
মাঝআকাশেই সন্তান প্রসব মহিলার, অনন্য অভিজ্ঞতার কথা শোনাতে গিয়ে আবেগতাড়িত বিমানচালক
আন্তর্জাতিক বিমান হোক বা দূরপাল্লার ট্রেন, যাত্রাপথেই আকছার ঘটে আপদকালীন প্রসবের মত ঘটনা। বুধবার সন্ধ্যতেও দিল্লি-বেঙ্গালুরুগামী ইন্ডিগো বিমান সাক্ষী থাকল এমনই এক ঘটনার। সৌভাগ্যবশত প্রসূতি মহিলার সহযাত্রী ছিলেন দুই অভিজ্ঞ চিকিৎসক। প্রায় দু'ঘন্টার চেষ্টায় কিভাবে বিমান কর্মচারী ও চিকিৎসকদের মিলিত প্রচেষ্টায় প্রসবকার্য সম্পন্ন হল, তা একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রূপে বিশদে জানিয়েছেন ওই ইন্ডিগো বিমানের বিমানচালক।

হায়দরাবাদে জরুরি ভিত্তিতে অবতরণের সিদ্ধান্ত
এদিকে সংবাদমাধ্যমে মহিলার পরিচয় নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হয়নি ইন্ডিগো, যদিও ইন্ডিগোর ৬ই ১২২-এর বিমানচালক এ বিষয়ে বিশদে জানিয়েছেন বলে খবর। বিমান আধিকারিকদের মতে, ৫২ বছর বয়সী ক্যাপ্টেন সঞ্জয় মিশ্র ভারতীয় বায়ুসেনার একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রূপে লোমহর্ষক অভিজ্ঞতার কথা জানান। ক্যাপ্টেনের কথায়, হায়দ্রাবাদে জরুরি অবতরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারপরেই চিকিৎসকরা আশ্বাস দেন মা ও সন্তান যথেষ্ট ভালো অবস্থায় রয়েছে, ফলে ভরসা পেয়ে অবতরণের সিদ্ধান্ত নাকচ করা হয় বলে জানান ক্যাপ্টেন সঞ্জয়।

কর্মচারীদের দূরদর্শিতায় প্রাণে বাঁচে সদ্যোজাত
ক্যাপ্টেন এ বিষয়ে সরাসরি কিছু জানাতে রাজি না হলেও তাঁর সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট মারফত ঘটনাটি বিশদে জানতে পেরেছেন নেটিজেনরা। গ্রাউন্ড স্টাফরা জানান, বিকেল ৪.৪২ নাগাদ দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট থেকে বেঙ্গালুরুর উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয় ইন্ডিগো ৬ই ১২২। ক্যাপ্টেন লিখেছেন, "৫.২০ নাগাদ বিমানের কর্মচারী প্রধান ১সি সারির এক মহিলার বিষয়ে জানান। তিনি সন্তানসম্ভবা ছিলেন এবং তিনি নাকি সকাল থেকেই কিছু খেতে পারেননি। এরপরেই ওনার পেটে ব্যথা শুরু হয়। বাধ্য হয়ে ক্রু-মেম্বারদের চিকিৎসককের খোঁজ করতে বলা হয়।" জানা গেছে, সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন ডঃ শৈলাজা ভান্নাভানেনি ও ডঃ নাগারাজ।

জরুরি ভিত্তিতে শৌচাগারের পাশেই তৈর প্রসূতিকক্ষ
ক্যাপ্টেন সঞ্জয়ের পোস্ট মারফত জানা যাচ্ছে, ডঃ শৈলাজা বিমানের শৌচাগারের পাশের একচিলতে স্থানকেই প্রসূতিকক্ষে রূপান্তরিত করে ফেলেন। ককপিটের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ রেখেছিলেন চিকিৎসকরা এবং বিমান যখন ভূপালের উপর, তখনই ওই গর্ভবতী মহিলার রক্তপাত শুরু হয় বলে খবর। ফলে যাত্রীদের মধ্যে মহিলার গর্ভপাতের মত বিষয় নিয়ে উত্তেজিত আলোচনা শুরু হয়ে যায় বলে খবর বিমান কর্মচারী সূত্রে। যাত্রীদের আশঙ্কিত হতে নিষেধ করেন ক্রু-মেম্বাররা, এমনটাই জানাচ্ছেন বিমানচালক।

মাঝআকাশে সদ্যোজাতের কান্নার আওয়াজে বিহ্বল সহযাত্রীরা
ক্যাপ্টেন সঞ্জয় মিশ্র লিখছেন, "ক্রমাগত চিন্তা, দুর্ভাবনা ও ভেসে আসা গুজবের মাঝে আমাকে বিমান পরিচালনা করতে হচ্ছিল। ওই গর্ভবতী মহিলা ও তাঁর সন্তানের কথা ভেবে চরম মনখারাপ হয়েছিল আমাদের প্রত্যেক কর্মচারীর। হঠাৎ কর্মচারী, চিকিৎসক ও যাত্রীদের একযোগে চিৎকার ও হর্ষধ্বনিতে চমকে উঠি আমি!" ক্যাপ্টেন জানিয়েছেন, "সব আওয়াজ ছাপিয়ে শুনতে পাই এক সদ্যোজাতের কান্না। ভাষায় এই অনুভূতির প্রকাশ কঠিন।" হোয়াটসঅ্যাপে ক্যাপ্টেনের বয়ান অনুযায়ী, সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় হায়দ্রাবাদে বিমান অবতরণের কথা জানালে চিকিৎসকরা জানান যে মা ও নবজাতকের একেবারে সুস্থ রয়েছে। ফলে অবশেষে ৭.৩৮ নাগাদ বেঙ্গালুরুর কেম্পেগৌড়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সুস্থভাবে অবতরণ করেন নবজাতক ও মা।
Recommended Video

ট্রেন ছাড়ার পাঁচ মিনিট আগেও পাওয়া যাবে টিকিট, জেনে নিন রেলের আরও কিছু নতুন নিয়ম