For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

এজেন্ট ব্যাংকিং: গ্রামীণ এলাকায় বেড়ে চলা এই ব্যাংক ব্যাবস্থায় লেনদেন কীভাবে হয়?

বাংলাদেশে ২০১৩ সালে বাংলাদেশে চালু হয়েছিল যে এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যাবস্থা, তার শাখার সংখ্যা এখন ছাড়িয়েছে আট হাজার। কারা, কী কাজে ব্যাবহার করছেন এই ব্যাংকিং?

  • By Bbc Bengali

প্রত্যন্ত এলাকায় ব্যাংকগুলো ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে
BBC
প্রত্যন্ত এলাকায় ব্যাংকগুলো ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে

মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলা সদর থেকে অন্তত দশ কিলোমিটার দুরে থাকেন তফুরা বেগম।

স্বামী বিদেশে থাকেন আর ছেলে স্কুলে পড়ে। কিন্তু বিদেশ থেকে আসা টাকা তোলার জন্য তাকে আর উপজেলা সদরে ব্যাংকে যেতে হয়না গত প্রায় ৫ বছর ধরে।

"আগে তো ব্যাংকে যাইতাম টাকা তুলতে। বছর পাঁচেক হইলো এজেন্টের কাছ থেকে তুলি। পোলার স্কুলের বেতনও ওইখানে জমা দেই," বলছেন তিনি।

তফুরা বেগমের মতো অসংখ্য মানুষ যারা প্রত্যন্ত এলাকায় বাস করেন টাকা জমা দেয়া বা তোলা ছাড়াও নানা ধরণের ব্যাংকিং সেবার জন্য এখন প্রতিনিয়ত ভিড় করেন বিভিন্ন ব্যাংকের এজেন্ট পয়েন্টগুলোতে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে বাংলাদেশে এ ধরণের এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু হয়েছিলো ২০১৩ সালে আর ২০২০ জুন মাস নাগাদ এজেন্ট পয়েন্টগুলোতে অ্যাকাউন্ট হয়েছে ৭৩ লাখ ৫৮ হাজার ১৯০টি।

এর মধ্যে নারীদের অ্যাকাউন্টই আছে ৩৪ লাখ ১০ হাজার ২৭০টি যা মোট অ্যাকাউন্টের ৪৬ শতাংশ।

অন্যদিকে এ মুহূর্তে দেশের তেইশটি ব্যাংক ৮৭৬৪ জন এজেন্টের মোট ১২ হাজার ৪৪৯টি আউটলেটে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা দেয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এজেন্ট পয়েন্টগুলোতে এ যাবৎকাল জমা পড়েছে ১০ হাজার কোটির বেশি টাকা। রেমিটেন্স বিতরণ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।

আর ঋণ বিতরণ হয়েছে এসব পয়েন্টের মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় সাতশ বিশ কোটি টাকা।

মহামারির সময়েও বেড়েছে এজেন্ট ব্যাংকিং

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে এ সময়ে এজেন্ট ও আউটলেট বেড়েছে যথাক্রমে ৬.১০ শতাংশ ও ৪.৮৩ শতাংশ।

আর এ সময়ে নারীদের অ্যাকাউন্ট করার হার বেড়েছে পনের শতাংশেরও বেশি।

"মূলত ২০১৩ সালে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করা হয়েছে সুবিধাবঞ্চিত ও প্রত্যন্ত এলাকা বসবাসকারীরা যারা প্রচলিত ব্যাংকিং সেবার অনেকটাই বাইরে তাদের জন্য। সেভিংস, লোন, রেমিটেন্স ছাড়া পেমেন্ট সার্ভিস যেমন ইউটিলিটি বিল, কর বা সরকারি ভাতা তোলার মতো কাজগুলো এজেন্ট পয়েন্টের মাধ্যমে ব্যাংক করতে পারে," বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে তাদের প্রতিবেদনে।

বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন:

বৈদেশিক মুদ্রার রেকর্ড রিজার্ভের সুবিধা-অসুবিধা কী?

করোনা পরিস্থিতিতে রেমিটেন্স ও রিজার্ভে রেকর্ড কীভাবে সম্ভব হলো

নতুন ব্যাংক নোট: চাইলেই কি ইচ্ছে মতো টাকা ছাপানো যায়?

আর্থিক খাতে সাইবার ক্রাইম ঠেকানো যাচ্ছেনা কেন?

বিকাশ ব্যবহার করে অর্থ পাচার হয় যেভাবে

২০১৭ সালে এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালাও প্রকাশ করেছিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে এজেন্টদের ৮৬ আর আউটলেটের ৮৮ শতাংশই একেবারে গ্রাম পর্যায়ে।

আবার অ্যাকাউন্টের দিক থেকে শহর এলাকায় যেখানে ৯ লাখ ৮০ জাজার ৫১১টি অ্যাকাউন্ট সেখানে গ্রাম এলাকায় হয়েছে ৬৩ লাখ ৭৬হাজার ৬৮৬টি অ্যাকাউন্ট।

আর অ্যাকাউন্টের হিসেবে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের শীর্ষে থাকা পাঁচটি ব্যাংকের নাম উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এগুলো হলো ডাচ বাংলা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ইসলামী ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক।

এ মুহুর্তে গ্রাম এলাকায় সবচেয়ে বেশি এজেন্ট আছে ব্যাংক এশিয়ার যার সংখ্যা ৩৩২৫।

কীভাবে কাজ করে এজেন্ট ব্যাংকিং

ব্যাংক এশিয়ারই একজন কর্মকর্তা বিপুল সরকার এখন মুন্সীগঞ্জের একটি শাখায় ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করছেন।

তিনি বলছেন, "এজেন্ট ব্যাংকিং মডেলটা হলো- একজন গ্রাহক এজেন্ট পয়েন্টে যা করবে সেটা রিয়েল টাইম ব্যাংকিংই করলো। অর্থাৎ মূল শাখায় এসে তিনি যে সার্ভিস পেতেন সেটাই ওখানে পাচ্ছেন। শুধু অতিরিক্ত নিরাপত্তার স্বার্থে এজেন্ট পয়েন্টে কাজ হয় বায়োমেট্রিক্স ডিভাইস ব্যবহার করে, অর্থাৎ প্রত্যেকে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে কাজ করতে হয়। ব্যাংকের মূল অ্যাকাউন্ট খোলার সময় সবাইকেই এই ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে হয়"।

তিনি বলেন একজন ব্যক্তি একটি এজেন্ট পয়েন্টে গিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন বা তার অন্য ব্রাঞ্চে অ্যাকাউন্ট থাকলে তার বিপরীতে সব সেবা নিতে পারবেন।

"টাকা তোলার ব্যবস্থা, টাকা জমা দেয়া, রেমিটেন্স এমনকি অন্য ব্যাংকের হিসেবেও টাকা পাঠানো বা সেখান থেকে নিজের অন্য ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে টাকা আনার কাজও করা যাবে"।

ঝুঁকি কতটা?

মি. সরকার বলছেন, গ্রাহকের জন্য কোনো ঝুঁকিই নেই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে।

"ধরুন একজন এক লাখ টাকা জমা দিলো এজেন্টের কাছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ব্যাংকের কম্পিউটার জেনারেটেড রিসিট পাবেন ও তার ফোনে টাকা জমা হয়ে যাওয়ার এসএমএস আসবে ব্যাংক থেকে। লেনদেনটির সাথে সাথে ব্যাংকের মূল সার্ভারে গ্রাহকের তথ্য হালনাগাদ হয়ে যাবে"।

তিনি বলেন ব্যাংক যেটি করে তা হলো গ্রাহক টাকা দেয়ার সাথে সাথে এজেন্টের অ্যাকাউন্ট থেকে সেই পরিমাণ টাকা ডেবিট করে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে দেয়া হয়। আর গ্রাহকের দেয়া নগদ টাকা এজেন্টের হাতে থাকে।

"টাকা তোলার ক্ষেত্রেও তাই- গ্রাহককে এজেন্ট টাকা দেন এবং সেই টাকা ব্যাংক গ্রাহকের আক্যাউন্ট থেকে এজেন্ট অ্যাকাউন্টে দিয়ে দেয় ব্যাংক। ফলে এখানে গ্রাহকদের দিকে ঝুঁকির কিছু নেই," বলছিলেন মিস্টার সরকার।

তিনি জানান ব্যাংক এশিয়া বাংলাদেশের প্রায় তিন হাজার ইউনিয়নে থাকা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা দেয়া শুরু করেছে।

প্রথম এজেন্ট: মুহাম্মদ ইসমাইল শেখ

বাংলাদেশে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সূচনা হয়েছিলো মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে মুহাম্মদ ইসমাইল শেখের মাধ্যমে।

"ব্যাংক এশিয়ার তখনকার ডিএমডি আরফান আলী আমাদের এলাকার মানুষ। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানকে বলেছিলেন, এ ধরণের এজেন্ট হওয়ার মতো নির্ভরযোগ্য কয়েকজন তরুণ দরকার। চেয়ারম্যানই আমার নাম দিয়েছিলেন। পরে ব্যাংক আমাকে সিলেক্ট করেছিলো," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মিস্টার শেখ যিনি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ডিলারশিপের কাজ করেন।

"স্বাধীন বিজনেস। সব নিয়ন্ত্রণ করবে ব্যাংক। একটা চুক্তির মাধ্যমে ব্যাংক এজেন্সি দিয়ে থাকে। সদর থেকে সাড়ে ছয় কিলোমিটার দুরে আমার প্রতিষ্ঠান। কাস্টমার সব লেনদেন ব্যাংকের সাথেই করে। শুধু লেনদেনের মাধ্যম আমি," বলছিলেন তিনি।

মুহাম্মদ ইসমাইল শেখ বলছেন, এখন অনেকটাই সহজ হয়েছে কারণ মানুষ নিজ থেকেই আসছে এজেন্ট পয়েন্টগুলোতে।

"কিন্তু শুরুতে খুবই কষ্ট হয়েছিলো মানুষকে বোঝাতে। অন্ধকার থেকে শুরুতে করেছিলাম। এখন পাঁচ হাজার গ্রাহক আছে আমার এখানে এবং প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় আশি থেকে একশটি। সম্প্রতি স্কুলের সব ব্যাংকিং সেবাও দেয়া শুরু করেছি"।

তিনি জানান টাকার ভলিউম বেড়ে যাওয়ায় অনেক এজেন্ট এখন ভল্ট আনছেন নিরাপত্তার জন্য।

এজেন্ট কারা হতে পারবেন : তারা কি পারবেন আর কি পারবেননা

মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি অব বাংলাদেশ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত এনজিও ও অন্যান্য নিবন্ধিত এনজিও, কো-অপারেটিভ সোসাইটি (সমবায় সমিতি আইন, ২০০১ অধীনে), ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিবন্ধিত ডাকঘর, কুরিয়ার এবং মেইলিং সার্ভিস কোম্পানি, কোম্পানি আইন ১৯৯৪-এর অধীনে নিবন্ধিত কোম্পানি, মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর এজেন্ট, গ্রামীণ ও শহরের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান অফিস, ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র, আইটি ভিত্তিক আর্থিক সেবা, বীমা কোম্পানির এজেন্ট, ফার্মেসির মালিক, মুদি দোকান এবং পেট্রল পাম্প/গ্যাস স্টেশন পরিচালনা করতে সক্ষম শিক্ষিত ব্যক্তি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সুপারিশকৃত বা অনুমোদিত যেকোনো প্রতিষ্ঠান।

তবে এক ব্যাংকের এজেন্ট অন্য ব্যাংকের এজেন্ট হতে পারবে না।

এজেন্টকে ব্যাংকের দেয়া ইলেকট্রনিক ডিভাইস রক্ষণাবেক্ষণ ও সব লেনদেনের রেকর্ড সংরক্ষণ করতে হবে। ব্যাংককে অডিটে সহযোগিতা করতে হবে। ঋণ বিতরণ ও কিস্তি আদায়ের দায়িত্বও এজেন্টের।

কোনোভাবেই এজেন্ট কোনো বাড়তি চার্জ আরোপ করতে পারবে না এবং আঙ্গুলের ছাপ ও কার্ড ছাড়া কোনো লেনদেন করতে পারবেনা।

English summary
Agent Banking: How do transactions take place in this growing banking system in rural areas?
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X