১৪ দিন পর চীনা স্বর্ণখনির অন্ধকার গহ্বর থেকে উদ্ধার পেল ১১ শ্রমিক
সাত দিন ধরে জানাই যায়নি যে এরা আদৌ বেঁচে আছেন কিনা। এর পরের সাত দিন ধরে চলে এদের প্রাণে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই। সেই লড়াই এক নাটকীয় মোড় নেয় রোববার।
চীনের এক স্বর্ণ খনিতে ১৪ দিন আটক থাকার পর উদ্ধার করা হয়েছে ১১ জন শ্রমিককে।
রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়েছে, এই দলটি এর আগে উদ্ধার-কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছিল এবং তাদের তাদের খাবার ও অন্যান্য রসদপত্র পাঠানো হয়েছিল।
টেলিভিশন ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, প্রথম খনি শ্রমিককে চোখ বাঁধা অবস্থায় তুলে আনা হচ্ছে। দীর্ঘদিন সূর্যালোক না দেখায় তার চোখকে রক্ষার জন্য এই ব্যবস্থা নেয়া হয়।
গত ১০ই জানুয়ারি শানডং প্রদেশের হুসান স্বর্ণখনিতে এক বিস্ফোরণের পর খনির প্রবেশ মুখটি ধসে পড়েছিল।
এর ফলে খনিতে কর্মরত ২২ জন শ্রমিক মাটির ২,০০০ ফুট (৬৬০ মিটার) গভীরে আটকা পড়ে যান।
তাদের মধ্যে একজন মারা যায়। বাকি ১০ জন এখনও বেঁচে আছেন কিনা, তা এখনও পরিষ্কার না।
বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি।
উদ্ধার হওয়া প্রথম খনি শ্রমিককে রোববার সকালে তুলে আনা হয়। তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ডাক্তাররা তার অবস্থা 'খুবই দুর্বল' বলে বর্ণনা করেছেন।
তার উদ্ধারের এক ঘণ্টা পর খনির ভিন্ন একটি জায়গা থেকে আরও আটজন শ্রমিককে তুলে আনা হয়।
চীনা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিসিটিভির খবরে বলা হয়েছে, এই দলের একজন আহত হয়েছেন। অন্যদের দেখা গেছে উদ্ধার-কর্মীদের সাহায্য নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের দিকে হেঁটে যাচ্ছেন।
এই ঘটনার পর উদ্ধার তৎপরতার গতি বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আটকে পড়া বাদবাকি শ্রমিকদের উদ্ধার করতে সুড়ঙ্গ যে খোঁড়া হচ্ছে - তাতে কয়েক সপ্তাহ সময় লেগে যেতে পারে।
প্রথম যে ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয় তিনি ১০ জনের দলের মধ্যে ছিলেন না। তাকে উদ্ধার করা হয় স্বর্ণ খনির ভিন্ন একটি এলাকা থেকে।
আরও পড়তে পারেন:
মিয়ানমারের খনিতে মুত্যুর ঝুঁকি নিয়ে জেড পাথর খুঁজে বেড়ায় যারা
খনি দুর্ঘটনায় ইন্দোনেশিয়ায় অন্তত ৬০ জন নিহত
ঐ দলটি উদ্ধার কর্মীদের জানিয়েছে যে তাদের আরও ১০০ মিটার নীচে আরেক শ্রমিকের সাথে তাদের একবার যোগাযোগ হয়। কিন্তু এরপর তার কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
বাকি নিখোঁজ শ্রমিকদের সাথে খনি কর্তৃপক্ষ এখনও যোগাযোগ করে উঠতে পারেনি।
যেভাবে আটকা পড়লেন খনি শ্রমিকরা
ঐ বিস্ফোরণে খনির প্রবেশ মুখটি ধসে পড়ে এবং নিচে কর্মরত শ্রমিকদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এক সপ্তাহ সময় ধরে জানাই যাচ্ছিল না যে এরা আদৌ প্রাণে বেঁচে আছেন কিনা।
গত রোববার উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের ভেতর দিয়ে যেসব রশি নামিয়ে দিয়েছিলেন সেখানে একটা টান অনুভব করেন।
এরপর আটকে থাকা শ্রমিকরা রাশিতে বেঁধে এক টুকরো কাগজ উপরে পাঠাতে সক্ষম হন।
সেখান থেকেই জানা যায় যে ঐ দলে ১১ জন শ্রমিক জীবিত আছেন, এবং তাদের চেয়ে মাটির আরও একটু নীচে একজন রয়েছেন।
চীনে শিল্পখাতে নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ বেশ দুর্বল এবং খনি দুর্ঘটনা কোন বিরল ঘটনা নয়।
গত বছর ডিসেম্বর মাসে একটি কয়লাখনিতে কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়ায় ২৩ জন শ্রমিক প্রাণ হারান।
গত সেপ্টেম্বরে চংকিং শহরের বাইরে আরেকটি খনিতে একই কারণে মারায় যায় ১৬ জন শ্রমিক।
চীনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় গুইঝাও প্রদেশে এক কয়লাখনিতে বিস্ফোরণে নিহত হন ১৪ জন।
যেভাবে এতদিন বেঁচে দিলেন শ্রমিকরা
একই ধরনের খবর:
এখনও মেঘালয়ে পানির নিচে ১৪ জন খনি শ্রমিক
হিলিতে লোহার খনি: বাণিজ্যিক উত্তোলন কতটা সম্ভব?
মাটির ২০০০ ফুট নীচে গত ১৪ দিন ধরে এসব শ্রমিক নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের মধ্যে আটকা পড়ে ছিলেন।
এদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারার পর উদ্ধার-কর্মীরা তাদের সাথে যোগাযোগের লাইন প্রতিষ্ঠা করেন। অপ্রশস্ত এক গর্ত দিয়ে তাদের জন্য ওষুধপত্র পাঠানো হয়। পাঠানো হয় পরিজ এবং অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার।
সেগুলোর সদ্ব্যবহার করেই অন্ধকারে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যান এসব শ্রমিক।