‘স্বাধীনতা চাই, এই নাও’, ২৩ বছরের তরুণকে মারধর পুলিশের, ভাইরাল ভিডিও
হিংসার আগুনে যখন জ্বলছে দিল্লি, ঠিক সেই সময় উত্তর–পূর্ব দিল্লির হিংসার মধ্যে ২৩ বছরের ফৈজান ও অন্য চারজনের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। যে ভিডিওতে তাদের মারধর করছে খোদ পুলিশ।
‘স্বাধীনতা চাও, এই নাও’, মারধর পুলিশের
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, চার থেকে পাঁচজন ব্যক্তি, যারা পুলিশের পোশাক পরে রয়েছে, তারা বেশ কিছু তরুণদের মাটিতে ফেলে লাথি মারছে এবং তাঁদেরকে বিদ্রুপ করে বলছে, ‘তোমরা স্বাধীনতা চাও? এই নাও স্বাধীনতা।' নিষ্ঠুর এই ব্যক্তিদের মধ্যে একজনকে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে দেখা যায় এবং অন্যরা ক্ষমা করে দেওয়ার আবেদন করে। ভিডিওতে যে প্রাণহীন তরুণকে শুয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে সেই হল ফৈজান। এই ভিডিও তোলার দু'দিন পরই মারা যান ওই তরুণ।
হঠাৎই অশান্তির মধ্যে পড়ে যায় ফৈজান
শুক্রবার ফৈজানের পরিবার তাদের রাগ কি করে প্রকাশ করবে বুঝে উঠতে পারছিল না। এরকম নৃশংসভাবে তাদের বাড়ির ছেলেকে খুন করা হয়েছে, অথচ পুলিশ উদাসীন। ফৈজানের বড় ভাই নইম কাজ করেন মাংসের দোকানে। ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি দুপুরবেলা কাজ থেকে ফিরে আসেন। ফৈজান সিএএ-বিরোধী প্রতিবাদ চলছে এমন জায়গায় গিয়েছিল কিন্তু সেটা শান্তিপূর্ণ জায়গা ছিল বলে জানান তাঁর দাদা। নইম বলেন, ‘আচমকাই কাঁদুনে-গ্যাসের শেল ছোঁড়া শুরু হয় চারদিকে। ফৈজান সহ অন্য ছেলেরা ওই ঝামেলা থেকে বাঁচতে অন্যদিকে সরে যায়, সেখানেই তারা পুলিশের হাতে পড়ে। পুলিশ তাদের বেধড়ক মারতে শুরু করে দেয়, কোনও ধরনের দয়ামায়া ছাড়াই, ভিডিও করে এবং তাদের রাস্তাতেই মরার জন্য ফেলে রেখে চলে যায়।' নইম জানান, ফৈজান সহ নিগৃহীত তরুণদের জিটিবি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
ফৈজানের ক্ষত–বিক্ষত দেহ দেওয়া হয় পরিবারকে
নইম বলেন, ‘সেখানে তাঁদের নামমাত্র চিকিৎসা হয়। এরপর আহত অবস্থাতেই তাদের জ্যোতি নগর পুলিশ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তারা দু'দিন থাকে।' নইম আরও বলেন, ‘আমার ভাই তো লক-আপের মধ্যেই মারা যায়, কিন্তু পুলিশ কর্মীরা আমাদের তাকে দেখতেও দেয়নি। তারা আমাদের হেনস্থা করে এবং থানা থেকে তাড়িয়ে দেয়।' ২৫ ফেব্রুয়ারি ফৈজানের বাড়ির লোকের কাছে পুলিশের পক্ষ থেকে ফোন আসে, যেখানে ফৈজানকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়, দাবি করেন নইম। তিনি জানান যে পুলিশ জানত ফৈজান মারা যাবে কিন্তু তারা চাইছিল না যে তাঁর মৃত্যু লক-আপে হোক। ফৈজানের জামাইবাবু বাবলু বলেন, ‘আমরা ক্ষত-বিক্ষত একটা দেহ পেয়েছিলাম, মাথা থেকে রক্ত ঝড়ছে, চোয়াল ভাঙা। এটা ফৈজাল হতে পারে না। আমি দেখেছি আমার ভাইকে যন্ত্রণায় সারা রাত ছটফট করতে। ফৈজান বারবার বলছিল পুলিশ মেরেছে, ওরা মেরেছে আমায়।' বাবলু জানান, ফৈজানকে পরের দিন সকালে জিটিবি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়, যেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ফৈজালের পরিবারের দাবি, তাঁদের বাড়ির ছেলেকে লক-আপের মধ্যেও মারধর করা হয়েছে।
বিচার কবে পাবেন জানেন না ফৈজানের পরিবার
নইম বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে অনেক অবিচার হয়েছে, সব জায়গায় গাফিলতি হয়েছে। পুলিশদের মারার অধিকার কে দিয়েছে? তারা কি আমাদের সুরক্ষার জন্য নেই?' জিটিবি হাসপাতালে এখনও রয়েছে ফৈজানের নিথর দেহ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ময়নাতদন্তের পরই তাঁর দেহ ছাড়বে। তাঁদের ছেলেকে যারা খুন করল তাদের বিচার আদৌও হবে কিনা সে প্রশ্নের উত্তর জানা নেই ফৈজানের পরিবারের। শুধু তাঁরা চান এভাবে যেন কারোর প্রিয়জনকে মরতে না হয়।