For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচন: পর্দার ভেতরে-বাইরে যা ঘটেছিল

পর্যবেক্ষকদের মতে, বাংলাদেশের সাধারন নির্বাচনের ইতিহাসে ২০০৮ সালের নির্বাচনটি ছিল সর্বশেষ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। সেই নির্বাচনের পর এক যুগ পূর্ণ হয়েছে আজ।

  • By Bbc Bengali

২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ
Getty Images
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ

২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বরের নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটি বাক বদল হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, বাংলাদেশের সাধারন নির্বাচনের ইতিহাসে ২০০৮ সালের নির্বাচনটি ছিল সর্বশেষ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।

এরপর ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে আরো দুটি সাধারন নির্বাচন হয়েছে বটে, কিন্তু সেসব নির্বাচনের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বড় ধরণের প্রশ্ন রয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ একটানা ১২ বছর ক্ষমতায় রয়েছে।

২০০৮ সালের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট

২০০১ সালে নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবার পরে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা বাড়িয়ে সংবিধানে একটি বড় সংশোধনী আনে বিএনপি সরকার। অভিযোগ রয়েছে, নিজেদের পছন্দের প্রধান বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে পাওয়ার জন্য এই কাজ করেছিল বিএনপি সরকার। এর উদ্দেশ্য ছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নিজেদের কব্জায় রেখে নির্বাচনের সময় সুবিধা আদায় করা।

এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে তখনকার বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। সংঘাতময় এক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ২০০৭ সালের ১১ই জানুয়ারি রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে সেনাবাহিনী। জারী করা হয় জরুরী অবস্থা।

ড. ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে একটি নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হলেও কার্যত সেটি পরিচালনা করেছে সেনাবাহিনী।

নির্বাচন আয়োজন

ক্ষমতা গ্রহণের কিছুদিনের মধ্যেই ড. ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে সরকার আভাস দিয়েছিল যে সাধারন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে দুই বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

সেজন্য কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং ছবি সহ ভোটার তালিকা তৈরি।

ভোটের সংকট: দায় কার? নির্বাচন কমিশন, নাকি দলের?

ফিরে দেখা: যেভাবে হয়েছিল ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচন

একই সাথে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় তথাকথিত দুর্নীতি-বিরোধী অভিযান শুরু করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন। এর মূল লক্ষ্য ছিল রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ উঠেছিল আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনীতির বাইরে রাখার জন্য সর্বাত্নক চেষ্টা করেছে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

কিন্তু সেটি সফল হয়নি।

এ সময় দ্রব্যমূল্যের চরম উর্ধ্বগতি এবং রাজনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ থাকায় দেশের মানুষের বড় একটি অংশ চরম হতাশায় নিমজ্জিত হয়। এমন প্রেক্ষোপটে ২০০৭ সালের জুন মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে সেনাসদস্যদের প্রহার করার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তীব্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গন্ডি পেরিয়ে সহিংস এই আন্দোলন ছড়িয়ে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

সেই আন্দোলনের পর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনুধাবন করে যে অনির্দিষ্টকালের জন্য নির্বাচন আটকে রাখা যাবে না।

তখন একজন নির্বাচন কমিশানার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তার লেখা 'নির্বাচন কমিশনে পাঁচ বছর' বইতে মি. হোসেন উল্লেখ করেন, এ ঘটনা নিয়ে শুধু সেনাবাহিনীই নয়, অত্যন্ত নাজুক পরিস্থিতিতে পড়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

সংলাপ ও নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্ক

ছাত্র বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে ২০০৭ সালের অগাস্ট মাসের শেষের দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা ঘোষণা করেন, সেপ্টেম্বর মাস থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ শুরু হবে।

সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুরু করে দফায়-দফায় এই সংলাপ চলেছে ২০০৮ সালেও। নির্বাচনী আইন সংস্কার নিয়ে আলাপ-আলোচনার জন্য এই সংলাপ আহবান করেছিল নির্বাচন কমিশন।

অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করেন, ছাত্র বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে তখনকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেখাতে চেয়েছিল যে নির্বাচন আয়োজনের দিকে তারা এগিয়ে যাচ্ছে। সেজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে নির্বাচন কমিশন সংলাপ শুরু করেছে।

রাজনৈতিক দলের সাথে যখন সংলাপ শুরু হয়, তখন বিএনপিকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে তীব্র বিতর্কের মুখে পড়ে নির্বাচন কমিশন।

খালেদা জিয়া গ্রেফতার হবার আগে বিএনপির মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া এবং যুগ্ম মহাসচিব আশরাফ হোসেনকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। মান্নান ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি দল ভাঙার চেষ্টা করছেন এবং সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাথে হাত মিলিয়েছেন।

মান্নান ভুঁইয়াকে বহিষ্কার করে খন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে মহাসচিব নিয়োগ করেন খালেদা জিয়া।

কিন্তু নির্বাচন কমিশন সবাইকে অবাক করে দিয়ে সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানায় সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে। মান্নান ভুঁইয়ার বহিষ্কারাদেশ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী হয়নি বলে অভিযোগ তোলেন মেজর হাফিজসহ বিএনপির আরো কিছু নেতা, যারা সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

দলের স্থায়ী কমিটির একটি অংশ খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্ত অমান্য করে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে মহাসচিব নিযুক্ত করে।

এমন অবস্থায় বিএনপির মূলধারা হিসেবে পরিচিত মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে সংলাপের জন্য আমন্ত্রন না জানিয়ে সংস্কারপন্থী হিসেবে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে আমন্ত্রন জানানোর বিষয়টি বিএনপির ভেতরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন যে উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের প্ররোচনায় নির্বাচন কমিশন মূলধারার বিএনপিকে বাদ দিয়ে সংস্কারপন্থীদের স্বীকৃতি দিতে চাইছে।

নির্বাচন কমিশনার হিসেবে মেয়াদ শেষ হবার পরে ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাোয়াত হোসেন তার বইতে স্বীকার করেছেন যে নির্বাচন কমিশন তখন ভুল করেছিল।

" সে ভুলের মাশুল আমাদেরকে দিতে হয়েছে। আমার এখনো মনে হয় আমাদের (নির্বাচন কমিশন) বিরুদ্ধে বিএনপি‌-এর একমাত্র ক্ষোভের কারণ আমাদের ওই অতি উ‍ৎসাহী সিদ্ধান্ত," লিখেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন।

অবশ্য পরবর্তীতে খন্দকার দোলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপির মূলধারার সাথেই চূড়ান্ত সংলাপ করেছিল নির্বাচন কমিশন।

সংকটের আশংকা ও খালেদা জিয়ার রাজি হওয়া

বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা সেটি নিয়ে ২০০৮ সালের গোড়া থেকেই সন্দেহ শুরু হয়। নির্বাচনে অংশ নেবার বিষয়ে খালেদা জিয়ার কিছু আপত্তি ছিল। তিনি চেয়েছিলেন তার দুই ছেলে তারেক রহমান এবং আরাফাত রহমানের মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। কিন্তু সেনা গোয়েন্দারা শর্ত দেন যে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে খালেদা জিয়ার শর্ত মেনে নেয়া হবে।

এই নিয়ে খালেদা জিয়ার সাথে সেনা কর্মকর্তাদের তীব্র দরকষাকষি চলে দীর্ঘ সময়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়।

তবে খালেদা জিয়ার সাথে সরকারের কী ধরণের সমঝোতা হয়েছিল, সে সম্পর্কে বিস্তারিত বিএনপির নেতারাও জানেন না বলে মনে হচ্ছে।

'বাংলাদেশ: ইমার্জেন্সি অ্যান্ড দ্যা আফটারম্যাথ (২০০৭-২০০৮)' শিরোনামের বইতে মওদুদ আহমদ অনুমান করেছেন যে ছেলেদের মুক্তি এবং বিদেশ পাঠানোর বিনিময়ে খালেদা জিয়া হয়তো নির্বাচনে অংশগ্রহণের শর্ত মেনে নিয়েছিলেন।

সমঝোতা করে যে পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন তারেক রহমান

জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধ পরিচয় হঠাৎ লক্ষ্যবস্তু কেন

১/১১'র সময় বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে ভূমিকা রেখেছিলেন প্রণব মুখার্জি

২০০৮ সালের নভেম্বর মাসের শেষের দিকে বিএনপি নিশ্চিত করে যে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে। নির্বাচনে অংশ নেবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। এর আগে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে বিএনপির সাথে নির্বাচন কমিশনের মতপার্থক্য তৈরি হয়েছিল।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স তখন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, খালেদা জিয়ার দাবির প্রেক্ষিতে নির্বাচন ১১ দিন পিছিয়ে ২৯শে ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়।

রয়টার্স জানিয়েছিল, নির্বাচনে তারিখ প্রথমে নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৮ই ডিসেম্বর। আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা সে তারিখে নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি ছিলেন।

বিএনপির তরফ থেকে একটি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছিল যে খালেদা জিয়া কারগার থেকে ছাড়া পেয়েছেন সেপ্টেম্বর মাসে। অন্যদিকে শেখ হাসিনা প্যারোলে কারাগার থেকে বের হয়েছিলেন জুন মাসে।

সেজন্য নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে খালেদা জিয়ার সময় প্রয়োজন বলে বিএনপির তরফ থেকে বলা হয়েছিল।

নির্বাচন পিছিয়ে ২৯শে ডিসেম্বর নির্ধারন করার বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে তীব্র আপত্তি তোলা হলেও শেষ পর্যন্ত তারা সেটি মেনে নিয়েছিল।

নির্বাচনী প্রচারনা ও শেখ হাসিনার আত্মবিশ্বাস

নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রার্থী বাছাই, জোটের শরীকদের সাথে আসন ভাগাভাগি, নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন -এসব কিছুর ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে বেশ গোছানো মনে হয়েছে বিএনপির তুলনায়।

তখন বিভিন্ন নির্বাচনী প্রচারনায় শেখ হাসিনা তুলে ধরেন ভবিষ্যতে তিনি বাংলাদেশকে কীভাবে দেখতে চান। আওয়ামী লীগের "ডিজিটাল বাংলাদেশ‍" শ্লোগান তরুন ভোটারদের আকৃষ্ট করে। এছাড়া দুর্নীতি দমন এবং বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ।

কিন্তু বিএনপির কাছে সেরকম কর্যকরী কোন প্রতিশ্রুতি ছিল না, যেটি তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে পারে।

২০০৮ সালের ১০ই নভেম্বর ঢাকায় নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি গোপন এক তারবার্তায় লিখেছেন, ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে শেখ হাসিনাকে বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে, দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হবার জন্য তিনি প্রস্তুতি শুরু করেছেন।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত আরো লিখেছেন, বিদেশ থেকে ফিরে আসার পরে দলের উপর নিয়ন্ত্রণ নিতে তার খুব একটা সময় লাগেনি।

ডিজিএফআই'র ভূমিকা

২০০৭ সালে সেনাবাহিনীর সমর্থনে ড. ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নেবার পরে বাংলাদেশের রাজনীতি প্রকৃতপক্ষে নিয়ন্ত্রন করে সেনা গোয়েন্দা সংস্থা বা ডিজিএফআই। সেনাবাহিনী তাদের সুবিধামতো নির্বাচন আয়োজন করতে চেয়েছিল। তখন রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন অভিযোগ উঠেছিল।

শুরু থেকেই ডিজএফআই চেয়েছিল, শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়াকে রাজনীতির বাইরে রাখতে। যেটি 'মাইনাস টু' ফর্মুলা হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছিল। কিন্তু তাদের সে পরিকল্পনা সফল হয়নি।

২০০৮ সালের ৩রা জুলাই ঢাকায় নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি ওয়াশিংটনে যে গোপন তারবার্তা পাঠিয়েছেন সেখানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ডিজিএফআই'র ভূমিকা সম্পর্কে বলা হয়েছে।

মি. মরিয়ার্টির তারবার্তায় বলা হয়েছিল, ডিজিএফআই দেশের রাজনীতিতে এখনো বেশ ভালোভাবেই জড়িত আছে। রাজনীতিবিদদের হুমকি দেয়া এবং বড় দলগুলোর মধ্যে ভাঙন আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

"ডিজিএফআই যেভাবে ক্রমাগত হস্তক্ষেপ করে যাচ্ছে, তাতে গণতন্ত্রে ফেরার ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রচেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং আসন্ন নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতাও প্রশ্নের মুখে পড়বে," তারবার্তায় লিখেছেন মি. মরিয়ার্টি।

নির্বাচনের রোডম্যাপ

২০০৮ সালের ১৫ই জুলাই তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা নির্বাচেনের রোডম্যাপ ঘোঘনা করেন। সেখানে বলা হয়, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ডিসেম্বর মাসে। রোডম্যাপের অন্য বিষয়গুলো ছিল নিম্নরূপ

  • জুলাই মাস - খসড়া ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রকাশ। এরপর ছয় থেকে আট সপ্তাহ সময় থাকবে সংশোধনের জন্য।
  • সেপ্টেম্বর মাস - নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা।
  • অক্টোবর মাস - চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ

নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ প্রকাশের পর আওয়ামী লীগ নেত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য কমিশন অনেক বেশি সময় নিচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপির তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব আশরাফ হোসেন এই রোডম্যাপকে স্বাগত জানিয়েছেন।

নির্বাচনের ফলাফল

নির্বাচনের দিন বিপুল উৎসাহ এবং উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মানুষ ভোট কেন্দ্রে হাজির হয়েছিল। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের সামনে ছিল ভোটারদের দীর্ঘ সারি। যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছিল, সেজন্য ভোটকেন্দ্রগুলোতে কোন রাজনৈতিক প্রভাব চোখে পড়েনি।

নির্বাচন কমিশনের হিসেব অনুযায়ী ২০০৮ সালের সাধারন নির্বাচনে ৮৬.২৯ শতাংশ ভোট পড়েছে।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ২৩০টি আসন। অন্যদিকে বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ৩০টি আসন। শুধু তাই নয়, প্রাপ্ত ভোটের হারের ক্ষেত্রে ছিল বিশাল ফারাক। আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৪৮.১৩ শতাংশ ভোট এবং বিএনপি পেয়েছিল ৩২.৪৯ শতাংশ ভোট।

সে নির্বাচনে দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি ভরাডুবি হয়েছিল জামায়াতে ইসলামীর। চারদলীয় জোটের শরীক হিসেবে ৩৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মাত্র দুটি আসনে জয়লাভ করেছিল দলটি। এছাড়া ভোট পেয়েছিল ৪.৬০ শতাংশ।

২৯ শে ডিসেম্বর রাতেই মোটোমুটি পরিষ্কার হয়ে যায় যে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়লাভ করতে যাচ্ছে। তবে জয়ের বিশাল ব্যবধান সবাইকে চমকে দিয়েছিল।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন তার বইতে লিখেছেন, "আমরা এমন রেজাল্ট আশা করিনি। আমাদের প্রাথমিক ধারণা ছিল যে মহাজোটের সাথে চারদলীয় জোটের তফাৎটা হয়তো ৪০ থেকে ৫০টি আসনের হতে পারে।"

নির্বাচন পরবর্তী প্রতিক্রিয়া

নির্বাচনের ফলাফল কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনি বিএনপি। দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলা হয়।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগে তখন উল্লাস আর উচ্ছ্বাস। নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ আত্নবিশ্বাসী ছিল ঠিকই, কিন্তু জয়ের ব্যবধান এতো বেশি হবে সেটি অনেকে ভাবতে পারেননি।

নির্বাচনে জয়লাভের পরদিন প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনে আয়োজন করে বিজয়ী দল আওয়ামী লীগ। সে সংবাদ সম্মেলনে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার আসার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ভিড় সংবাদ সম্মেলনের কক্ষ উপচে পড়ে। বাধ্য হয়ে সে সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করে আওয়ামী লীগ।

এর পরদিন ঢাকা চীন মৈত্রি সম্মেলন কেন্দ্রে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র) আরো বড় জায়গায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা দেশের মানুষ এবং তাদের নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ জানান।

তবে ২০০৮ সালের ফলাফল বিএনপিকে চমকে দিয়েছিল। মাত্র ৩০টি আসনে বিজয় কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছিল না দলটি।

বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তখন ফলাফল মেনে নেবার জন্য বিএনপির প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছিল। একই সাথে নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের প্রতিও নানা আহ্বান জানানো হয়।

ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার লিখেছিল, "গণতন্ত্রের প্রতি চূড়ান্ত প্রতিশ্রুতি এবং বিশ্বস্ততা নির্ভর করছে জনগণের রায়কে পরাজিত পক্ষের মেনে নেবার উপর।"

বাংলা দৈনিক যায় যায় দিনের ভাষ্য ছিল, "মানুষ গণতান্ত্রিক উপায়ে পরিবর্তন চায়, অন্য কোনভাবে নয়।"

আরেকটি ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ লিখেছিল, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে নির্বাচনে যারা ব্যাপক জয় পেয়েছে, তারা সরকার গঠনের পর অগণতান্ত্রিক আচরণ করেছে এবং ভিন্নমত দমন করেছে।

পত্রিকাটি লিখেছিল, " আমরা শুধু আশা করি, আওয়ামী লীগ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেবে।"

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত হবার সাথে সাথেই ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং টেলিফোন করেন আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনাকে।

শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে মি. সিং বলেন, তার সরকারের সাথে কাজ করার জন্য দিল্লী তাকিয়ে আছে।

২০০৮ সালের নির্বাচনের পর ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে সংসদীয় ব্যবস্থা পুনরায় চালুর পর থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচনটি ছিল সবচেয়ে বেশি অবাধ ও সুষ্ঠু।

এই নির্বাচনকে বড় সফলতা হিসেবে উল্লেখ করে ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, " বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো দেখিয়েছে যে কোন ধরণের সংঘাত ও সহিংসতা ছাড়াই একটি সরকারের কাছে থেকে অন্য আরেকটি সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া তদারকি করা সম্ভব।"

২০০৮ সালের সে নির্বাচনকে বেশ দ্রুততার সাথে স্বীকৃতি দিয়েছিল আমেরিকা। ভোট গ্রহণ শেষ হবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচনের সাথে সম্পৃক্ত সরকারি কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানিয়েছিল একটি সফল নির্বাচন আয়োজনের জন্য।

স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিবৃতিতে বলা হয়, নির্বাচনের বিপুল সংখ্যক মানুষ ভোট দিতে আসা প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের মানুষের গনতন্ত্র পুনরায় প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খা রয়েছে।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী আমেরিকান সংস্থা ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইন্সটিটিউট (এনডিআই) তাদের এক বিবৃতিতে ২০০৮ সালের নির্বাচনকে 'বিশ্বাসযোগ্য এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন' বলে বর্ণনা করেছিল।

এনডিআই'র বিবৃতিতে বলা হয়, "নির্বাচন বেশ ভালোভাবে পরিচালনা করা হয়েছে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে।"

আরও পড়ুন:

'বাংলাদেশে এক-এগারো আরও শক্তিশালী করেছে হাসিনা ও খালেদাকে'

যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল

English summary
2008 Parliamentary Elections in Bangladesh: What Happened Behind the Scenes
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X