‘রোগীরা কি অক্সিজেনের জন্য অপেক্ষা করবে?’ কেন্দ্রকে ভর্ৎসনা দিল্লি হাইকোর্টের
‘রোগীরা কি অক্সিজেনের জন্য অপেক্ষা করবে?’ কেন্দ্রকে ভর্ৎসনা দিল্লি হাইকোর্টের
করোনা মোকাবিলায় যদি সঠিক জায়গায় ওষুধ ও অক্সিজেন বা চিকিৎসার অন্যান্য সরঞ্জাম পাঠানো না যায়, তবে তা মানুষ খুনের সমান। দিল্লি সরকারের অভিযোগের ভিত্তিতে এমনই মন্তব্য করল হাইকোর্ট। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সরকার অভিযোগ করেছিল, কোভিড মোকাবিলায় অক্সিজেন ও টিকা পাঠানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য করা হচ্ছে।
শিল্পে অক্সিজেন পাঠানো বন্ধ হোক
সোমবারই দিল্লিতে একদিনে ৩২ হাজার জন আক্রান্ত হয়েছেন। এরপরই দিল্লি সরকার হাইকোর্টের কাছে অভিযোগ জানায় যে অক্সিজেন, ওষুধ, টিকার ডোজ ও বেডের ঘাটতি রাজধানীতে ক্রমেই জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। কেন্দ্রকে হাইকোর্ট জানিয়েছে পেট্রোলিয়াম ও স্ট্রিল শিল্পে অক্সিজেন পাঠানোয় কাটছাঁট করা হোক, যাতে কোভিড রোগীদের পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পাঠানো যায়। হাইকোর্ট বলে, 'অর্থনৈতিক স্বার্থ মানুষের জীবনকে অগ্রাহ্য করতে পারে না, আমরা বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছি।' কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে হাইকোর্ট বলে, '১৩০ কোটির মধ্যে ২ কোটির কম করোনা কেস রয়েছে। যদি এটার পাঁচগুণ হয়, তার অর্থ ১০ কোটি মানুষ ভবিষ্যতে আক্রান্ত হবে। আমাদের বাকি জনসংখ্যাকে বাঁচাতে হবে। আমাদের দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে।' হাইকোর্ট আরও বলে, 'আমরা এখানে সরকার চালানোর জন্য বসে নেই কিন্তু পরিস্থিতি দেখে স্পর্শকাতর হতে হবে।'
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিল্লি সরকারের
সোমবার দিল্লি সরকার জানিয়েছে, তারা যথেষ্ট সংখ্যক অক্সিজেন সিলিন্ডার পাচ্ছে না। তার কারণ নাকি বেশিরভাগ অক্সিজেন সিলিন্ডার একটি বড় রাজ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দিল্লি সরকার সেই রাজ্যের নাম না নিলেও এটা যে রাজনীতির অংশ সেটা উল্লেখ করে। দিল্লি হাইকোর্ট এদিন কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রশ্ন করে, কোনও কারখানায় কি অক্সিজেন পাঠানো হচ্ছে? বিচারপতি বিপিন সাঙ্ঘী ও রেখা পাল্লিকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চ মন্তব্য করে, 'কারখানায় পরেও অক্সিজেন পাঠানো যেতে পারে। কিন্তু রোগীদের অপেক্ষা করানো যায় না। তাহলে অনেকের প্রাণ বিপন্ন হবে।'
অক্সিজেনের অভাব দিল্লিতে
বিচারপতিরা জানিয়েছেন যে তাঁরা শুনেছেন গঙ্গা রাম হাসপাতালে চিকিৎসকরা কোভিড রোগীদের অক্সিজেন হ্রাস করতে বাধ্য হচ্ছেন কারণ পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন নেই হাসপাতালে। কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, ২২ এপ্রিল থেকে শিল্পের প্রয়োজনে অক্সিজেন নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। বিচারপতিদের প্রশ্ন, 'আজ থেকেই নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না কেন? মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। আপনারা কি রোগীদের বলবেন ২২ এপ্রিল অবধি অক্সিজেনের জন্য অপেক্ষা করুন।' কেন্দ্র যদিও হাইকোর্টকে জানিয়েছে যে মাত্র ৩ তাংশ রোগীর আইসিইউ বেডের প্রয়োজন রয়েছে এবং আইসিইউ রোগীদের জন্য ২৪ লিটার অক্সিজেন প্রয়োজন এবং ১০ লিটার অক্সিজেন সাধারণ রোগীদের জন্য। দিল্লি সরকারকে কটাক্ষ করে কেন্দ্র বলে, 'যদি দিল্লি সরকার অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে না পারে তবে তারা স্বাস্থ্য বিভাগ তুলে দিক কেন্দ্রের হাতে। আমরা ব্যবস্থা করে নেব।'
কেন্দ্রের সমালোচনায় হাইকোর্ট
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানায়, ৮০ শতাংশ করোনা রোগীরই সামান্য উপসর্গ রয়েছে। ১৭ শতাংশের উপসর্গ রয়েছে মাঝারি। কেন্দ্রের কথায়, দিল্লি সরকার ৭০০ মেট্রিক টন অক্সিজেন চেয়েছিল। দেওয়া হয়েছে ৩৮০ মেট্রিক টন। এরপরই হাইকোর্ট জানায়, 'সঠিক পরিকল্পনার অভাবেই এটা হচ্ছে।' এমনকি টিকাকরণের ক্ষেত্রেও যে পরিকল্পনার অভাব দেখা যাচ্ছে। তাও উল্লেখ করেন বিচারপতিরা। সঠিকভাবে টিকাকরণ না হওয়ায় কেন্দ্রের সমালোচনা করে আদালত।
সবথেকে সস্তা ভ্যাকসিন তৈরি করেছে ভারত, করোনা-যুদ্ধে দেশের সাফল্য গাথা শোনালেন মোদী