অ্যান্টার্কটিকার ওয়েডেল সাগরের থেকে মাছের বৃহত্তম প্রজনন আবিষ্কার, কী জানালেন গবেষকরা
অ্যান্টার্কটিকার ওয়েডেল সাগরের থেকে মাছের বৃহত্তম প্রজনন আবিষ্কার, কী জানালেন গবেষকরা
ঘটনাটি ঘটেছিল ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। একদল জার্মান গবেষক জাহাজে করে অ্যান্টার্কটিকার ওয়েডেল সাগরের দক্ষিণে ফিলচনা যাচ্ছিলেন, সেই সময় আচমকাই তাঁরা আইস শেল্ফ কাছে বিশ্বের বৃহত্তম মাছের প্রজনন এলাকা খুঁজে পান। যেটি সমুদ্রতল থেকে ৪২০ নীচ থেকে দেখা যাচ্ছিল। যেটি বিজ্ঞানীদের ক্যামেরায় ধরা পড়ে। বিষয়টি তাঁরা যত পর্যবেক্ষণ করছিলেন ততই বাড়ছিল উত্তজনা।
গবেষকরা কি জানান
গবেষকরা জানান, সমুদ্রের তলদেশে যে মাছগুলি দেখা যাচ্ছিল সেগুলি নিওপেজটোপসিস আয়নাহ প্রজাতির আইসফিশ। মাছের অনেক ছবি তাঁরা ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন। তাঁরা দাবি করে জানান, মাছের বসবাসের জায়গাগুলি খুব ঘন। একেক জায়গায় ৬০ মিলিয়ন করে আইসফিশ দেখা গেছে। গবেষণাটি করেছেন আলফ্রেড ওয়েজেনার ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বর্তমানে বৈজ্ঞানিক জার্নাল কারেন্ট বায়োলজির ওপর রিসার্চ করছেন।
আইসফিশ কী
আইসফিশ সম্পর্কে গবেষকরা জানান, গড়ে প্রতি ৩ বর্গ মিটারে একটি প্রজনন স্থান দখল করে তারা অবস্থান করছে। একেক জায়গায় প্রায় ৬০ মিলিয়ন করে মাছ বাসা বেঁধে হয়েছে। এমন জায়গা তাঁরা অনেকগুলি দেখেছেন।
প্রায় ২৪০ বর্গকিলোমিটারের জুড়ে অবস্থান করছে, যা মাল্টা দ্বীপের আকার বলা যায়। আলফ্রেড ওয়েজেনার ইনস্টিটিউট, হেলমহোল্টজ সেন্টার ফর পোলার অ্যান্ড মেরিন রিসার্চের জীববিজ্ঞানী ও প্রধান লেখক জনান, এই ওয়েডেল সাগরে আইসফিশের এত বিশাল প্রজনন এলাকা আগে কেউ আবিষ্কার করেনি। ১৯৮০ সালের প্রথম দিক আলফ্রেড ওয়েজেনার ইনস্টিটিউট আইসব্রেকার পোলারস্টার্নের জায়গাটি পরিদর্শন করে ছিলেন। এখন পর্যন্ত এখানে শুধুমাত্র পৃথক Neopagetopsis ionah বা ছোট ক্লাস্টার শনাক্ত করা হয়েছে।
কোথায় বাস করে এই মাছ?
ওএফওবিএস, ওশান ফ্লোর অবজারভেশন ও বাথিমেট্রি সিস্টেম এই আইসফিশ শনাক্ত ও পর্যবেক্ষণ করতে সাহায্যও করেছে। পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, বরফ ঢাকা সমুদ্রের মতো ঠাণ্ডা ভাবাপন্ন পরিবেশে বাস করে এই আইসফিশ।
AWI বিশেষজ্ঞরা কী জানালেন
AWI বিশেষজ্ঞ জানান, একটি বিশেষ ক্যামেরা যেটি বিশেষ ফাইবার-অপ্টিক ও বিশেষ পাওয়ার তারের ওপর এটি তৈরি। যা সমুদ্রতল থেকে প্রায় দেড় মিটার উপরে টানা হয়। মাছের বাসাগুলি দেখার পর আমরা একটি বোর্ডে করে জায়গাটিতে ঘুরতে শুরু করি। বলা যায় জায়গায়টার কোন শেষ নেই। মাছের বাসাগুলির ব্যাস ১ মিটারের ৩ চতুর্থাংশ। বলা বাহুল্য, তারা প্রানীর চেয়ে অনেক বেশি এলআকা জুড়ে রয়েছে। যা আমরা সাধারণত OFOBS সিস্টেমের সাথে শনাক্ত করে থাকি।
অটুন পার্সার মত কী
অটুন পার্সার বলেন, মাটির ওপরের প্রায় ৩ মিটার ও টোয়িংয়ের গতি তিন নট পর্যন্ত বৃদ্ধি করে আমার এত বড় এলাকা পরিদর্শন করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা ৪৫,৬০০ বর্গ মিটার এলাকা ঘুরেছি। তার মধ্যে ১৬,১৬০ টি মাছের বাসা খুঁজে বার করেছি। আইসফিশের নানান ছবি ও ভিডিও আমরা ক্যামেরাবন্দি করেছি।
পাশাপাশি তিনি আরও জানান, তোলা ছবিতে আমরা দেখেছি, ১৫ সেন্টিমিটার গভীর ও ৭৫ সেন্টিমিটার ব্যাসের গোলাকার জায়গায় মাছের বসবাস। সেখানে দেখা গেছে বিভিন্ন ধরণের মাছের বাসা আমরা আলাদা করেছি। যার মধ্যে অ্যাক্টিভ বাসা ১৫০০ থেকে ২৫০০ টিতে ডিম। আবার অনেকগুলি অব্যবহৃত বাসা ছিল। সেই সঙ্গে রয়েছে কিছু মৃত মাছও। মাছের বাসা মোট শনাক্ত করেছি ১০০,০০০টি। ৬০ হাজার টন মাছ খাবার খোঁজার জন্য সমুদের নীচে ঘুরছিল।
বেটিনা স্টার্ক ওয়াটজিংগার কী বললেন
বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানানি এমন চমকপ্রদ আবিষ্কারের জন্য। তাঁদের এই গবেষণা জার্মান সামুদ্রিক ও মেরু গবেষণাকে যুক্তিযুক্ত করে তুলেছে। BMBF এখনও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে, নতুন কিছু তথ্যের জন্য। ২০৩০ সাল পর্যন্ত এই গবেষণা চলবে বলে আশা করা যায়।
জীববিজ্ঞানীর প্রফেসর কী মত পোষণ করলেন
এডব্লিউআই ডিরেক্টর ও গভীর-সমুদ্র জীববিজ্ঞানী প্রফেসর অ্যান্টজে বোয়েটিউসেরমতে, বর্তমানে আরও গবেষণার দরকার। ERC আমরা তৈরি করছি। অজানা বাস্তুতন্ত্রগুলির বিষয়ে আমরা গবেষণা করা। আমি সরাসরি এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত নয়। ২০১৬ সাল থেকে আলফ্রেড ওয়েজেনার ইনস্টিটিউট, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তাঁর সদস্য রাষ্ট্রগুলি বাস্তুতন্ত্র ও মাছের প্রজননের ওপর গবেষণা করছেন।
তিনি আরও জানান, দুর্ভাগ্যবশত Weddell Sea MPA এখনও CCAMLR দ্বারা এখনও সঠিকভাবে গৃহীত করা হয়নি। CCAMLR সদস্যরা জানিয়েছেন,কীভাবে এত বড় এলাকা জুড়ে এই আইস ফিশের বাস । আরও কতটা গভীর তা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।