ইতিহাস রচনা এই পাক হিন্দু মহিলার, বললেন সিংহের সঙ্গে লড়তেও ভয় পাই না
ইতিহাস গড়লেন পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের এক হিন্দু মহিলা। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মেঘওয়ারের থেকে তিনিই প্রথম প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ইতিহাস রচনা করলেন পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের বাসিন্দা সুনিতা পারমার। প্রান্তিকেরও প্রান্তিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হয়ে সিন্ধ প্রদেশের প্রাদেশিক নির্বাচনে প্রার্থী হলেন তিনি। পাকিস্তানে হিন্দুরা সংখ্য়ালঘু, তার মধ্যে আরও প্রান্তিক সম্প্রদায় মেঘওয়ার। সেই সম্প্রদায়ের এক মহিলা হয়েই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
একেবারেই গ্রামের মেয়ে সুনিতা। ঘরকন্য়ার কাজ নিয়েই থাকতেন। কিন্তু এবছরের ভোটের কথা শুরু হতেই তাঁর মনে হয় একটা কিছু করা দরকার। কারণ এর আগের কোনও সরকারই তাদের প্রতিশ্রুতি রাখেনি। এলাকার কোনও উন্নয়নই হয়নি। তিনি জানান, 'এটা একুশ শতক হলেও, এখনও আমাদের এখানে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবাটুকুও মেলে না। মেয়েদের জন্য ঠিকঠাক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও নেই।'
জয়ী হলে এই দুটি দিকেই প্রধানত জোর দেবেন বলে প্রচার করছেন সুনিতা। বিশেষ করে নারী শিক্ষাকে তুলে ধরাই তাঁর লক্ষ্য। কারণ তিনি মনে করেন 'একমাত্র শিক্ষাই নারীদের শক্তিশালি ও সম্বৃদ্ধ করে তোলে।' আর এই নারীশক্তির ভরসাতেই তিনি ভোট বৈতরণী পার হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
তাঁর প্রচারে প্রথম সারিতে থাকছেন মহিলারাই। তিনি লড়ছেন সিন্ধ প্রদেশের পিএস-৫৬ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে। সুনিতা তাঁর মহিলা-বাহিনী নিয়ে এলাকার প্রত্যেকটি বাড়িতে যাচ্ছেন। রাজনীতিতে একেবারে নতুন হলেও এলাকার মানুষের কাছ থেকে সাড়া পাচ্ছেন ভালই, বলে দাবি তাঁদের। সুনিতা বলেন 'একটা সময় ছিল যখন মহিলাদের দুর্বল বলে মনে করা হত। কিন্তু সেইদিন আর নেই। আমি নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। এটা একুশ শতক, এখন আমরা মহিলারা সিংহের সঙ্গেও লড়তে ভয় পাই না।'
পিএস-৫৬ বিধানসভা কেন্দ্রটি সিন্ধ প্রদেশের থর্পর্কর জেলায় অবস্থিত। গোটা পাকিস্তানের মধ্যে এই জেলাটিতেই সবচেয়ে বেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। তাদের আশীর্বাদ সবটাই সুনিতার ঝুলিতে যাবে বলে মনে করছেন পাকিস্তানের ভোট বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি মহিলা ভোটারদের মধ্যেও অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁর যথেষ্ট জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে। তাই নির্বাচনে জিতে আরও বড় ইতিহাসের অংশ হয়ে উঠতে পারেন তিনি বলেই ধারণা তাঁদের।
গত মার্চেই কৃষ্ণা কুমার কোহলি পাকিস্তানের প্রথম দলিত হিন্দু সেনেটর নির্বাচিত হয়েছেন। তবে তা ছিল মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনে পাকিস্তান পিপলস পার্টির মনোনয়নে পাওয়া পদ। সুনিতার মতো জনগণের সামনে তাঁকে পরীক্ষা দিতে হয়নি। সিন্ধ প্রদেশের ভোট আগামী ২৫ জুলাই।