ইন্টারনেট এক্সপ্রেসে চড়ে জম্মুর এই পার্বত্য শহরে এলেই মিলছে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ
ইন্টারনেট এক্সপ্রেসে চড়ে জম্মুর এই পার্বত্য শহরে এলেই মিলছে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ
কাশ্মীরে কিছু কিছু জায়গায় পোস্ট পেইড কানেকশন চালু হলেও ইন্টারনেট পরিষেবা এখনও সচল হয়নি। ফলে প্রবল সমস্যায় পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কেবল মাত্র কয়েকটি সরকারি দফতর, কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে চালু রয়েছে ইন্টারনেট। এই সংকটজনক পরিস্থিতির মধ্যেও সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ডাক্তারি পরীক্ষার প্রবেশিকার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন দক্ষিণ কাশ্মীরের কোকেরনাগের বাসিন্দা বছর আঠারোর সুমারাই ওয়ানি।
পরপর দু'দিন ধরে সুমাইরা শীতের কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যেও খুব সকালে বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন। তারপর তাঁর বাড়ি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। জেলা প্রশাসকের তথ্য প্রযুক্তি বিভাগে প্রত্যহ এরকম হাজার হাজার মানুষ এসে জড়ো হচ্ছেন যারা রাজ্যে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন শুধুমাত্র জরুরী প্রয়োজনে ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন বলে।
৫ই আগস্টের পর কাশ্মীরে বিপর্যস্ত ইন্টারনেট পরিষেবা
৫ই আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের মাধ্যমে কাশ্মীরের বিশেষ রাজ্যেরে অধিকার খর্ব করা হয়। লাদাখ ও জম্মু-কাশ্মীরকে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভেঙে ফেলা হয় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের তরফে। তারপর থেকেই উপত্যকায় চলেছে অচলাবস্থা। বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। একাধিক জায়গায় ভেঙে পড়েছে টেলিযোগ ব্যবস্থা। যদিও এদিকে ওয়ানির মতো মানুষদের সুবিধার্থে বর্তমানে প্রশাসন রাজ্যের বেশ কয়েকটি জায়গায় ‘ইন্টারনেট কিওসক' খুলেছে। যদিও ওই কিওসক গুলিও সর্বদা জনগণের ভিড় সামল দিয়ে উঠতে পারছে না।
এই প্রসঙ্গে বলতে ওয়ানি বলেন, জেলা প্রশাসকের দফতরে চারটি কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য এত ভিড় ছিল যে আমি ভালো ভাবে দাঁড়ানোর মতো জায়গাও আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। " এখানেই কেউ তাকে একটি বিশেষ ট্রেন ধরে বনিহাল যাওয়ার জন্য বলেন। ওই শহরে এখন ব্রডব্যান্ড পরিষেবা আগের থেকে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে বলে জানা গেছে।
পার্বত্য শহর বনিহালে চালু রয়েছে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা
রামবান জেলার বনিহাল জম্মু-শ্রীনগর মহাসড়কের জওহর সুড়ঙ্গের উল্টো দিকে একটি পার্বত্য শহর। এটি পীর পাঞ্জাল রেঞ্জের মধ্যেকার টানেল দিয়ে রাস্তা এবং রেল পথের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। এরপরের দিন অনন্তনাগ স্টেশন থেকে ট্রেনে চড়ে সকাল ৯টার সময় বনিহালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ওয়ানি। এরপরই অদ্ভুত ভাবে ওয়ানি দেখেন তার সহযাত্রীদের মধ্যে বেশিরভাগই ওই ট্রেনে চড়ে বনিহাল যাচ্ছেন ইন্টারনেট ব্যবহারের উদ্দেশ্য। পরে সেখানে গিয়েই তিনি তার নিট পরীক্ষার আবেদন পত্র জমা দেন।
প্রতি ঘন্টা ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ ৩৫০ টাকা
বনিহাল যেহেতু জম্মুর মধ্যে পড়ে, তাই বর্তমানে ইন্টারনেট নির্ভর ব্রডব্যান্ড পরিষেবাগুলি সেখানে কাজ করছে। প্রতিদিন কাশ্মীরের শত শত ইন্টারনেট-বঞ্চিত মানুষ সেই শহরে যান। যেখানে প্রায় ১২ টি দোকানে প্রতি ঘন্টা পিছু ৩৫০ টাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদান করা হয়।
এদিকে শ্রীনগর-জম্মু মহাসড়কই বনিহালের মাধ্যমে কাশ্মীর এবং ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের সংযোগ স্থাপন করেছে। কাশ্মীরের কাজীগুন্ড অঞ্চলের মধ্যে ভারতের দীর্ঘতম রেল টানেল নির্মিত হওয়ার ঠিক ছয় বছর আগে এই শহরে ট্রেন পরিষেবা চালু হয়েছিল।
এই বিশেষ ট্রেনে চড়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নিচ্ছেন কাশ্মীরের মানুষেরা
বনিহাল শহরের বিভিন্ন প্রান্তে এখন শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে অন্যান্য পেশার অগুনতি মানুষদের ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য সারিবদ্ধ ভাবে ওই দোকান গুলির সামনে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। সকাল ১০ টায় প্রথম ট্রেন আসার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায়। আবার বিকেল ৩টেয় শেষ শ্রীনগরের উদ্দেশ্যে শেষ ট্রেন রওনা দেওয়ার আগেই সকলে এসে জড়ো হন স্টেশন চত্বরে। স্থানীয়দের মুখে লোকমুখে এখন ওই বিশেষ ট্রেন গুলি ইন্টারনেট এক্সপ্রেস নামেই পরিচিত হয়ে উঠেছে।
প্রতীকী ছবি