ইরাকে নির্বাচনে জয়ী প্রাক্তন শিয়া যোদ্ধা ও কমিউনিস্টদের জোট! দেশ পুনর্গঠনই বড় চ্যালেঞ্জ
ইরাকের প্রাক্তন শিয়া যোদ্ধা ও ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির জোট সায়েরুন ব্লক ৫৪ টি আসন পেয়ে জয়ী হয়েছে।
ইরাকের জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হল প্রাক্তন শিয়া যোদ্ধাদের নেতা মোক্তাদা আল-সাদরের জোট। নির্বাচনে তারাই যে জয়লাভ করতে চলেছে তা আগেই স্পষ্ট হয়ে গেছিল। এবার নির্বাচন কমিশন তাঁর নেতৃত্বাধীন সায়েরুন (মার্চিং টুওয়ার্ডস রিফর্ম) জোটকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে। কশিমন জানিয়েছে, মোক্তাদা সাদ্রের জোট মোট ৫৪টি আসন পেয়েছে। পাশাপাশি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হায়দর আল-আবাদির নাসর (ভিক্টরি) জোট ৪২ টি আসন পেয়ে রয়েছে তৃতীয় স্থানে। সাদর নিজে প্রার্থী হননি। তাই তিনি নিজে প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার গঠনে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে।
২০০৩ সালে ইরাকে আমেরিকার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শিয়া যোদ্ধাদের নেতৃত্ব দিয়েই প্রথম সংবাদ শিরোনামে আসেন মোক্তাদা সাদর। কিন্তু গত কয়েক বছরে দুর্মাতি বিরোধী হিসেবে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছেন তিনি। পাশাপাশি ইরানপন্থী রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে তিনি দৃষ্টি দিয়েছেন নিজ দেশের উন্নয়নে। প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন শিয়া-সুন্নি রাজনৈতিক ঐক্য। এমনকী, জোট করেছেন ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে পরিচিত দলগুলির সঙ্গে, যার মধ্যে ইরাকি কমিউনিস্ট পার্টিও রয়েছে। মূলতঃ দারিদ্র্য ও দুর্নীতিতে জর্জরিত ইরাকের বঞ্চিত জনতার পক্ষে এবং বৈদেশিক আগ্রাসনের বিরোধিতাতেই তিনি ইরাকে প্রবল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন।
গত ডিসেম্বরে ইরাকে আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে জয় ঘোষণা করা হয়েছিল। তারপর থেকে এই প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল সেদেশে। সাদরের সায়েরুন জোটও এই প্রথম ইরাকের নির্বাচনে অংশ নিল এবং প্রথমবারেই বড় রকমের সাফল্য পেল। গত শনিবার এ নির্বাচন হয়। সাদর ও আল-আবাদির দল ছাড়াও নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল ইরাণপন্থী ফাতাহ (কংকোয়েস্ট ) জোটও। প্রাক্তন পরিবহনমন্ত্রী হাদি আল-আমেরি ছিলেন এই জোটের নেতৃত্বে। এই জোটের বেশিরভাগই আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেওয়া পপুলার মোবিলাইজেশন ইউনিটের সদস্য। তাদের একটা বড় অংশ অস্ত্র সমর্পন করে দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। ৪৭ টি আসন নিয়ে তারা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
তবে, এখনও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আল-আবাদির তখতে ফেরার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়নি। কারণ ৩২৯ টি আসনের পার্লামেন্টে, কোনও দলই একক সংখ্যাগরীষ্ঠতা পায়নি। ফলে অন্য দলের সঙ্গে সমঝোতা করে চেয়ার বাঁচাতে পারেন তিনি। তবে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে সরকার গঠন করতেই হবে। তবে যেই সরকার গড়ুক, তাঁর চলার পথটা মোটেই মসৃণ হবে না। প্রথমে আইএস শাসন, এবং তারপর আইএস বিরোধী অভিযানে সেদেশের এখন ধস্ত দশা। অধিকাংশ শহর এখনও ধ্বংসস্তূপ হয়ে আছে। কাজেই দেশের পুনর্গঠনই হতে চলেছে নতুন ইরাকি সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ। সঙ্গে ঠেকাতে হবে বৈদেশিক আগ্রাসনও।