পণের খাঁই মেটাতে কিডনি দিয়েও মেলেনি রেহাই, আত্মঘাতী বধূ
ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ জেলার ঘটনা। ২০০৬ সালে পুনমের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল সুদামা গিরির। বিয়েতে এক লক্ষ তিরিশ হাজার টাকা নগদ দিতে হয়েছিল মেয়ের বাড়িকে। সঙ্গে আসবাবপত্র, টিভি, মোটর সাইকেল। মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হন পুনমের বাবা-মা। জমি-জিরেত যা ছিল, বিক্রি করে দিতে হয়। প্রথম কয়েক মাস সব ঠিক ছিল। কিন্তু বিয়েতে পাওয়া নগদ টাকা ফুরিয়ে যেতেই বেরিয়ে পড়ে দাঁতনখ। প্রথমে খোঁটা দেওয়া, তার পর গালাগালি, শেষে নিত্যদিন প্রহার। এমনকী খাওয়া জুটত না। পুনমদেবী শ্বশুর-শাশুড়ি-স্বামীকে বোঝান, আর পণের টাকা আনা সম্ভব নয়। তাতে কাজ হয়নি। দু'টি সন্তান হওয়ার পর অত্যাচারের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।
গত বছরের অক্টোবরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে স্বামী সুদামা গিরি। ডাক্তারি পরীক্ষায় জানা যায়, তার দু'টো কিডনি খারাপ হয়ে গিয়েছে। ডাক্তাররা কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন। কিন্তু তাতে তো বিস্তর খরচ! ফলে পুনমের ওপর নির্যাতনের মাত্রা প্রচণ্ড বেড়ে যায়। বলা হয়, চিকিৎসার খরচ বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে। কিন্তু তিনি রাজি হননি। শেষে একটা রফা হয়। পুনম নিজের একটি কিডনি স্বামীকে দিয়ে দেন। শ্বশুরবাড়ির লোকজন কথা দেয়, আর নির্যাতন চালাবে না।
কোথায় কী! কিছুদিন যেতে না যেতে ফের শুরু হয় অত্যাচার। শাশুড়ি বলে, পণের টাকা আনতে না পারলে যেন দেহব্যবসা করে টাকা মেটায় বউমা! এতটা অপমান তিনি সহ্য করতে পারেননি। গত ১৬ এপ্রিল রান্নাঘরেই গায়ে আগুন দেন ২৮ বছরের ওই বধূ। ৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়ে যায় শরীর। এক সপ্তাহ ধরে অসহ্য বেদনায় ছটফট করতে করতে গতকাল মারা যান তিনি।
পুনমের বাবা বরহন ভারতী ইতিমধ্যে এফআইআর করেছেন মেয়ের শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে। আপাতত তারা সবাই পালিয়েছে পুলিশের ভয়ে। হাজারিবাগের পুলিশ সুপার মনোজ কৌশিক জানান, অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। আইন মাফিক উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।