For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

যমজ শিশু জন্মের কারণ ও ঝুঁকি সম্পর্কে আপনার যা জানা প্রয়োজন

সম্প্রতি ঢাকার একটি হাসপাতালে এক নারী চার শিশুকে জন্ম দেয়ার পর যমজ শিশু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়।

  • By Bbc Bengali

এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, সম্প্রতি যমজ শিশুর জন্মহার আগের তুলনায় বেড়েছে।
Getty Images
এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, সম্প্রতি যমজ শিশুর জন্মহার আগের তুলনায় বেড়েছে।

ঢাকার একটি হাসপাতালে সম্প্রতি একই সাথে চার সন্তান প্রসব করেছেন এক নারী। এই খবরটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা হচ্ছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক জানান, গত ৩রা জুলাই স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে হাসপাতালের গাইনি বিভাগের ২১২ নম্বর ওয়ার্ডে জন্ম নেয় ওই চার শিশু।

তাদের মা বর্তমানে সুস্থ থাকলেও গুরুতর অবস্থায় ওই চার শিশুকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

তবে সাত মাস গর্ভে থাকার পর শিশুগুলো ভূমিষ্ঠ হওয়া তাদের অবস্থা কিছুটা আশঙ্কাজনক উল্লেখ করে ব্রিগেডিয়ার হক বলছেন,"প্রি-ম্যাচিওর বেবিদের যেভাবে রাখা হয় সেভাবে রাখা হয়েছে। এটাকে সুস্থ বলা মুশকিল"।

মি. হক জানান, নয় মাস বয়স পর্যন্ত তাদেরকে বিশেষ ব্যবস্থায় রাখার দরকার হবে। কারণ যেকোন সময় তাদের যেকোন ধরণের ইনফেকশন বা সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে।

যমজ শিশু বা টুইন

ঢাকার হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ডা. কিশোয়ার সুলতানা বলেন, যমজ শিশু গর্ভে ধারণ করার বিষয়টিকে চিকিৎসা শাস্ত্রে মাল্টিপল প্রেগনেন্সি বা একের অধিক শিশুকে গর্ভে ধারণ করা বলা হয়।

তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেলে ওই নারী চার সন্তানের জন্ম দিলেও সাধারণত এ ধরণের গর্ভাবস্থায় দুটি শিশু এক সাথে জন্মগ্রহণ করে। একে যমজ বা টুইন বলা হয়। তবে তিনটা বা চারটা শিশুও একসাথে জন্ম নিতে পারে।

আরো পড়ুন:

বিশ্বে যত যমজ শিশু জন্ম নেয় তার ৮০ ভাগই আফ্রিকা এবং এশিয়া অঞ্চলে হয়।
Getty Images
বিশ্বে যত যমজ শিশু জন্ম নেয় তার ৮০ ভাগই আফ্রিকা এবং এশিয়া অঞ্চলে হয়।

চলতি বছরের মার্চে যুক্তরাজ্যের হিউম্যান রিপ্রোডাকশন নামে একটি সায়েন্টিফিক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বে ১৬ লাখ যমজ শিশু জন্ম নেয়। তার মানে হচ্ছে প্রতি ৪২টি শিশুর মধ্যে একজন যমজ।

১৬৫টি দেশের ২০১০ থেকে ২০১৫ সালে যমজ সন্তান প্রসবের তথ্য সংগ্রহ করে তা ১৯৮০-১৯৮৫ সালের তথ্যের সাথে তুলনা করা হয় ওই গবেষণায়।

১৯৮০ সালের পর থেকে পরবর্তী ৩০ বছরে যমজ শিশু জন্মদানের ঘটনা তিন গুণ বেড়েছে। বিলম্বে গর্ভধারণ এবং চিকিৎসা প্রযুক্তি যেমন আইভিএফ এর ব্যবহার বেড়ে যাওয়াকেই এর কারণ হিসেবে দেখছেন গবেষকরা।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ১০০০টি প্রসবের ঘটনায় ১২টিই যমজ শিশু প্রসবের ঘটনা ঘটে। এর আগে এই সংখ্যা ছিল ৯টি। তবে হার বৃদ্ধির এই ঘটনা ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকা অঞ্চলেই সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে।

এশিয়া এবং আফ্রিকা অঞ্চলে এর আগে থেকেই যমজ শিশুর জন্মদানের ঘটনা বেশি ছিল।

গবেষণা বলছে, বিশ্বে যত যমজ শিশু জন্ম নেয় তার ৮০ ভাগই আফ্রিকা এবং এশিয়া অঞ্চলে হয়।

এতে দেখা যায়, এশিয়া অঞ্চলে যমজ শিশু জন্মের হার আগের তুলনায় বেড়ে ৩২ শতাংশে এবং উত্তর আমেরিকায় এই হার বেড়ে ৭১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

যে কারণে যমজ শিশুর জন্ম হয়

হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের অধ্যাপক কিশোয়ার সুলতানা বলেন, সাধারণত একজন নারী তখনই গর্ভধারণ করেন যখন তার ওভাম বা ডিম্বাণু কোন একটি শুক্রাণুর সাথে মিলিত হয়।

একজন নারীর শরীর থেকে সাধারণত এক সময়ে একটি ডিম্বাণুই বের হয়। তবে পুরুষদের স্পার্ম বা শুক্রাণু অগণিত থাকে।

যদি কোন স্পার্ম বা শুক্রাণু একটি ডিম্বাণুকে গ্রহণ করতে পারে তাহলে গর্ভধারণ হয়।

কিন্তু যদি একের অধিক ডিম্বাণু বের হয় এবং একের অধিক শুক্রাণু তাদেরকে গ্রহণ করে তাহলে একাধিক শিশু এক সাথে বেড়ে উঠে এবং এর কারণেই যমজ শিশু জন্মায়।

তবে অনেক সময় একটি ডিম্বাণু থেকেও যমজ শিশুর জন্ম হতে পারে।

অধ্যাপক সুলতানা বলেন, এক্ষেত্রে একটি ডিম্বাণু একটি শুক্রাণুর সাথে মিলিত হওয়ার পর যখন দেহ গঠন শুরু হয় তখন কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় একটা কোষ ভেঙ্গে দুটো হয়। দুটো ভেঙ্গে চারটা হয়।

এই সময়ে যদি এই কোষগুলো আলাদা হয়ে পড়ে এবং প্রতিটি কোষ আলাদাভাবে বেড়ে ওঠে তাহলে একই সাথে একাধিক শিশুর জন্ম হতে পারে।

আইডেনটিক্যাল টুইন বা একই ডিম্বাণু থেকে জন্ম নেয়া শিশুরা একই লিঙ্গের হয়।
Getty Images
আইডেনটিক্যাল টুইন বা একই ডিম্বাণু থেকে জন্ম নেয়া শিশুরা একই লিঙ্গের হয়।

অধ্যাপক সুলতানা বলেন, কিভাবে গর্ভধারণ হলো তার উপর ভিত্তি করে যমজ দুই ধরণের হয়ে থাকে।

১. মনোজাইগোটিক টুইন:

অর্থাৎ একটি ডিম্বাণু ভেঙ্গে যখন দুটি বা ততোধিক শিশুর জন্ম হয় তাকে মনোজাইগোটিক টুইন বলা হয়। এ ধরণের শিশুদের আইডেনটিক্যাল টুইনও বলা হয়। সাধারণত এরা দেখতে একই রকম হয় বা উল্লেখযোগ্য সাদৃশ্য থাকে। এরা সাধারণত একই লিঙ্গের হয়ে থাকে। অর্থাৎ হয় দুটো ছেলে বা দুটো মেয়ে হবে।

এদের গায়ের রঙ, চুল ও চোখের রঙ, রক্তের গ্রুপ সবই এক হয়ে থাকে। তবে এ ধরণের যমজ শিশুর সংখ্যা খুব একটা বেশি দেখা যায় না।

২. ফ্র্যাটার্নাল বা ডাইজাইগোটিক টুইন:

এক্ষেত্রে দুটি ডিম্বাণু আলাদা দুটি শুক্রাণুর সাথে মিলিত হয় এবং আলাদা আলাদা ভাবেই বেড়ে ওঠে তাকে ফ্র্যাটার্নাল বা ডাইজাইগোটিক টুইন বলা হয়।

এক্ষেত্রে শিশুর লিঙ্গ এক হতেও পারে আবার নাও পারে। একটি ছেলে একটি মেয়ে হতে পারে। এরা দেখতে এক রকম হয় না। গায়ের রঙ বা রক্তের গ্রুপও আলাদা হতে পারে।

যমজ শিশুর গর্ভাবস্থা

কোন নারী যমজ শিশু নিয়ে গর্ভধারণ করলে গর্ভাবস্থায় এবং সন্তান জন্ম দেয়ার সময় তার ঝুঁকি সাধারণ গর্ভাবস্থার তুলনায় অনেক বেশি থাকে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

অধ্যাপক সুলতানা বলেন, যেকোন টুইন প্রেগনেন্সিকেই তারা হাই রিস্ক প্রেগনেন্সি বা উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন গর্ভাবস্থা বলে ধরে থাকেন।

এ ধরণের গর্ভাবস্থার গর্ভপাতের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে বলে জানান তিনি। এছাড়া গর্ভে বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়া, গর্ভে থাকা অবস্থায় একটি বাচ্চা বেঁচে থাকলেও আরেকটি মারা যাওয়ার মতো গুরুতর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।

মায়ের দিক থেকে গর্ভধারণ করার কারণে যেসব শারীরিক সমস্যা যেমন বমি হওয়া, মাথা ঘোরা এগুলো অনেক বেশি হবে।

"একটা বাচ্চার জন্য যা হতো, তার দ্বিগুণ হবে মায়ের, বমি বেশি হবে," বলেন তিনি।

নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে যমজ শিশুদের জীবিত থাকার হার নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
Getty Images
নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে যমজ শিশুদের জীবিত থাকার হার নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।

এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, ডায়াবেটিসও হতে পারে।

অধ্যাপক সুলতানা বলেন, গর্ভধারণ করলে বাচ্চার সাথে সাথে গর্ভফুল বা প্লাসেন্টাও বাড়তে থাকে। তবে দুটি বাচ্চা থাকার কারণে প্লাসেন্টা একটা সময় পরে গিয়ে আর বড় হতে পারে না। তখন রক্তপাত শুরু হয়ে যায়। অর্থাৎ, প্রসবের আগেই রক্তপাত শুরু হয়। এছাড়া প্রসবের পরেও মায়ের অতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে।

তিনি বলেন, যদি কোন মা জানতে পারেন যে, তার গর্ভে যমজ শিশু রয়েছে তাহলে তাকে অবশ্যই বিশ্রামে থাকতে হবে। এছাড়া নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে যাতে এ ধরণের কোন সমস্যা দেখা দিলে আগে থেকেই ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়।

যমজ শিশু জীবিত থাকার সম্ভাবনা

হিউম্যান রিপ্রোডাকশনে প্রকাশিত ওই গবেষণায় জানা যাচ্ছে যে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে যমজ শিশুদের জীবিত থাকার হার নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।

সাব-সাহারা আফ্রিকা অঞ্চলে অনেক যমজ শিশুই জন্মের প্রথম বছরেই তাদের সহোদরকে হারায়। প্রতিবছর এই সংখ্যা প্রায় দুই লাখ।

ওই গবেষণার একজন গবেষক অধ্যাপক জেরোন স্মিট বলেন, "যেখানে পশ্চিমা অনেক ধনী দেশে যমজ শিশু জন্মদানের হার আফ্রিকার দেশগুলোর কাছাকাছি যাচ্ছে, সেখানে এই দুই অঞ্চলে জন্ম নেয়া শিশুদের জীবিত থাকার হারের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে।"

গবেষকরা বলছেন, ভবিষ্যতের যমজ শিশুর জন্মহারে বড় ভূমিকা রাখবে ভারত এবং চীন।

মানুষের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস, বেশি বয়সে গর্ভধারণ এবং আইভিএফ এর মতো প্রযুক্তির কারণে যমজ শিশুর জন্মহার আরো বাড়বে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

English summary
All you need to know about the causes and risks of having twins
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X