শিন্ডে কংগ্রেসের পরবর্তী নেতা? একটি জাতীয় দল এখন আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগোচ্ছে?
কিন্তু ঠিক যখন বলা হচ্ছিল যে শিন্ডের রাজনৈতিক কেরিয়ার প্রায় শেষ, তখনও ফিনিক্স পাখির মতোই তাঁর উত্থান ঘটল।
গত ২৪ মে, হিন্দু পত্রিকাতে একটি খবর বেরিয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্ডে এবারের লোকসভা নির্বাচনে সোলাপুরে বিজেপির প্রতিপক্ষ জয় সিদ্ধেশ্বর শিবাচার্জ স্বামীর কাছে পরাজিত হওয়ার পরে ধরেই নেওয়া যায় যে তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারের এবারে মোটামুটি ইতি। সাতাত্তর বছর বয়সী শিন্ডে নিজেও বলেছিলেন যে এবারের নির্বাচনই তাঁর শেষ। সত্তরের দশকে একাধিকবার বিধায়ক এবং দু'বার সাংসদ নির্বাচিত হওয়া শিন্ডে ইউপিএ ২ সরকারে উচ্চ পদে থাকলেও ২০১৪-র নির্বাচনে তাঁর পরাজয় ঘটে। এবারেও তাঁর পুনরাবৃত্তি ঘটে। যদিও ধরা হয়েছিল যে এবারে তাঁর পুরোনো গড় সোলাপুর থেকে তিনি ফের জিতে আসতে পারবেন।
কিন্তু ঠিক যখন বলা হচ্ছিল যে শিন্ডের রাজনৈতিক কেরিয়ার প্রায় শেষ, তখনও ফিনিক্স পাখির মতোই তাঁর উত্থান ঘটল।
নানা সূত্রে জানা যাচ্ছে যে কংগ্রেসের অধ্যক্ষ রাহুল গান্ধী যখন এবারের বিশ্রী হারের পরে কংগ্রেসের নেতৃত্বের পদ থেকে ইস্তফা দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, তখন শিন্ডেকেই পরবর্তী কংগ্রেস অধ্যক্ষ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে কংগ্রেস, বা আরও গুছিয়ে বললে গান্ধী পরিবার। অর্থাৎ, প্রায় আশি ছুঁই-ছুঁই শিন্ডে প্রায় বনবাসে চলে যাওয়ার পরেও কামব্যাক করতে চলেছেন দলের সর্বোচ্চ পদে। যদিও বলা হচ্ছে যে আনুষ্ঠানিকভাবে শিন্ডের অভিষেকের ঘোষণা এখুনিই হচ্ছে না কারণ গণ পদত্যাগ নিয়ে ইতিমধ্যেই কংগ্রেস জর্জরিত। তবে রাহুল গান্ধী নিজে এই নতুন অধ্যক্ষ চয়নের ব্যাপারে না থাকলেও সোনিয়া এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বাধরার মতামত যে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
শিন্ডেকে নেতা করা হচ্ছে শুধুমাত্র মহারাষ্ট্রের কথা ভেবে?
শিন্ডের চয়ন নিয়ে নানা কথা শোনা যাচ্ছে। কোনও কোনও পর্যবেক্ষক বলছেন শিন্ডে যেহেতু মহারাষ্ট্রের বড় দলিত নেতা তাই তাঁকেই নেতা বাছা হয়েছে। অন্যান্যদের মতে, রাজ্যের আরেকটি বড় দল ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি বা এনসিপি-র নেতৃত্বের সঙ্গে শিন্ডের সম্পর্ক ভালো তাই তাঁদের সঙ্গে বন্ধন দৃঢ় করতে শিন্ডেই সবচেয়ে যোগ্য লোক। আর কংগ্রেস এই সমস্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে এই বছরের পরের দিকে মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের কথা ভেবে।
সাতাত্তর বছরের প্রায় ভুলে যাওয়া নেতা লড়বেন মোদীর বিরুদ্ধে?
এখানেই প্রশ্ন। কংগ্রেস যদি তাদের সর্বোচ্চ নেতার তালাশে থেকে থাকে, এমন একজন যিনি দলকে জাতীয় স্তরে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন, তবে একটি রাজ্যের উপরে যাবতীয় মনোনিবেশ করা কেন? একটি জাতীয় দলকে কি এমন পদক্ষেপ নেওয়া মানায়? নতুন অধ্যক্ষ আনার জন্যে আনার অর্থ কী যদি দৃষ্টিভঙ্গি এমনই সংকীর্ণ হয়? তাছাড়া, ৭৭ বছর বয়সী একজন আঞ্চলিক, বিস্মৃত মাঝারি মানের নেতাকে দলের মাথায় বসিয়ে কংগ্রেস নরেন্দ্র মোদীর মোকাবিলা করার কথা ভাবছে? মহারাষ্ট্র নিঃসন্দেহে ভারতীয় রাজনীতিতে এক বড় রাজ্য কিন্তু তাই বলে কী তাতেই সীমিত থাকতে পারে একটি জাতীয় দলের কর্মকাণ্ড? মহারাষ্ট্রের গণ্ডির বাইরে কতজন শিন্ডেকে চেনে? বিজেপি যেখানে বৃদ্ধতন্ত্রকে উৎখাত করার জন্যে নিজেদের পিতৃপুরুষ লালকৃষ্ণ আডবানীকেও সরিয়ে দিচ্ছে নির্দ্বিধায়, সেখানে কংগ্রেস ঠিক করল একজন ৭৭ বছরের নেতাকে?
আদৌ কী বাস্তবিক এই চিন্তাধারা?
কে দেবে এই যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর?