'ইসলাম বিরোধী' ট্রাম্পের ইফতার পার্টিতে যাবেন না আমেরিকান মুসলিমরা
আমেরিকার মুসলমানরা ট্রাম্পের ইসলামবিরোধী অবস্থানের জন্য, তাঁর দেওয়া হোয়াইট হাউজের ইফতার পার্টিকে প্রত্যাখ্যান করছে।
হোয়াইট হাউসে প্রথমবারের মতো ইফতার পার্টি দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু বেশ কয়েকটি আমেরিকান মুসলিমদের সংগঠন হোয়াইট হাউসের এই ইফতারের ডিনার বয়কটের আহ্বান জানিয়েছে। তাঁদের দাবি ট্রাম্পের যে চরম ইসলাম বিরোধী অবস্থান তা, ইফতার পার্টি দিয়ে ভোলানো যাবে না।
হোয়াইট হাউসে ইফতার পার্টির প্রচলন হয়েছিল ৯০-এর দশকে বিল ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট থাকার সময়ে। তারপরে জর্জ ডব্লু বুশ ও বারাক ওবামাও সেই প্রথাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। এমনকী ২০০১ সালে আমেরিকায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার-এ সন্ত্রাসবাদী হানাকে কেন্দ্র করে আমেরিকায় যখন তীব্র মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়েছিল সেসময়ও বুশ ইফতার পার্টি বন্ধ করেননি।
গত বছর, ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েই বার্ষিক ইফতারের সেই কয়েক দশক ধরে প্রথা ভেঙেছিলেন। তিনি সাফ জানান, হোয়াইট হাউসে ইফতার টিফতার চলবে না। বদলে তিনি সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ভাষণ দেন। বলে বসেন মুসলিমরা আমাদের ঘৃণা করে। ট্রাম্প তাঁর এই মুসলিম-বিরোধী অবস্থানটি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার পর্বেই। তাঁর প্রতিশ্রুটি ছিল ক্ষমতায় এসেই আমেরিকায় মুসলিমদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করবেন। কথাও রেখেছেন। চেয়ারে বসেই প্রথম যে সিদ্ধান্তগুলি তিনি নিয়েছিলেন তার মধ্যে অন্যতম ছিল নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে ইরাণ, লিবিয়া, সোমালিয়া, সিরিয়া, ও ইয়েমেন - এই পাঁচটি মুসলিম প্রধান দেশের নাগরিকদের আমেরিকায় প্রবেশের এপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা।
কাজেই প্রথম থেকেই আমেরিকার মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়। এরপর জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানীক স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে সেই ফাটল চওড়া হয়েছে। কাজেই গত সপ্তাহে যখন প্রথম জানা যায় এবছর ট্রাম্প ইফতার পার্টি দেবেন, তখন আমেরিকান মুসলিমরা বেশ বিস্মিতই হন। কারা কারা আমন্ত্রিত সেই ভোজে তা জানা যায়নি। হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব সারা স্যান্ডার্স মঙ্গলবার বলেন, 'প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন এই নৈশভোজে অংশ নেবেন।'
পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টদের আমলে আমেরিকান মুসলিমরা সাগ্রহেই ইফতার ডিনারে অংশ নিতেন। তাঁরা বলছেন , ইসলাম ও তার অনুসারীদের ট্রাম্প ক্রমাগত নিশানা করেন। কাজেই তাঁর প্রশাসনের সঙ্গে একাত্মতা বোধ করা কঠিনই নয় বলা যায় অসম্ভব। ইয়েল ইউনিভার্সিটির ছাত্রনেতা জিয়াদ আহমেদ বলেন, 'ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকায় মুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার জন্য ডাক দিয়েছেন। একের পর মুসলিম দেশকে হুমকি-ধমকি, আক্রমণ, বৈষম্য সৃষ্টি করে মুসলমানদের ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়েছেন তিনি। এমনসব নীতি নিয়েছেন, যা মুসলমানদের দেশের অভ্যন্তরে কিংবা দেশের বাইরে চরম আঘাত করেছে। আমরা তাঁকে চরম ইসলামবিদ্বেষী বলেই মনে করি। ইফতারকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন তিনি।' শুধু বিবৃতি দিয়েই থামছেন না তাঁরা। অনেকগুলি আমেরিকাম মুসলিম সংগঠন হোয়াইট হাউসের বাইরের চত্ত্বরে সমান্তরাল ইফতার পার্টি আয়োজনের কথা ঘোষণা করেছে।