্যান্ড , গর্বা , শাস্ত্রীয় সংগীত ও নাচ দিয়ে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের স্থানীয় শিল্পীরা এই মনমাতানো অনুষ্ঠান পরিবেশন করবেন।
বাঙালির পেটপুজো না হলে কি আর দূর্গা পুজো হয়? পুজোর মেনুতে থাকছে অষ্টমীর দুপুরে খিচুড়ি আর লাবড়া , অষ্টমীর রাতে রুই কালিয়া আর কষা মুরগি , নবমীর সন্ধ্যার পাঠার মাংস আর দশমীর দুপুরে চিংড়ির মালাইকারি। শুধু খাদ্যরসিক বাঙালির জন্যই নয়, অবাঙালি ও স্থানীয় অতিথির জন্য থাকছে রকমারি নিরামিষ পদ।
ছমাসের কঠিন পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও পরিশ্রমের পর অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে সেই দিনটা হাজির যার জন্যে প্রত্যেক বাঙালি সারা বছর অপেক্ষায় থাকে।