বিশ্বের প্রথম করোনা টিকা স্পুটনিক-ভি বাজারে আনল রাশিয়া, ভ্যাকসিনের ভালো-মন্দ সম্পর্কে জানুন
বিশ্বের প্রথম করোনা টিকা স্পুটনিক-ভি বাজারে আনল রাশিয়া, ভ্যাকসিনের ভালো-মন্দ সম্পর্কে জানুন
অবশেষে রাশিয়ার হাত ধরে বাজারে এল করোনা ভ্যাকসিন স্পুটনিক-ভি। যা নিয়ে সাড়া পড়েছে গোটা বিশ্বেই। ইতিমধ্যেই রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে এই ভ্যাকসিনকে জনসাধারণের উপর প্রয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়েছ বলেো জানান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পাশাপাশি মঙ্গলবার এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয় পুতিন কন্যাকেও। এদিকে আশার আলোর মাঝেও রাশির এই ভ্যাকসিন নিয়ে দানা বাঁধছে একগুচ্ছ প্রশ্ন।
প্রথম হওয়ার বাসনা থেকেই কি তড়িঘরি ভ্যাকসিন আবিষ্কার ?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন বরাবরই প্রথম হতে ভালবাসে রাশিয়া। মহাকাশ হোক বা যুদ্ধক্ষেত্র প্রথম হওয়ার স্বাদ নিতে রাশিয়ার জুড়ি মেলা ভার রাশিয়ার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন দুই শক্তিধর দেশ আমেরিকা এবং রাশিয়ার মধ্যে ঠান্ডা যুদ্ধ চলছে, সে সময় আমেরিকাকে টপকে প্রথম মহাকাশে প্রথম যান পাঠিয়ে দিয়েছিল মস্কো। তারপর মহাকাশে প্রথম মানুষ পাঠানোর কৃতিত্বও রাশিয়ার। বর্তমানে ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময়ের মহাকাশ যানের নাম মিলিয়েই নয়া আবিষ্কৃত করোনা ভ্যাকসিনের নাম দেওয়া হয়েছে স্পুটনিক-ভি।
রাশিয়ার ভ্যাকসিন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং পশ্চিমা দেশগুলির
এদিকে এই ভ্যাকসিন নিয়ে ইতিমধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং পশ্চিমা দেশগুলিও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের অভিযোগ রাশিয়ার এই করোনা ভ্যাকসিন এখনও মানব ট্রায়ালের সমস্ত ধাপ উত্তীর্ণ হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন গোটা বিশ্বের বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাই এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। যদিও নয়া এই করোনা ভ্যাকসিন কীভাবে কাজ করবে সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে রাশিয়ার গামালায়া রিসার্চ ইন্সটিটিউট।
ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ মার্কিন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের
সঙ্কটকালীন পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে তড়িঘড়ি এই টিকা এনেছে রাশিয়া। ২ মাসেরও কম সময়ে সম্পূর্ণ হয়েছে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। সময়ে পরীক্ষার ফলে ফল হিতে বিপরীত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞেরা। এই প্রসঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা যায় মার্কিন সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ অ্যান্থনি ফউসিকেও। তাঁর কথায়, "আমি আশা করি রাশিয়া ও চিন প্রতিষেধকের পরীক্ষা করছে। কারণ পরীক্ষার আগেই প্রতিষেধক প্রস্তুত বলা অত্যন্ত সমস্যাজনক।"
বিশেষ কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই সফল প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের ট্রায়াল
এদিকে স্পুটনিক-ভি-র প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে মানব শরীরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সফল ভাবে শেষ হয়েছে বলে দাবি করেছেন রুশ বিজ্ঞানীরা। প্রথম ধাপে যে সব স্বেচ্ছাসেবক এই টিকা নিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন বলেও বিজ্ঞানীদের দাবি। একইসাথে কারও শরীরেই ক্ষতিকর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি কোনও ব্যক্তির। প্রথম ধাপে যাদের শরীরে এই ভ্যাকসিনের প্রয়োগ করা হয়েছিল তাঁদের বেশির ভাগই সেনাবাহিনীর সদস্য। সূত্রের খবর, গামালেয়ার ওই ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ট্রায়াল শুরু হয় ১৩ জুলাই, শেষ হয় ৩ অগাস্ট। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষাও শুরু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
সেপ্টেম্বর থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু
এদিকে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন প্রয়োগের পরে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উদ্দীপিত করার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসকে দূর্বল করে দেয় এই ভ্যাকসিন। মূলত SARS-coV-2 জাতীয় অ্যাডিনোভাইরাসের ডিএনএর উপর ভিত্তি করে এই ভ্যাকসিনটি তৈরি। সূত্রের খবর, আগামী সেপ্টেম্বর থেকে স্পুটনিক-ভি-র বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে। প্রথমে ভ্যাকসিন পাবেন সে দেশের চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী ও শিক্ষকেরা। যদিও এখনও এর দাম সম্পর্কে কিছু জানায়নি পুতিন প্রশাসন।
ভারত কবে মিলতে পারে এই ভ্যাকসিন
এদিকে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে গামালায়া রিসার্চ ইন্সটিটিউটের পরিচালক অ্যালেক্সেন্ডার গিন্টসবার্গ বলেন, অ্যাডিনো ভাইরাসের ভিত্তিতে তৈরি নির্জীব কণা ব্যবহার হবে এই ভ্যাকসিনে৷ এই ভ্যাকসিন নিয়ে যাই সমালোচনা হোক না কেন, এতে মানব শরীরে কোনও ক্ষতি হবে না। পাশাপাশি এই বছরের মধ্যে ভ্যাকসিনের কয়েক লক্ষ ডোজ বানানো হবে বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রী ডেনিস মান্তুরফ। ভ্যাকসিন পাঠানোর ব্যাপারে ব্রাজিল ও ভারতের সঙ্গে কথা চলছে বলে জানা যাচ্ছে। যদিও তৃতীয় পর্বের ট্রায়াল শেষ না হলে এই বিষয়ে বিশদে কিছু জানা যাবে না।
করোনার ভ্যাকসিন বিলি নিয়ে বুধবার বিশেষ বৈঠকে বসছে টাস্কফোর্স, ঠিক হবে আগামীর রূপরেখা