করোনাকালে ভাড়াটিয়া সঙ্কটে জর্জরিত আমেরিকা, বলপূর্বক উচ্ছেদ ঠেকাতে নয়া আইন পাস নিউইয়র্কে
করোনা সঙ্কটে বিধ্বস্ত মার্কিন অর্থনীতি। গোটা দেশজুড়েই বেড়েছে বেকারত্বের হার। এমনকী নতুন কাজ তো দূর করোনাকালেই কাজ হারিয়ে বেকার হয়েছে কয়েক কোটি যুবক-যুবতী। এমতাবস্থায় আর পাঁচটা দেশের মতোই করোনাকালে বকেয়া বাড়ি ভাড়া নিয়ে তীব্র সমস্যায় পড়ে আমেরিকার একাদিক রাজ্যের বড় অংশের। মানুষ এবার সেই সমস্যা দূর করতেই মাঠে নামল মার্কিন প্রশাসন।

বলপূর্বক উচ্ছেদ ঠেকাতে বড়সড় পদক্ষেপ
শোনা যায় জুলাই-অগাষ্ট পর্যন্ত আমেরিকা তথা বিশ্বের সর্বাধিক বিত্তশালী শহর নিউয়র্কেই বাড়ি ভাড়া মেটাতে পারেনি এক-তৃতীয়াংশ মানুষ। এদিকে তাদের মধ্যেই সিংহভাগই করোনাকালে কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন বা করোনা কাঁটাতেই বন্ধ হয়েছে আনুষাঙ্গিক আয়ের রাস্তাও। আর ফলে চরমে উঠেছে মালিক-ভাড়াটিয়া বিবাদ। এদিকে আমেরিকার বড় বড় শহরগুলি অনেক মানুষই এই বাড়ি ভাড়া দেওয়ার মাধ্যমেই তাদের মাসিক উপার্জন করেন। ফলে বড়সড় ধাক্কা খান তারা।
ভাড়াটিয়া সঙ্কট ঠেকাতে নয়া আইন পাশ
এদিকে এই চলমান বিবাদের মধ্যেই একাধিক জায়গা থেকে ভাড়াটিয়াদের বলপূর্বক উচ্ছেদের কথা শোনা যায়। এমনকী অনেক জায়গাতেই শোনা যায় বিভিন্ন হিংসাত্মক ঘটনার কথা। এবার এই বলপূর্বক উচ্ছেদ ঠেকাতেই সোমবার নতুন আইন পাশ হয়ে গেল নিউইয়র্কের সংসদে। এই নয়া উচ্ছেদ বিরোধী আইন বলে এখন থেকে অনেকটাই সুবিধা পেতে চলেছেন ভাড়াটিয়া। অর্থাভাবে কোনও ভাড়াটিয়া এখন থেকে ভাড়া না দিতে পারলেও তাকে যখন তখন তুলে দিতে পারবে না বাড়ির মালিক। এর জন্য তাকে ন্যূনতম দুমাসের নোটিশ দিতে হবে বলে জানা যাচ্ছে। এমনকী প্রয়োজনে সরকারি হস্তক্ষেপে তার বাড়ি ভাড়ার মেয়াদ আরও বাড়ানো হতে পারে বলেও নয়া আইনে বলা হয়েছে।
বলপূর্বক উচ্ছেদের কারণে পথে বসেছেন ১২ লক্ষ পরিবার
এমনকী উচ্ছেদের মামলা করতে গেলেও বাড়ির মালিককে এই ৬০ দিনের সময়সীমা মেনে চলতে হবে বলে জানা যাচ্ছে। নিউইয়র্কের সংসদে এই বিল পাশ হতেই তা সই করতে এদিন বিন্দু মাত্র সময় নষ্ট করেননি গভর্নর অ্যান্ড্রু এম কুওমো। আর তারপরেই কার্যকরী হয়ে যায় নয়া আইন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই করোনাকালেই শুধুমাত্র নিউইয়র্কেরই প্রায় ১২ লক্ষ পরিবার এই বলপূর্বক উচ্ছেদের কারণে পথে বসেছে বলে জানা যাচ্ছে। ভাড়া না মেটানোয় অনেকের বিরুদ্ধেই চলছে মামলা।
উচ্ছেদের ভয়ে ভুগছেন প্রায় ৭০ লক্ষ থেকে ১ কোটি ৪০ লক্ষ পরিবার
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি ফোরামের তথ্যমতে, লকডাউন জারির সময় শুধুমাত্র নিউইয়র্কেই প্রায় ৭ লক্ষ ভাড়াটে তাঁদের কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে এই মূহূর্তে গোটা আমেরিকা জুড়েই উচ্ছেদ ভয়ে ভুগছেন প্রায় ৭০ লক্ষ থেকে ১ কোটি ৪০ লক্ষ পরিবার। এদিকে করোনাকালীন আর্থিক মন্দা দূর করতে ইতিমধ্যেই ৯০ হাজার কোটি ডালারের আর্থিক প্যাকেজ এনেছে মার্কিন প্রশাসন।
কী বলা হয়েছে নয়া প্যাকেজে ?
এই প্যাকেজের আওতাতেই যে সমস্ত মার্কিনীদের বার্ষিক রোজগার ৭৫ হাজার ডলারের কম, তাঁদের ৬০০ ডলার করে আর্থিক সাহায্য করার কথাও বলা হয়েছে। পাশাপাশি বছরে ১.৫ লক্ষ ডলার পর্যন্ত উপার্জনকারী যুগলদের ১,২০০ ডলার পর্যন্ত দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। রবিবারই এই সংক্রান্ত একটি বিলে সই করেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এই আর্থিক সাহায্যের হাত ধরে আগামীতে আমেরিকার ভাড়াটিয়া সঙ্কট কতটা কাটে এখন সেটাই দেখার।
