কংগ্রেসের 'বলির পাঁঠা' হচ্ছেন মনমোহন সিং?
চার রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবির পর তিনি হয়তো ভালো নেই। অন্তত মানসিকভাবে। নিঃসন্দেহে চাপ আরও বেড়েছে সোনিয়া গান্ধী এবং শরদ পাওয়ারের মন্তব্যে।
বিপর্যয়ের পর গতকাল সোনিয়া গান্ধী সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কে কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। 'যথা সময়ে' প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে। সোমবার শরদ পাওয়ার এক দফা এগিয়ে বলেছেন, মানুষ দুর্বল শাসক চান না। যিনি সরকারি নীতি নির্ধারণ এবং রূপায়ণে কঠোর পথ অবলম্বন করেন, মানুষ তাঁকেই চায়।
এবার মন্তব্যগুলির ময়নাতদন্ত করা যাক। কংগ্রেসের অন্দরে গুঞ্জন, মনমোহন সিংকে ফের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করে লোকসভা ভোটে লড়া হবে কি না, সেই সিদ্ধান্তের আগে সোনিয়া গান্ধী দেখে নিতে চাইছিলেন চার রাজ্যে ভোটের ফল। কারণ, মনমোহন সিংয়ের প্রশাসন পরিচালনায় নাকি খুশি নন সোনিয়া গান্ধী। আবার তাঁর মতো প্রবীণ মানুষকে উপযুক্ত কারণ ছাড়া সটান দরজা দেখিয়ে দেওয়া বড় দৃষ্টিকটূ। এখন যদি ওঁকে বলা হয়, আপনার 'অপশাসনে' মানুষ কতটা অখুশি, তা প্রমাণ হয়েছে সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে। আপনি তাই আসুন। তা হলে, মনমোহনকে তাড়ানোও গেল, আবার তার জন্য উপযুক্ত অজুহাতও দেওয়া গেল।
লক্ষণীয়, বিজেপি বহু আগে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে নরেন্দ্র মোদীর নাম ঘোষণা করে দিয়েছিল। কংগ্রেস গতকাল দুপুর অবধিও চুপচাপ ছিল। হঠাৎ বলা হল, 'যথা সময়ে' প্রার্থীর নাম ঘোষিত হবে। 'যথা সময়' কি মনমোহন সিং-কে 'বলির পাঁঠা' বানানোর পর?
এদিকে, শরদ পাওয়ার যা বলেছেন, তাও আকর্ষণীয়। নাম না করে নিশ্চিতভাবে মনমোহন সিংকে 'দুর্বল শাসক' বলেছেন। এতটাই দুর্বল যে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে দৃঢ় মনোভাব দেখাতে পারছেন না। কংগ্রেসের অন্দরে এবার হয়তো আলোচনা হবে, শরিকরা মনমোহনের নেতৃত্বে ক্ষুব্ধ। তাই আগামী লোকসভা নির্বাচনে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা যাবে না! তেমন হলে আরও সুবিধা। কারণ, পুরো দায়টা শরিকদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলা যাবে। আরও একটা বিষয় ভেবে দেখতে হবে। তা হল, শরদ পাওয়ার নিজে থেকে এ সব বলছেন, নাকি 'বিশেষ' কেউ তাঁকে বলার ব্যাপারে পরামর্শ দিচ্ছেন?
মনমোহন সিং কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী নন। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তিনি কোনও সিদ্ধান্ত নেন না। সর্বজনবিদিত হল, সোনিয়া গান্ধীর অঙ্গুলিহেলন ছাড়া এক পা-ও চলতে পারেন না আমাদের প্রধানমন্ত্রী। এই অবস্থায় যদি ব্যর্থতার সব দায় মনমোহন সিংয়ের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়, তা হলে কংগ্রেস সাময়িকভাবে ব্যর্থতার চিত্রকথা থেকে দৃষ্টি হয়তো ঘুরিয়ে দিতে পারবে, কিন্তু আয়নার সামনে দাঁড়াতে পারবে কি?