দোষ ঢাকতেই হাথরাস নিয়ে ষড়যন্ত্রের তত্ব খাড়া? সুপ্রিমকোর্টের একাধিক প্রশ্নের মুখে যোগী সরকার
টানা ১৫ দিন লড়াইয়ের পর ২৯ সেপ্টেম্বর দিল্লির হাসপাতালে মৃত্যু হয় নির্যাতিতার। গণধর্ষণ ও অত্যাচারের পরও পুলিশ সহজেই অভিযোগ নিতে চায়নি বলে দাবি পরিবারের সদস্যদের। এদিকে রাতারাতি নির্যাতিতার মৃতদেহ পুলিশ জোর করে পুড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ। তাঁর পরিবারের সদস্যদের সেই সময় বাড়িতে আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ। আর এবিষয়ে এবার সুপ্রিমকোর্টের প্রশ্নের সম্মুখীন হল যোগী আদিত্যনাথের সরকার। এছাড়া যুবতীর পরিবার ও মামলায় সাক্ষীদের নিরাপত্তার বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা উত্তরপ্রদেশ পুলিশের কাছে জানতে চাইল সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবারের মধ্যে এই সংক্রান্ত জবাব চেয়েছে শীর্ষ আদালত।
শীর্ষ আদালত উত্তরপ্রদেশ সরকারকে প্রশ্ন করে
এদিন এই বিষয়ে শীর্ষ আদালত উত্তরপ্রদেশ সরকারকে প্রশ্ন করলে সরকারি উকিলের তরফে দাবি জানানো হয় যে মৃতদেহ নিয়ে অশান্তি করার ছক কষা হচ্ছিল। গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতেই তড়িঘড়ি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল এবং শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। এই ঘটনাকে অভাবনীয় এবং শকিং বলে আখ্যা দেয় শীর্ষ আদালত। এরপর আদালতের তরফে সাক্ষীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংক্রান্ত রিপোর্ট চাওয়া হয়।
যা ঘটেছে তা ভয়াবহ
এরপর উত্তরপ্রদেশ সরকারের তরফে শীর্ষ আদালতকে জানানো হয় যে তারা ইতিমধ্যেই এই ঘটনার তদন্তের জন্য সিবিআইকে নিযুক্ত করার সুপারিশ করেছে কেন্দ্রেরর কাছে। উত্তরপ্রদেশ সরকারের আরও দাবি যে এই ঘটনাকে ঘিরে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যদিও এরপর প্রধান বিচারপতি এসএ বোবদে বলেন, বারবার একই বিষয়ে বিতর্ক অর্থহীন। যা ঘটেছে তা ভয়াবহ এবং নক্কারজনক।
হাথরাসের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৯টি মামলা রুজু
হাথরাসের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৯টি মামলা রুজু করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। এর মধ্যে রয়েছে দেশদ্রোহ, আন্তর্জাতিক স্তরে ষড়যন্ত্র ও ধর্মীয় হিংসায় প্ররোচনা দেওয়ার মতো গুরুতর মামলাও। প্রসঙ্গত, গতকালই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ দাবি করেছিলেন, রাজ্যের উন্নয়নে যাদের সমস্যা হচ্ছে, তারাই হাথরাসের ঘটনাকে ঘিরে রাজ্যের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে। যোগীর এই মন্তব্যের চব্বিশ ঘণ্টা যেতে না যেতেই ১৯ টি মামলা রুজু করল পুলিশ।
ষড়যন্ত্র ও মানহানির মামলা
যে মামলাগুলি রুজু করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে দেশদ্রোহিতা, ষড়যন্ত্র, জাতিগত ও ধর্মীয় বিদ্বেষে প্ররোচনা দেওয়া, ইলেকট্রনিক প্রমাণগুলির উপর কাটাছেঁড়া করা, রাজ্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও মানহানির মামলা। পুলিশের ফের একবার অতিসক্রিয়তা দেখাচ্ছে। হাথরাসের ঘটনাকে ঘিরে অন্য কোনও চক্রান্ত রয়েছে বলে মনে করছে সে-রাজ্যের প্রশাসন।
তদন্তে গাফলতির অভিযোগ
প্রসঙ্গত, হাথরাসের ঘটনায় ঠিকমতো তদন্ত না হওয়ার অভিযোগ উঠেছে যোগী সরকার ও পুলিশের বিরুদ্ধে। পুলিশের অবশ্য দাবি, ফরেনসিক রিপোর্টে হাথরসের যুবতির শরীরে ধর্ষণের কোনও প্রমাণ মেলেনি। আগ্রার ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে ওই যুবতির নমুনা পরীক্ষা করা হয়৷ ফরেনসিক দল জানায়, ধর্ষণ হয়নি তাঁর৷ যদিও ঘটনার ১১ দিন পর নমুনা পরীক্ষা কতটা সঠিক, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
কী কারণে মামলা?
সমাজকর্মী সত্যমা দুবে মামলার তদন্তভার সিবিআই বা বিশেষ তদন্তকারী দলের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য আদালতে পিটিশন জমা দিয়েছিলেন। ঘটনার তদন্তে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের যে গাফিলতির ছবি সামনে এসেছে, তা তুলে ধরে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে পিটিশনে। প্রসঙ্গত, যুবতীর মৃত্যুর পর তাঁর দেহ হাসপাতাল থেকে সোজা নিয়ে যাওয়া হয়েছিল অন্তিমক্রিয়ার জন্য। পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি দেহ। গভীর রাতে প্রায় আড়াইটা নাগাদ দেহ সৎকার করে দেয় পুলিশ।
যদি হাইকোর্টে কোনও ভুল হয়, তবে আমরা আছি
শীর্ষ আদালত জানতে চায়, পিটিশন কেন এলাহাবাদ হাইকোর্টে জমা করা হয়নি। তার উত্তরে আইনজীবী কৃতি সিং জানান, মামলাটি এলাহাবাদ হাইকোর্টে জমা পড়ে আছে এবং তাঁরা মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে স্থানান্তরিত করতে চান। এর উত্তরে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে বলেন, মামলাটির এলাহাবাদ হাইকোর্টে শুনানি চলছে। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ কী তা আমরা দেখতে পারি। যদি হাইকোর্টে কোনও ভুল হয়, তবে আমরা আছি। পাশাপাশি, ঘটনার স্বচ্ছ তদন্তেরও আশ্বাস দেন তিনি।
গঙ্গাপারে একা দাঁড়িয়ে চিরাগ, বিহারে কোন সমীকরণে হাত মেলাল বিজেপি-জেডিইউ?