ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও কি শান্তি ফিরবে অসমের বোড়োল্যান্ডে?
ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও কি শান্তি ফিরবে অসমের বোড়োল্যান্ডে?
সোমবার স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক বোড়ো শান্তি চুক্তি। এরপরই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন, ১৯৮৬ সাল থেকে চলা অসমের অশান্তি ও বিচ্ছিনতাবাদ শেষ হবে। পাশাপাশি অসমের বিভক্ত হওয়ার আশঙ্কাও শেষ হল। তবে অমিত শাহের এই দাবি নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। তার মানে কী তবে বোড়োরা পৃথক বোড়োল্যান্ডের দাবি থেকে সরে এল বিচ্ছিনতাবাদীরা?
বোড়ো নেতাদের বক্তব্য
চুক্তি স্বাক্ষরের পর অমিত শাহর করা মন্তব্যের বিষয়ে বোড়ো নেতাদের জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁরা বলেন, 'স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বা হিমন্ত বিশ্ব শর্মা যা ইচ্ছে বলতে পারেন। কিন্তু আমরা আগে দেখব যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী কতটা প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হয়। যদি আজকের চুক্তি অনুযায়ী সব প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হলে শান্তি বজায় থাকবে।'
কোকরাঝাড়ের সাংসদের বক্তব্য
এদিকে বোড়ো অধ্যুষিত কোকরাঝাড় এলাকার সাংসদ নবকুমার এই চুক্তির বিষয়ে বলেন, 'আমি একজন সাংসদ এবং বোড়োল্যান্ড এলাকার লোকেরা আমাকে দুবার লোকসভায় ভোট দিয়ে জিতিয়েছে। তবে চুক্তি সংইয়ের সময় আমাকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। যদি চুক্তিটি বিটিসি অঞ্চলে বসবাসকারী নন-বোড়োদের সাথে বৈষম্যমূলক হয় তবে আমরা বিরোধিতা করব।'
প্রাক্তন আলফা নেতার বক্তব্য
প্রাক্তন আলফা নেতা তথা ২০১৪ সালে কোকরাঝাড় থেকে লেকসভা নির্বাচনে লড়া সারনিয়া বলেন, 'এটাই বিজেপি তথা গেরুয়া দল ও তাদের শরিক হাগ্রামা মহিলারির নেতৃত্বাধীন বোড়োল্যান্ড পিপলস ফ্রন্টকে আরও শক্তিশালী করে তোলার কৌশল। তবে এর জেরে অ-বোড়োদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হচ্ছে। এভাবেই বিজেপি তাদের শক্তি বিস্তার করছে। এটা বিজেপির কৌশলের একটি অংশ। তবে আমরা রাজনৈতিকভাবে লড়াই করব এবং তাদের উপযুক্ত উত্তর দেব।' এদিকে অল কোচ রাজবংশী স্টুডেন্টস ইউনিয়নের প্রাক্তন নেতা বিশ্বজিৎ রায় বলেন, 'বিটিসি-র অধীনে বসবাসকারীরা কোচ রাজবংশী সম্প্রদায়ের পৃথক রাজ্যের দাবি এতে নস্যাৎ হল।'
ঐতিহাসিক বোড়ো শান্তি চুক্তি
সোমবার ঐতিহাসিক বোড়ো শান্তি চুক্তি সই করল কেন্দ্র। সোমবার উত্তর-পূর্বের অন্যতম বিচ্ছিনতাবাদী সংগঠন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অফ বোড়োল্যান্ডের সঙ্গে এই চুক্তি স্বাক্ষর করে কেন্দ্র। পৃথক বোড়োল্যান্ড রাষ্ট্র দাবি জানিয়ে আন্দোলন করা অল বোড়ো স্টুডেন্টস ইউনিয়নও (এবিএসইউ) এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
নিষেধাজ্ঞা উঠে যায় বিদ্রোহী সংগঠনের উপর থেকে
গতবছরের ২৫ নভেম্বর অসমের বোড়ো জনগোষ্ঠীদের বিদ্রোহী সংগঠন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট অফ বড়োল্যান্ডের উপর আরও পাঁচ বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করার কথা ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। ১৯৯০ সালে প্রথমবার এই সংগঠনটির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এরপর থেকে প্রতি পাঁচ বছর অন্ত এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়েছে সরকার। আজকের এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর সংগঠনটির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল কেন্দ্র।
অমিত শাহর আশা
কেন্দ্র নিষিদ্ধ সংগঠনের দলগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্ববানন্দ সোনোয়াল উপস্থিত ছিলেন। চুক্তি স্বাক্ষরের পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আজ কেন্দ্র, অসম সরকার এবং বোড়ো প্রতিনিধিরা একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। এই চুক্তি অসম এবং বোড়ো জনগণের সোনালী ভবিষ্যত নিশ্চিত করবে।' এই চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে বোড়ো আদিবাসীদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য দেওয়া হবে। পৃথক বোড়োল্যান্ড রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটির সংগঠনের মূল দাবি থেকে সরে আসার কথা সংগঠনগুলি মেনে নেওয়ায় এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।