দেশের সেরা ১০ মহিলা পুলিশ অফিসার, যাঁরা কোনও বিপদেই ভয় পান না
ভয়মুক্ত ১০ কন্যা। সারা ভারতে এই মুহুর্তে কম করে ১০ মহিলা আইপিএস দাপিয়ে বেরাচ্ছেন। শুরু হয়েছিল কিরণ বেদীকে দিয়ে। তারপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেকে যোগ দিয়েছেন ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসে।
ভয়মুক্ত ১০ কন্যা। সারা ভারতে এই মুহুর্তে কম করে ১০ মহিলা আইপিএস দাপিয়ে বেরাচ্ছেন। শুরু হয়েছিল কিরণ বেদীকে দিয়ে। তারপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেকে যোগ দিয়েছেন ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসে।
প্রতিবছর বহু প্রত্যাশী সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসেন। সংখ্যায় কম হলেও, কাজের নিরিখে কিন্তু এইসব মহিলা অফিসারদের নাম একেবারে সামনের সারিতে।
সংযুক্তা পরাশর
বরো জঙ্গিদের কাছে ত্রাসের নাম ছিল সংযুক্তা পরাশর। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় তাঁর স্থান ছিল ৮৫ তম। অসমের শনিতপুর জেলার পুলিশ সুপার থাকাকালীন বরো জঙ্গিদের দমনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। বহু হুমকি উপেক্ষা করে ১৫ মাস সময়ের মধ্যে ৬৪ জনকে গ্রেফতারের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র উদ্ধার করেছিলেন তিনি। তাঁর সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য কাজ হল, ভোপাল-উজ্জয়িনী ট্রেন বিস্ফোরণের তদন্ত।
অপরাজিতা রাই
সিকিমের প্রথম মহিলা আইপিএস হলেন অপরাজিতা রাই। বাবা ছিলেন ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার। কিন্তু ৮ বছর বয়সেই বাবাকে হারিয়েছিলেন অপরাজিতা। মার দেখভালেই বড় হন অপরাজিতা। দুদুবার ইউপিএসসির সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয়বারে আইপিএস-এ সুযোগ মেলে। তিনি হলেন সিকিমের প্রথম গোর্খা মহিলা আইপিএস। ট্রেনিং-এর সবকটা ধাপেই তিনি সব ধরনের পুরস্কার পেয়েছিলেন।
মেরিন জোসেফ
কেরালা ক্যাডারের নবীনতম আইপিএস মেরিন জোসেফ। ২০১২-তে মাত্র ২৫ বছর বয়সে প্রথমবারেই ইউপিএসসির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি এবং আইপিএস-এ যোগ দেন। সম্প্রতি খবরের শিরোনামে এসেছিলেন তিনি। সুন্দরী মহিলা অফিসার হিসেবে একটি খবর প্রকাশ হতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ জানান তিনি।
সৌম্য সম্বাসিভান
সিমলার প্রথম মহিলা আইপিএস সৌম্য সম্বাসিভান বিখ্য়াত হয়েছিলেন খনি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে। ২০১০-এর এই আইপিএস হিমাচল প্রদেশের সিরমাউরের দায়িত্বে থাকার সময় ছ-ছটি খুনের কিনারা করেছিলেন। সেইসব অভিযুক্ত সবাই এখন গরাদের পিছনে। প্রেসিডেন্টের পদকেও ভূষিত করা হয়েছিল তাঁকে। সরকারি কাজের বাইরে, মহিলাদের আত্মরক্ষা নিয়েও কাজ করেন তিনি।
সনিয়া নারাং
এক বিধায়কের গালে চড় কষাতে দ্বিধা করেননি সনিয়া নারাং নামের এই আইপিএস। বাবাও ছিলেন আইপিএস। বাবার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন তিনি। বেড়ে ওঠা চণ্ডীগড়ে। হাইস্কুলে পড়ার সময় থেকেই তিনি আইপিএস হওয়াকেই নিশানা করে এগিয়েছিলেন। ২০০৬ সালে কর্নাটকে বিজেপি ও কংগ্রেসে ঝামেলা নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ করেন। কিন্তু বিজেপি এমএলএ রেণুকার্য ঘটনাস্থল ছেড়ে যেতে চাননি। এরপর বিধায়কের গালে চড় কষিয়ে কিছু সময়ের জন্য গরাদের ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ২০১৩ সালে মুখ্যমন্ত্রী সনিয়া নারাংকে খনি কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত করলে, তিনি জানিয়েদেন, যে সমস্ত এলাকায় খনি রয়েছে, সেইসব এলাকায় কোনও দিনই কাজ করেননি তিনি। এই মুহূর্তে ন্যাশনাল ইনভেসটিগেটিভ এজেন্সির পুলিশ সুপার পদে রয়েছেন তিনি।
ড. রুভেদা সালাম
কাশ্মীরের প্রথম মহিলা আইপিএস রুভেদা সালাম চিকিৎসকও বটে। শ্রীনগর থেকে এমবিবিএস করার পর, দু-দুবার সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। দ্বিতীয়বারে আইপিএসে সুযোগ পান রুভেদা। তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদে কাজ করেছেন তিনি। ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিসে যোগ দিয়ে এই মুহুর্তে তিনি জম্মুতে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অফ ইনকাম ট্য়াক্স পদে কর্মরত।
মীরা বোরওয়ানকার
১৫০ বছরের মুম্বই পুলিশের ইতিহাসে মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চের প্রধান হিসেবে মীরা বোরওয়ানকার কাজ করেন ২০০১ সালে। তাঁর সাফল্যের তালিকায় রয়েছে, আবু সালেমের প্রত্যার্পণ, জলগাঁও সেক্স স্ক্যান্ডাল, ইকবাল মিরচি প্রত্যার্পণ মামলা। ভাল কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৭ সালে প্রেসিডেন্টের পদকও পেয়েছেন তিনি।
সঙ্গীতা কালিয়া
মন্ত্রীদের ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে বিখ্য়াত হয়েছিলেন সঙ্গীতা কালিয়া। চিত্রকরের কন্যা হলেও, অভিনেতা কবিতা চৌধুরীর কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন তিনি। অর্থনীতি স্নাতকোত্তরের পর অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। তিনবার ইউপিএসসি পরীক্ষা দিয়ে তৃতীয়বারে আইপিএস-এ যোগদান। ২০১০ সালে হরিয়ানা পুলিশে যোগ দেন সঙ্গীতা কালিয়া। ২০১৫-তে ফিতেহাবাদের পুলিশ সুপার থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে হরিয়ানার তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনিল ভিজের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। বৈঠক চলাকালীন মন্ত্রী তাঁকে বৈঠক ছাড়া নির্দেশ দিলেও, সঙ্গীতা তা করেননি। এরজন্য সঙ্গীতাকে অন্যত্র বদলি করে দেওয়া হয়।
সুভাষিণী শঙ্করণ
গতবছরের জুলাই-এ সুভাষিণী শঙ্করণ প্রথম মহিলা আইপিএস হিসেবে কোনও মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্ব পান। ২০১৪-তে অসমের জঙ্গি সংগঠন এনডিএফবির বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। কাজিরাঙ্গায় রাইনো-পোচিং গ্যাঙের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন তিনি।
ডি রূপা
বেঙ্গালুরুর জেলে শশীকলার সুবিধার বিষয়টিকে সামনে আনেন এই আইপিএস। পুরস্কারের বদলে ডিআইজি পদমর্যাদার এই অফিসারকে সরিয়ে দেওয়া হয় রোড সেফটি ও ট্রাফিক পদে। রাজ্যের তৎকালীন ডিজিপি সত্যনারায়ণ রাওয়ের বিরুদ্ধে শশীকলার কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন। দেবাঙ্গিরির এভিকে কলেজ থেকে স্নাতক পর্যায়ে উত্তীর্ণ হন ডি রূপা। ইপিএসসির সিভিল সার্ভিসে প্রথমবারের চেষ্টাতেই ৪৩ তম স্থান পান। উল্লেখযোগ্য কাজের জন্য ২০১৬ সালে রাষ্ট্রপতির পদক পেয়েছিলেন রূপা।