ফিরে দেখা ২০২০: এ বছর মানুষ ট্রেনবিহীন জীবন কীভাবে কাটালো দেখে নিন এক ঝলকে
২০২০ সাল। এই বছর দেখেছে অনেক চড়াই–উৎরাই, এই বছরেই মানুষ দীর্ঘকাল গৃহবন্দী হয়ে থাকতে শিখেছে, মানুষ মহামারির মতো বিষয়ের সম্মুখীন হয়েছে, করোনা ভাইরাস রোগের কবলে পড়েছে আর এ বছরই মানুষ ট্রেনহীন জীবন কাটিয়েছেন। ভারতের পরিবহনের অন্যতন প্রাণকেন্দ্র হল ট্রেন। এ বছর ২৫ মার্চের পর থেকে গোটা ভারতীয় রেলের ট্রেন পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

রেলের ইতিহাসে প্রথমবার বন্ধ হয় ট্রেন
২৪ মার্চ করোনা ভাইরাসের কারণে দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। গত ১৬৭ বছরে এই প্রথমবার ভারতীয় রেলের ইতিহাসে সব পরিষেবা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। দেশজুড়ে আটকে পড়া বহু মানুষ যাঁরা ট্রেন পরিষেবার ওপরই নির্ভর করে ছিলেন এবং হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক আটকে পড়েছিলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বাধ্য হয়েই তাঁরা নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য হাঁটাকেই বেছে নিয়েছিলেন। দেশজুড়ে শুধুমাত্র জরুরি পরিষেবার জন্য কিছু বিশেষ ট্রেন চলছিল, এছাড়া গরমের ছুটিতে কাটা বহু যাত্রীর ট্রেনের টিকিট বাতিল করে দেওয়া হয়। রেলের ইতিহাসে যা কখনই শোনা যায়নি।

শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন
১ মে ফের ট্রেন চলতে শুরু করে। তবে তা শুধুমাত্র পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে। ১ মে থেকে ৩০ অগাস্ট ৪ হাজারটি বিশেষ শ্রমিক ট্রেনের মাধ্যমে ৬৩.১৫ হাজার শ্রমিককে ২৩টি রাজ্যে পৌঁছে দেওয়া হয়। পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে এটা শুধু স্বস্তিই নয়, বরং অন্যরাও আশা দেখেছে যাঁরা ভেবেছিলেন শ্রমিকদের জীবনযাত্রা হ্রাস পেয়েছে। যদিও রেলের এই শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন পরিযায়ীদের থেকে টাকা নেওয়ার কারণে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়েছিল। যদিও রেলের পক্ষ থেকে এটা বলা হয়েছে যে শ্রমিকদের কাছে একটা পয়সাও নেওয়া হয়নি বরং ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে রেলের, তাও এই রাজনীতি অব্যাহত ছিল। নয়ডায় সুরক্ষা কর্মী হিসাবে কর্মরত জিতেন্দ্র কুমার বলেন, ‘আমার কাছে ট্রেন কী? ট্রেনের অর্থআশা, খুশি এবং রুটিনের ধারণা। গত ২৫ বছর ধরে আমি একই রুট বাড়ি থেকে বিহারে যেতাম, কিন্তু এ বছর লকডাউনের কারণে আটকে পড়ি, বহু মাস পর ফের ট্রেনই আমায় পরিবারের কাছে পৌঁছে দিল। ট্রেনের তাই অর্থ হল আমায় পরিবারের সঙ্গে একত্রিত করালো।

ট্রেন পরিষেবা চ্যালেঞ্জের মুখে
সম্প্রতি রেল ১,০৮৯টি বিশেষ ট্রেন পরিষেবা দিচ্ছে, কলকাতা মেট্রো তাদের পরিষেবার ৬০ শতাংশ পরিষেবা দিচ্ছে, মুম্বই শহরতলীতে ৮৮ শতাংশ ট্রেন এবং চেন্নাই শহরতলীতে ৫০ শতাংশ ট্রেন পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সিইও ভিকে যাদব স্বীকার করে জানিয়েছেন যে জাতীয় পরিবহনের জন্য এটা কঠিন বছর, তবে কীভাবে সঙ্কটের সময় ট্রেন সুযোগ হিসাবে এসেছে এবং কীভাবে উদ্ভাবন করেছে সে বিষয়টিও হাইলাইট করেছে। যাদব বলেন, ‘এই বছর ভারতীয় রেলের কঠিন ও বিজয়ের বছর ছিল। উদ্বেগজনক এবং অভূতপূর্ব কোভিড-১৯ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, ভারতীয় রেলপথ কেবলমাত্র প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জাতীয় সরবরাহ শৃঙ্খলা চালিয়ে যেতে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসতেই সক্ষম হয়নি, তবে তার কর্মী বাহিনীর সম্ভাবনাও উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।

জরুরি পরিষেবা চালু
যাত্রী পরিষেবা বন্ধ থাকার কারণে গত বছরের তুলনায় এ বছর ৮৭ শতাংশ লোকসান হওয়া সত্ত্বেও রেল তাদের পরিষেবায় অভূতপূর্ব বদল আনে। পার্সেল পরিষেবা, দুধ, ওষুধ ও ভেন্টিলেটরের মতো জরুরি পরিষবা ট্রেনের মাধ্যমে আসে। এই দারুণ পরিকল্পনা এতে বুঝতে শিখিয়েছিল যে যদি রেল যাত্রী পরিষেবা দিতে না পারে তবে তা মাল অবাধে নিয়ে যেতে সক্ষম। বিজনেস ডেভলপমেন্ট ইউনিট (বিডিইউ) গড়ে তোলা হয়েছে রেলওয়ে বোর্ড,জোনাল রেলওয়ে ও ডিভিশনাল স্তরে। বিডিইউর একাধিক-শাখা-প্রশাখা দলগুলি নতুন ব্যবসায় আকর্ষণ করার জন্য গ্রাহকদের কাছে পৌঁছেছে। এছাড়াও টাইম টেবিল পার্সেল পরিষেবা থেকে শুরু করে বিশ্বাসযোগ্য পরিষেবা, ক্যুরিয়র সার্ভিস এবং ই-কমার্স সংস্থাও চালু করেছে।
রেল আরও আটটি কিষান রেল পরিষেবা চালু করেছে যাতে কৃষকরা তাদের পণ্যগুলি বর্ধিত গতি এবং হ্রাস ব্যয়ের সঙ্গে দেশ জুড়ে পাঠাতে সক্ষম হয়।

গতি বাড়ানো হয় মালবাহী ট্রেনের
একদিকে যখন যাত্রীবাহী ট্রেন পুরোপুরি বন্ধ ছিল, সেই সময় মালবাহী ট্রেনের গতি দ্বিগুণ করে দেওয়া হয়। ২৪ কিমি থেকে বাড়িয়ে তা ৪৬ কিমি প্রতি ঘণ্টায় করে দেয় রেল। এর অর্থ অর্ধেক সময়ের মধ্যেই পণ্য পৌঁছে যাবে। এই লকডাউন ও ট্রেন বন্ধের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ৩৫০টিরও বেশি সঙ্কটজনক ও দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ ও লাইন মেরামতির কাজ সেরে নেওয়া হয়।

৩০ হাজার রেল কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়
এ বছর যেমন রেলে তেমন বড় কোনও দুর্ঘটনা যেমন ঘটেনি, তেমনি রেল পরিবারের ৩০ হাজার কর্মী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন এবং ৭০০ সামনের সারির কর্মীর মৃত্যু হয়। দেশে ছুটির সময় যাত্রী পরিষেবা দিতে না পারলেও লক্ষাধিক পরিযায়ী শ্রমিককে তাঁদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করিয়েছে, যদিও এটি অত্যাধুনিক ট্রেন ১৮ তৈরি করতে পারেনি কিন্তু ৫০০০ কোভিড কেয়ার কোচ তৈরি করেছে। রেল কর্মীদের ব্যবহারের জন্য রেলের উৎপাদন ইউনিট মাস্ক, স্যানিটাইজার তৈরি করে সরকারের কাজ সহজ করেছে।

চালু ট্রেন পরিষেবা
বর্তমানে দেশে রেল পরিষেবা অনেকটাই চালু হয়ে গিয়েছে। দুরপাল্লার ট্রেনের পাশাপাশি লোকাল ট্রেনও চালু করে দিয়েছে সরকার। তবে কোভিড বিধি কড়াভাবে মানা হচ্ছে দেশের প্রত্যেকটি স্টেশন ও ট্রেনগুলিতে।
ফিরে দেখা ২০২০: মদ্যপান থেকে লিভ ইন নিয়ে ইউএই সরকারের ঐতিহাসিক পদক্ষেপ
