ওয়ার্ক ফ্রম হোম থেকে সংসার–সন্তান, করোনা আবহে একা হাতেই সামলাচ্ছেন মহিলারা
ওয়ার্ক ফ্রম হোম থেকে সংসার–সন্তান, করোনা আবহে একা হাতেই সামলাচ্ছেন মহিলারা
করোনা ভাইরাস মহামারির জেরে দেশজুড়ে লকডাউনের গেরোয় পড়ে ওয়ার্ক ফ্রম হোম এখন কর্মীদের টিকে থাকার আসল অস্ত্র। তবে পুরুষ কর্মীদের তুলনায় মহিলা কর্মীদের কাছে এই ওয়ার্ক ফ্রম হোম প্রথম থেকেই চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে গৃহকন্নার কাজ সামলানো ও অন্যদিকে অফিসের কাজ, এই দুটো কাজই আজকের যুগের নারীরা অত্যন্ত নিপুণভাবে সামলে চলেছেন।
লকডাউনের প্রভাব পড়ছে মহিলাদের ওপর
কোভিড-১৯ সঙ্কট যেখানে বিশ্বের জীবন যাত্রাকে অচল করে দিয়েছে তার প্রভাব পড়েছে শহুরে উচ্চ-মধ্যবিত্ত স্তরের মহিলাদের ওপর। পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি ঘরকন্নার কাজও এই সময়ও বেড়েছে মহিলাদের কাছে। ভারতে মহিলা কর্মীদের অবদান এমনিতেই অনেক কম, শ্রমিক ক্ষমতা পরিসংখ্যান ২০১৮ অনুযায়ী দেশের মাত্র ২০.৪ শতাংশ মহিলা বাইরে কাজ করতে যান। এছাড়াও লিঙ্গ ভূমিকাতে পূর্ব বিদ্যমান বৈষম্য, নেটওয়ার্কের হঠাৎ অনুপস্থিতি যা কর্মশক্তিগুলিতে তাদের অংশগ্রহণকে কঠিন করে দেয়, চাকরি হারানোর ভয়, বেতন হ্রাস এবং পর্যাপ্ত কাজ না করার অপরাধবোধের জন্য মহিলাদের অবদান অনেকাংশেই এখন কম হয়ে গিয়েছে। যদিও তারা ভারতীয় শ্রমশক্তিতে সংখ্যালঘু, তবুও শহুরে ভারতীয় শ্রমজীবী মহিলার অনেক সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও মহামারিটির প্রভাবগুলি উল্লেখযোগ্য ছিল।
মুম্বইয়ের অমৃতা মাহালের কাহিনী
২২ মার্চ যখন প্রথম লকডাউন ঘোষণা করা হয়, অমৃতা মাহালে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। একরাতের মধ্যে তাঁর চিকিৎসক ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়, ওষুধ পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে এবং তাঁর প্রশংসিত প্রথম উপন্যাসের কেন্দ্রবিন্দুতে মুম্বইয়ের আলোড়িত শহর, উপন্যাসের নাম মিল্ক টিথ (২০১৮), তাঁর উপন্যাসে উঠে আসে এক অচেনা জায়গার গল্প, যেটি মহামারির কারণে ভুতুড়ে জায়গায় পরিণত হয়েছে। তিনি যখন সপ্তাহান্তে তাঁর লেখা নিয়ে বসতেন, তখন এটাই ছিল তাঁর কাজ, যেখানে সমাজর ভালো কিছুর জন্য তিনি তাঁর বেশিরভাগ সময় কাটাতেন। অমৃতার স্বামী একজন ইডুকেশন স্টার্টআপ চালান তিনিও এখন অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন। ৩৫ বছরের অমৃতা বান্দ্রার ফ্ল্যাটে বসে বলেন, ‘আমি খুব ভালো মাল্টিটাস্কিং নই এবং আমার পক্ষে ঘন ঘন সব কিছু পরিচালনা করা এই সময় একটু কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই আমার প্রয়োজন ছিল কাজ ও লেখার মধ্যে সঠিক পদ্ধতিতে বিচ্ছেদ তৈরি করা। এর ওপর আবার শহরে বাড়তে থাকা কোভিড-১৯ আমার মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। তার ওপর আমি অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম। এই পরিস্থিতিতে নতুন জীবনকে আনা খুব ঝুঁকির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। গর্ভবতী মহিলাদের সংক্রমণের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি থাকে অতএব আমি বাড়ি থেকে বেড়োনো বন্ধ করলাম। যেটা আমার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছিল।' প্রসঙ্গত একমাস আগেই অমৃতার একটি ছেলে জন্মেছে। তিনি জানান খুবই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ছিল কারণ তাঁর অভিভাবককেও হাসপাতালে তাঁকে দেখতে আসার অনুমতি ছিল না।
বাণিজ্য নগরীতে কাজ ও সন্তানকে একা সামলাচ্ছেন মধুজা
একবছর আগে আট বছরের সন্তানকে নিয়ে মুম্বইয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন কলকাতার মধুজা বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি দীর্ঘদিন বাংলার একটি শীর্ষ বিনোদন চ্যানেলের ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন। এখন তিনি সর্বভারতীয় একটি চ্যানেলে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে আপনাকে আপনার পা থেকে চিন্তা করতে হয়। কিন্তু এই পদক্ষেপের জন্য, আমাকে আগে থেকে সবকিছু পরিকল্পনা করে রাখতে হয়। মুম্বইয়ে এসে আমাকে প্রথমেই নিশ্চিত হতে হয়েছিল আমার অফিস-বাড়ি, ছেলের স্কুল, ডেকেয়ার এবং স্কুলের পর ক্রিয়াকলাপ সেন্টারের দুরত্ব যেন আমায় কোনওভাবেই চাপে না ফেলে। আমি যাতে সহজেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যেতে পারি। আমার মা ও আমার স্বামী (পরিচালক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়) কলকাতা থেকে এখানে ঘন ঘন আসেন। এই মহামারিটি তাই আমার কাছে কোনও ব্যাপার নয়।'
নিজেদের কাছে নিজেদের চ্যালেঞ্জ
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা এরকম অসংখ্য মহিলাই রয়েছেন যাঁরা এই মহামারির সময়ও নিজের কাজ ও ঘর-সংসার সামলে চলেছেন। তাঁরা হয়ত কেউ কোনও মাল্টি ন্যাশানাল সংস্থায় উচ্চপদস্থ কর্মী অথবা স্কুলের শিক্ষিকা বা লেখিকা। এই লকডাউন মহিলাদের কাজ যেন দ্বিগুণ বাড়িয়ে চলেছে। বিশেষ করে লকডাউনের সময় যখন পরিবারের সকলেই বাড়িতে এবং বাড়ির পরিচারিকারাও ছুটিতে রয়েছেন। এই সময় একা হাতে সবকিছু সামলে অফিসকে একশো শতাংশ দিয়ে নিজেদের কাছে নিজেরাই যেন চ্যালেঞ্জ জয় করছেন। মুম্বই হোক বা শহর কলকাতা সর্বত্রই মহিলাদের এই একই চিত্র দেখা দিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ মদতে অশান্ত! শান্তিনিকেতন নিয়ে বিস্ফোরক অধীর