করোনা রুখতে গিয়ে ইরানে অন্ধবিশ্বাসের বলি ৩০০, বিষাক্ত রাসায়নিক খেয়ে অসুস্থ আরও ১০০০
করোনা রুখতে গিয়ে ইরানে অন্ধবিশ্বাসের বলি ৩০০, বিষাক্ত রাসায়নিক খেয়ে অসুস্থ আরও ১০০০
নোভেল করোনার আবহে আতঙ্কের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেলে ইরানে। মাস্ক ও হাজমাত স্যুট পরিহিত একজন ইরানিয়ান স্বাস্থ্যকর্মী ৫ বছর বয়সী একটি ছেলের পাশে দাঁড়িয়ে মানুষকে আর্জি করতে দেখা যায় যাতে কেউ করোনার ভয়ে রাসায়নিক অ্যালকোহল পান না করেন। বর্তমানে ছেলেটি মিথানল পান করার ফলে সম্পূর্ণরূপে অন্ধ, তার চিকিৎসা চলছে।
করোনা নিয়ে গুজব ইরানে
ইরানিয়ান মিডিয়ার সূত্র ধরে জানা যায়, মিথানল পানের ফলে ৩০০জনের মৃত্যু ঘটেছে, মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে প্রায় ১০০০। ইরানে করোনা রুখতে মিথানল পানের গুজব ছড়ানোর জন্যে দেশে মিথানল আমদানি করেন যেসকল ব্যবসায়ী, তাঁরা প্রত্যেকেই সন্দেহের খাতায়।
করোনা ও মিথানলের জোড়া তান্ডবে ইরান বিপাকে
অসলোর ক্লিনিক্যাল বিষবিজ্ঞানী ডঃ ন্যুট এরিক হোভডা জানিয়েছেন, "মানুষ করোনার ভয়ে আশেপাশের অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থকে তুচ্ছজ্ঞান করছে। তারা কি পান করছে তারা জানে না এবং আমার বিশ্বাস, মিথানল বিষক্রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি সংখ্যার থেকে অনেক বেশি।" বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে করোনার উপসর্গ শুধু হালকা জ্বর আর কাশিতেই থেমে থাকছে যা দু-তিনসপ্তাহের মধ্যে কেটে যাচ্ছে। কিন্তু আগে থেকেই অসুস্থ বয়োজ্যেষ্ঠদের ক্ষেত্রে এটি ডেকে আনছে প্রচন্ড জ্বর, নিউমোনিয়া এবং ক্রমান্বয়ে মৃত্যু।
কিভাবে গুজব জায়গা করে নিচ্ছে আতঙ্কিত ইরানবাসীর মনে
এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা কোভিড-১৯ সম্পূর্ণ নিরাময়ের কোনো ঔষধি আবিষ্কার করে উঠতে পারেননি। কিন্তু প্রায় ৮০মিলিয়ন জনসংখ্যার ইরানে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফরোয়ার্ড করা মেসেজে ছড়িয়ে পড়ছে গুজব। এমনই একটি মেসেজে দাবি করা হয়েছে, এক ব্রিটিশ স্কুল শিক্ষক এবং অন্যান্যরা মধুমিশ্রিত হুইস্কি খেয়ে নিজেদের করোনা নিরাময় করেছেন, ঘটনাটি নাকি ফেব্রুয়ারির কোনো এক ট্যাবলয়েড স্টোরি থেকে পাওয়া। মেসেজে অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজারের ব্যবহার করার খবরে অনেকেই করোনা রোখার পন্থা হিসেবে মিথানল খেতে শুরু করেন, যার ফলাফল অত্যন্ত গুরুতর।
ইতিমধ্যেই এই মুসলিম প্রজাতন্ত্রে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২৯,০০০। মৃত্যু হয়েছে ২২০০জনের। আন্তর্জাতিক সূত্রে খবর, ইরানিয়ান রাজনৈতিকরা লোকসভা নির্বাচনের খাতিরে আসল সংখ্যা লুকিয়ে রাখতে পারেন।
ইরানে মিথানল আতঙ্ক যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া
করোনার আতঙ্ক, অশিক্ষা এবং আন্তর্জালে ভুল তথ্য, সব মিলিয়ে ইরানবাসী দিশেহারা হয়ে ঝুঁকেছেন মিথানলের দিকে। ফল হয়েছে মারাত্মক। বাইরে থেকে আমদানি করা মিথানল মিশ্রিত মদ্য পান করে ইতিমধ্যে ইরানের খুজেস্টান ও সিরাজের অধিবাসীরা অসুস্থ। কারাজ ও ইয়াজিদ শহরেও অসুস্থের খবর মিলেছে।
মিথানল কি ? কতটা ক্ষতিকারক
ইরান সরকারের নিয়ম মেনে মিথানলের সঙ্গে রাসায়নিক মিশিয়ে রঙিন করা হয় যাতে সাধারণ মানুষ ইথানল ও মিথানলের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। ইথানল অন্য একটি কোহল গ্রূপের যৌগ যেটি নানারকমের পানীয় প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়, যদিও ইথানলের ব্যবহার ইরানে আইনত নিষিদ্ধ। ডঃ হোভডা জানিয়েছেন যে, ইরানের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বিক্রির আগে মিথানলের বর্ণকে পুনরায় লোপাট করে 'পানীয়ের যোগ্য' বলে বাজারে চালান করে।মাঝেমধ্যে মদ্যের যোগান কম থাকলে, মিথানল মিশিয়ে তা ঠিক করা হয়। মিথানল একটি বর্ণগন্ধহীন অতি ক্ষতিকারক যৌগ যেটি ডেকে আনতে পারে অন্ত্রের সমস্যা, মাথার মারাত্মক ক্ষতি। মিথানল অতিমাত্রায় শরীরে গেলে বুকের মারাত্মক যন্ত্রণা, পাকস্থলীর ক্ষতি থেকে শুরু করে কোমা পর্যন্ত হতে পারে।
মিথানলের অযাচিত ব্যবহারে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে মারণ ব্যাধি
ইরানের কারমানশাহ শহরের ডঃ জাভেদ আমিনী সোমান জানিয়েছেন, মিথানল শরীর থেকে ভাইরাস ধুয়ে ফেলতে পারে না, বরং ডেকে আনতে পারে মারাত্মক অসুস্থতা। কারমানশাহ শহরে মিথানল পান করে অসুস্থ অনেকে। করোনা ছড়িয়ে পড়ার আগেই ২০১৮-এর সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবররের মাঝে মিথানল পান করে ইরানে অসুস্থ হন ৭৬৮জন, মারা যান ৭৬জন।
কম্বোডিয়ায় বাজেয়াপ্ত ৪,২০০লিটার মিথানল
অন্যদিকে অন্যান্য মুসলিম দেশ যেখানে মদ্যপান আইনত নিষিদ্ধ, সেখানেও মিথানলের এমন বাড়বাড়ন্ত দেখা যায়। বৌদ্ধ দেশ কম্বোডিয়ায় বিষাক্ত স্যানিটাইজার বানানোর অপরাধে প্রায় ৪,২০০লিটার মিথানল বাজেয়াপ্ত হয়েছে বলে খবর। ইরানে মদ্যপান করলে একজন মুসলিমকে জরিমানা দিতে হয়, উপরন্তু ৮০বার বেত্রাঘাত সহ্য করতে হয়। খ্রিস্টান, ইহুদি এবং অন্যান্যরা ব্যক্তিগত পরিসরে মদ্যপান করতে পারেন।