ট্রাম্প প্রশাসনের শূন্য-সহনশীলতা নীতির শিকার ৫২ ভারতীয়, বাবা-মায়ের থেকে বিচ্ছিন্ন সন্তানরা
অবৈধ অভিবাসীদের ক্ষেত্রে আমেরিকার ট্রাম্প প্রশাসনের শূন্য-সহনশীলতা নীতির আওতায় ৫২ জন ভারতীয় অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে এবং তাদের সন্তানদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার ট্রাম্প প্রশাসনের 'শূন্য-সহনশীলতা' নীতির শিকার হয়েছেন ৫০ জনেরও বেশি ভারতীয়। এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় একটি অ্যাক্টিভিস্ট সংগঠন মঙ্গলবার জানিয়েছে এই ভারতীয় অভিবাসীদের অরেগনে একটি ফেডারেল কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে তাদের সন্তানদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। এতদিন ল্যাটিনো-হিসপ্যানিক অভিবাসীদের এ ধরণের অত্যাচারের শিকার হওয়ার কথা জানা গেলেও এই প্রথম ভারতীয় অভিবাসীদের কথাটা জানা যাওয়ায় হইচই পড়েছে মার্কিন মুলূকে।
গত এক মাসে মোট ১২৩ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করে পাঠানো হয়েছে ইয়ামহিল কাউন্টির অরেগন শেরিডান ফেডারেল কারাগারে। দ্য এশিয়া-প্যাশিফিক আমেরিকান নেটওয়ার্ক জানিযেছে এই বন্দি ১২৩ জনের অধিকাংশই দক্ষিণ এশীয়, যারা প্রাথমিকভাবে হিন্দি এবং পাঞ্জাবিতে কথা বলে। বাকিরা চিনা অভিবাসী। সংগঠনটি জানিয়েছে এই বন্দিদের বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। ভাষা সমস্যায় তারা নিজেদের কথা বোঝাতেও পারছেন না। কারাগারে তাদের উপর অত্যাচারের ঝুঁকি আছে বলেও সতর্ক করেছে সংগঠনটি।
ওই সংগঠন আরও জানিয়েছে আটক অভিবাসীদের থেকে তাদের শিশুদের আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। তবে ঠিক কজনের ক্ষেত্রে এমনটা করা হয়েছে তা নির্দিষ্ট করে জানায়নি তারা। মুল্টনোমা কাউন্টির কমিশনার-ইলেক্ট সুশিলা জয়পাল বলেন '২০০০ শিশুকে তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। কেউ কেউ গত ২ মাস তাদের বাবা-মা কে দেখেনি। এটি নিষ্ঠুর এবং অস্বাভাবিক। পরিবারের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানোর এই নীতি এখনই বন্ধ করতে হবে। সব বন্দীদের আইনগত প্রতিনিধিত্ব এবং ন্যায়সঙ্গত আচরণ পাওয়ার অধিকার আছে। সবার আগে তাদের শিশুরা কোথায় ও তাদের কী অবস্থায় রাখা হয়েছে তা স্বচ্ছভাবে জানাতে হবে।'
এতদিন আমেরিকায় অভিবাসীদের উপর প্রশাসনের অত্যাচারের অভিযোগের মূল ফোকাসটা ছিল ল্যাটিনো বা হিস্পানিক ইমিগ্র্যান্টদের নিয়ে। দু-একজন ভারতীয় অভিবাসীদের আটক রাখার বিষয়ে কথা হলেও তা মার্কিনীদের জাতীয় মনোযোগ আকর্ষণের মতো জায়গায় পৌঁছায়নি। কিন্তু অরেগনের কথা প্রকাশ্যে আসার পর এনিয়ে এখন আমেরিকায় যথেষ্ট শোরগোল পড়ে গিয়েছে। অরেগন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট দলের চারজনের এক প্রতিনিধিদল গত শনিবার শেরিডান কারাগারে যান। আটকদের অবস্থা দেখে বেরনোর সময় রীতিমতো ক্রুদ্ধ ও উত্তেজিত ছিলেন তাঁরা।
জানা গিয়েছে, অভিবাসীরা রাজনীতিবিদদেরকে জানিয়েছেন তাদের দিনে ২২ থেকে ২৩ ঘন্টা আটকে রাখা হয়। এক-একটি সেলে গাদাগাদি করে ৩ জন করে ব্যক্তিকে আটকে রাখা হয়। মার্কিন আইনে অপরাধীদের প্রত্যেকের আইনি সাহায্য় পাওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু এই বন্দিদের কোনও আইনজীবীর সঙ্গেও কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয় না। ভাষা সমস্যা তো আছেই। যারা পরিবার নিয়ে পারি দিয়েছিলেন আমেরিকায়, তারা এখন জানেন না তাদের স্ত্রী বা সন্তানরা কোথায় আছে। তাদের আশঙ্কা, একদিন হয়তো তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে, আর তারা হয়তো চিরকালের মতো পরিবারের থেকে আলাদা হয়ে যাবেন। অরেগনের মার্কিন প্রতিনিধি আর্ল ব্লুমেনওয়ার বলেন, 'এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এক লজ্জাজনক সময়। ইমিগ্রেশন নিয়ে আলাদা আলাদা মত থাকতেই পারে, কিন্তু কোনও শিশুকে বাবা-মা'র কোল থেকে সরানো উচিত নয়।'
আটক ভারতীয়দের বেশইরভাগই শিখ বা খ্রিস্টান। তারা মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি দলকে জানান, সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের ধর্মীয় নিপীড়নের হাত থেকে বাঁচতেই তাঁরা দেশ থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। তারা আরও দাবি করেন, আটক করার পর থেকে ওই প্রতিনিধিদলের সদস্যরাই প্রথম বাইরের লোক, যাদের সঙ্গে তাদের কথা হচ্ছে।